ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

ঘাটতি রয়েছে প্রবন্ধ সাহিত্যে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮
ঘাটতি রয়েছে প্রবন্ধ সাহিত্যে বইমেলায় বই দেখছেন পাঠকরা-ছবি-দেলোয়ার হোসেন বাদল

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: ‘রাজনীতি-অর্থনীতি-সমাজবিজ্ঞান বা ইতিহাস বিষয়ে আমাদের অনেক অধ্যাপক, গবেষক রয়েছেন। কিন্তু সাহিত্যে তারা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন যেমন তুলে ধরতে পারেননি, তেমনিভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রের তাত্ত্বিক দিকগুলো তুলে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন। সাহিত্যে তাত্ত্বিক গবেষণার এই দিকটি নিয়ে আমরা পশ্চিমবঙ্গ থেকে এখনও পিছিয়ে রয়েছি।’

প্রবন্ধ সাহিত্য নিয়ে এভাবেই বলছিলেন ভাষা সংগ্রামী ও প্রাবন্ধিক আহমদ রফিক। এবারে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রথম ১২ দিনে বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ সাহিত্যের বই প্রকাশ হয়েছে প্রায় ৯০টি।

যেখানে মোট প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতে, প্রবন্ধ সাহিত্যে বাংলা ভাষাকে উপেক্ষা করছেন প্রাবন্ধিকরা। আহমদ রফিকের মতো তিনিও মনে করেন, বাংলা প্রবন্ধে সমাজ সচেতনতার দিকটি পরিপূর্ণভাবে উঠে আসেনি।

তিনি বলেন, বাংলা সাহিত্যে গবেষণা, প্রবন্ধ ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। কিন্তু সে তুলনায় বাংলা সাহিত্যের গবেষণা খুবই কম। গবেষণা সাহিত্যের মানের কথা যদি বলি, তবে তা এখনও উন্নত হয়নি। গবেষকরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের গবেষণা-সাহিত্য পৌঁছে দিতে ইংরেজি ভাষায় প্রবন্ধ রচনা করছেন। ইংল্যাণ্ডের প্রাবন্ধিকরা কিন্তু নিজেদের ভাষাতেই লিখছেন। তাদের পাঠকরাও উপকৃত হচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রাবন্ধিকরা এখন বিশ্ব বাজারের কথা মাথায় রেখে ইংরেজি ভাষায় লিখছেন। প্রকৃত অর্থে পাঠক কতটা উপকৃত হচ্ছেন, এটা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।  

তবে প্রবন্ধ-গবেষণায় তরুণদের সম্পৃক্তিতে দারুণ আনন্দিত প্রবীণ দুই গবেষক-প্রাবন্ধিক। তারা মনে করেন, তরুণ প্রাবন্ধিকরা সমাজ, সংস্কৃতি বিষয়ে অধিকতর গবেষণায় বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষা বিষয়ে নতুন তথ্য উদ্ভাবন করবেন।  

এ ব্যাপারে অনুপম প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মিলন নাথ বলেন, মেলায় প্রবন্ধের পাঠকশ্রেণি একেবারে আলাদা। সংখ্যায় একেবারে কম হলেও এই পাঠকশ্রেণি মেলায় এসে গবেষণামূলক প্রবন্ধের খোঁজ করেন। তারা সেরা প্রবন্ধটি খুঁজে বের করে নেন। তাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে আমরাও প্রথিতযশা পাঠকদের প্রবন্ধ এবার মেলায় নিয়ে এসেছি।

রাজনীতি, ইতিহাস, সভ্যতার গবেষণামূলক প্রবন্ধ মধ্যবয়সী পাঠকেরই বেশি পছন্দের বলে জানান নালন্দার প্রকাশক রেদোয়ান জুয়েল। গবেষক, প্রাবন্ধিকদের নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপনের দিকেও নজর রয়েছে প্রকাশকদের।

মেলায় আসা প্রবন্ধের বইগুলোর মধ্যে এবারে উল্লেখযোগ্য হলো সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর প্রবন্ধ সংকলন ‘পা রাখি কোথায়’ প্রকাশিত হয়েছে অন্বেষা প্রকাশনী থেকে। যতীন সরকারের অপ্রকাশিত প্রবন্ধগুলো নিয়ে সংকলিত হয়েছে যতীন সরকার রচনাসমগ্র-৬। অনুপম প্রকাশনী থেকে আসা এই প্রবন্ধটির দাম ৮০০ টাকা। কথাসাহিত্যিক ও বিজ্ঞান লেখক সুব্রত বড়ুয়ার বাংলা ভাষাচর্চাও গবেষণার নানা দিক ‘পরিভাষা অভিধান’ শীর্ষক গবেষণামূলক প্রবন্ধে উঠে এসেছে। বইটির মূল্য ৪শ’ টাকা।  

বাংলাদেশের অর্থনীতির জটিল সমীকরণের হিসাব মেলাতে গিয়ে অর্থনীতিবিদ সালেহউদ্দিন আহমেদ রচনা করেছেন তার প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘ক্রিটিক্যাল ইস্যুজ ইন ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিস’। আলোঘর প্রকাশনী থেকে আসা বইটির দাম ৮৫০ টাকা।

ভবেশ রায়ের গবেষণাগ্রন্থ ‘মমিপিডিয়া’ দেখিয়ে দিয়েছে শুধু প্রাচীন মিসর নয়, বিশ্ব জুড়েই ছড়িয়ে আছে মমি সংস্কৃতি। অনুপম প্রকাশনী থেকে আসা ‘মমিপিডিয়ার’ দাম রাখা হচ্ছে ৩৭০ টাকা। মামুন রশীদের ‘রূপান্তরের অর্থনীতি’ বইটিতে বাংলাদেশের রূপান্তরের দিকগুলো উন্মোচিত হয়েছে। বইটির দাম ২৫০ টাকা, প্রকাশ করেছে আলোঘর প্রকাশনী।  

দেশ-বিদেশের লেখকদের নিয়ে চমকপ্রদ নানা তথ্য চিত্রিত হয়েছে মোজাফ্ফর হোসেনের ‘বিশ্বসাহিত্যের কথা’ শীর্ষক সাহিত্য সমালোচনা গ্রন্থে। বইটি বইমেলায় এনেছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। এছাড়া মেলায় আসা প্রবন্ধ গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে সৈয়দ বদরুল আহসানের ‘হিস্ট্রি মেকারসিন আওয়ার টাইমস’ এনেছে শ্রাবণ প্রকাশনী, অ্যাডর্ন পাবলিকেশন্স থেকে এসেছে আবুল কাশেম ফজলুল হকের ‘সাহিত্য চিন্তা’, বাংলাপ্রকাশ এনেছে হাসান আজিজুল হকের ‘লেখকের উপনিবেশ’ প্রবন্ধগুলো।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮
এইচএমএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।