ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

ভয় কাটিয়ে যাত্রা শুরু বই উৎসবের

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪২ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২১
ভয় কাটিয়ে যাত্রা শুরু বই উৎসবের ছবি: জিএম মুজিবুর

বইমেলা থেকে: অবশেষে করোনার ভয় কাটিয়ে দুয়ার খুললো অমর একুশে বইমেলার। একটু দেরিতে হলেও মেলা হচ্ছে, সেটিই এখন বড় বিষয় অনেকের কাছে।

এবার বেড়েছে মেলার পরিসর। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভ কেন্দ্র করে বেড়েছে বইয়ের পসরাও। বিকেলের হিমেল হাওয়ার সঙ্গে তাল মেলাবে সন্ধ্যার রঙিন বাতি। বৃহৎ পরিসরে খোলামেলা পরিবেশে চলেফিরেও শান্তি পাবেন সাধারণ মানুষ।

বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) বিকেলে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘অমর একুশে বইমেলার’ উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পরই সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয় বইমেলার প্রবেশদ্বার।

মহামারির মধ্যে এবারের বইমেলায় নিরাপত্তার নজরদারির সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়িও থাকবে। তাছাড়া মেলার সময় পিছিয়ে চৈত্রে আসায় থাকবে ঝড়বৃষ্টির ঝুঁকি। প্রবেশপথে হাত ধোয়া ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মাস্ক ছাড়া কাউকে মেলায় ঢুকতে দেওয়া হবে না বলেও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

করোনা থাকলেও অন্য যে কোনো বারের তুলনায় এবার মেলার প্রথম দিন লোক সমাগমটা একটু বেশি থাকলেও এখনও পুরোপুরি গুছিয়ে ওঠেনি মেলা। অধিকাংশ স্টলে এখনও হাতুড়ি-বাটালের ঠক ঠক শব্দ শোনা যাচ্ছে। চলছে রং করা ও ছাউনি দেওয়ার কাজ। গুছিয়ে উঠতে পারেনি বড় বড় প্যাভেলিয়নগুলোও।

এ বিয়ষে পুঁথিনিলয় প্রকাশনীর ম্যানেজার আলমগীর অরণ্য জানান, বইমেলা হবে কি হবে না সে বিষয়ে একটা দ্বিধা ছিল প্রথম থেকেই। সঙ্গে বাংলা একাডেমিও স্টল বরাদ্দ করেছে অনেক দেরিতে। এর ভেতর আবার সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন করোনার প্রকোপ বাড়লে মেলা বন্ধও হতে পারে। সবকিছু মিলিয়ে আসলে লেখক-পাঠক-প্রকাশক উভয়েই দ্বিধান্বিত। মানুষ এখনো বুঝতেই পারছে না যে মেলা আদৌ হচ্ছে কিনা। এরপর ঝড়-বৃষ্টির কথা মাথায় রাখা লাগছে। আর এই সবকিছু মিলিয়ে কাজে অগ্রগতি কম।

শোভা প্রকাশের সেলস ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রথম দিন হিসেবে প্রথম দিকে মানুষ কম থাকলেও সন্ধ্যার দিকে দৃশ্য বদলে গেছে। অধিকাংশ স্টলের কাজও শেষ হয়নি এবার। ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা নিয়ে আমাদের আলাদা প্রত্যাশা ও পূর্ব পরিকল্পনা থাকে। কিন্তু এবার তা হয়নি এবং মার্চে সেটি নেই। ফলে মেলায় একটু ঢিলেঢালা ভাবই দেখা যাচ্ছে। তবে প্রথম দিন হিসেবে বিক্রিও হয়েছে বেশ কিছু বই।

এদিকে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই সব ভয় উপেক্ষা করে মেলায় আসতে শুরু করেছেন পাঠক-লেখক-দর্শক। মেলা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও অগোছালো ভাব দেখে মনোক্ষুণ্ন হয়েছেন অনেকেই। তবে প্রত্যেকেই আশাবাদী মেলার সামনের দিনগুলো নিয়ে।

এ বিষয়ে মেলায় আগত দর্শনার্থী আরিফুর রহমান বলেন, যতটা আশা নিয়ে বইমেলা এসেছিলাম, ততটুকু পাইনি। কেউ প্রস্তুত না। বড় বড় প্রকাশনগুলোও এখনো গুছিয়ে উঠতে পারেনি। প্রকাশকদেরও ঢিলেমি আছে। তবে পরিসর বেড়ে যাওয়ায় মেলার পরিবেশটা সুন্দর হয়েছে।  

এদিকে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকেও এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়নি মেলার বাথরুম, নামাজ আদায় করার কক্ষ, আশ্রয়কেন্দ্রসহ বেশ কিছু অংশ। বেশিরভাগ স্টলেই চলছে কাজ শেষ করার জোর প্রস্তুতি। আর হাতে গোনা কয়েকটি স্টল-প্যাভেলিয়নে বই সাজাতে ব্যস্ত দেখা গেছে প্রকাশকদের।  

এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির পরিচালক ও মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ জানান, খুব শিগগিরই সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে।

এদিকে বইমেলার প্রথম দিন বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ থেকে নতুন বই প্রকাশের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে কিছু নতুন বই প্রকাশের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অবসর থেকে প্রকাশ হয়েছে গোলাম মুরশিদের ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাংস্কৃতিক পটভূমি’, হায়াৎ মামুদের গল্পের বই ‘যাদুকরের ভেঁপু’, একে এম শাহনাওয়াজের ‘ভারতীয় সভ্যতা’, টাঙ্গন থেকে এসেছে অ্যাডভোকেট জাকিয়া তাবাসসুম জুঁইয়ের ‘মুক্তিযুদ্ধের অমূল্য দলিল’, অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশ হয়েছে হারুন হাবীবের ‘কলকাতা ৭১’, হারুন-অর-রশীদের ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা’, ইউপিএল থেকে মওদুদ আহমদের (অনুবাদ: জগলুল আলম) 'সেনা সমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার', সময় প্রকাশন থেকে আনন্দ বিকাশ চাকমার 'কার্পস মহল থেকে শান্তিচুক্তি' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ১৫ লাখ বর্গফুট জায়গায় এবারের বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৭টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫৪টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৮০টি ইউনিট; মোট ৫৪০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৩৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় থাকছে ৩৩টি প্যাভিলিয়ন।

এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়াদী উদ্যানের মূল মেলা প্রাঙ্গণে। সেখানে ১৩৫টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দের পাশাপাশি ৫টি উন্মুক্ত স্টলসহ ১৪০টি স্টল দেওয়া হয়েছে।

একক ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করেছেন তাদের বই ও বিক্রি বা প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে।

বইমেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টায় শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত তা চলবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। তবে শুক্রবার দুপুর ১টা থেকে বিকেলে ৩টা এবং শনিবার দুপুর ১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিরতি থাকবে। বইমেলা চলবে আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২১
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।