ঢাকা: সারা দেশে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। রোদের তাপে জনজীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।
রোববার (১১ মে) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে রাজধানী ঢাকায় গরমের তীব্রতা আরও বেড়েছে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। রিকশাচালক থেকে শুরু করে পরিযায়ী শ্রমিক — সবার অবস্থাই শোচনীয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজও ঢাকাসহ দেশের আটটি জেলায় তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। অন্যান্য এলাকায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঢাকার গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজার সড়কে কথা হয় পাবনার কাশিনাথপুরের বাসিন্দা রিকশাচালক আক্কাস মিয়ার সঙ্গে। দুপুর ১টায় প্যাসেঞ্জারের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, রইদের মধ্যে শরীর জ্বলি যাইতেছে। এরকম রইদ থাকলে আর রিকশা চালামু না। জান হাঁসফাঁশ করতেছে।
তিনি জানান, গত দুদিন ধরে প্রচণ্ড রোদের কারণে ঠিকমতো রিকশা চালানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, নিজের আর পরিবারের প্যাটের ক্ষিধা মিটানোর লাইগা এত কষ্ট করতাছি। কিন্তু আর পারতেছি না। যা কামাইতাছি তা দিয়া শরবত খাইতাছি একটু ঠান্ডা পাওয়ার লাইগা। কাল যদি রইদ না কমে, তাহলে রিকশা চালামু না।
কসবা থেকে ঢাকায় আসা পরিযায়ী শ্রমিক মকবুল জানান, তিনি বালু টানার কাজ করেন। গতকাল কাজ করতে গিয়ে অতিরিক্ত রোদের কারণে একবার জ্ঞান হারান। তিনি বলেন, এত গরম পড়তেছে, কোনো কাজ করতে পারতেছি না। শরীরই আর সহ্য করতে চায় না।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নাফি বলেন, গরম একদিকে, ঢাকার যানজট আরেক বিপদ। মানুষ বেঁচে আছে, সেটাই অনেক। আজ সরকারি ছুটি, তারপরও তেজগাঁওয়ে ত্রিশ মিনিট যানজটে ছিলাম। যানজট নিয়ে সরকার যা করার তা করছে না।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, প্রকৃত তাপমাত্রা থেকে মানুষ ৩-৪ ডিগ্রি বেশি গরম অনুভব করছে। এ অবস্থাকে বলা হয় ‘ফিলস লাইক’। এর কারণ, বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় শরীর ঘাম ঝরাতে পারে না, ফলে তাপ শরীরে আটকে থাকে।
আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, মানবদেহ নিজেও গরম বেশি অনুভব হওয়ার জন্য দায়ী। দেহের ভেতরের তাপ ত্বকের দিকে আসে, আবার বাতাসের তাপও ত্বকে লাগে। ঘাম হয়, কিন্তু বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় তা শুকায় না। ফলে শরীর স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গরম আরও বেশি অনুভূত হয়।
তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া অফিস তাপমাত্রা মাপে স্টিভেনসন স্ক্রিনের মাধ্যমে, যাতে রোদের সরাসরি প্রভাব পড়ে না। এতে কেবল বাতাসের তাপমাত্রা ধরা পড়ে, কিন্তু বাইরে বাস্তবে রোদের তাপ অনেক বেশি অনুভূত হয়।
আবহাওয়াবিদ ড. মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা, ঢাকা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ ও যশোরে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। দেশের অন্যান্য এলাকায় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ রয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-একটি জায়গায় দমকা হাওয়াসহ বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বাকি অংশে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকবে এবং আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
এজেডএস/এমজে