ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

দেবহাটায় ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙন, আতঙ্কে এলাকাবাসী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩
দেবহাটায় ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙন, আতঙ্কে এলাকাবাসী

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার ভাতশালা এলাকায় ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বেড়িবাঁধের কিছু অংশ নদীগর্ভে ধসে পড়েছে।

জানা গেছে, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর পোল্ডার-৩ এর আওতাধীন ভাতশালা এলাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারণী ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধে সম্প্রতি এ ফাটল দেখা দেয়।  

সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) প্রবল জোয়ারের তোড়ে প্রায় ১৫০ মিটার এলাকা জুড়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে যে কোনো মুহূর্তে বেড়িবাঁধ ভেঙে আশপাশের এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন নদীর তীরবর্তী মানুষ।

এদিকে বেড়িবাঁধে ভাঙনের খবর পেয়ে দেবহাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান ও দেবহাটা সদর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বকুল সোমবার ঝুঁকিপূর্ণ ও ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

ইছামতি পাড়ের বাসিন্দা ফেরদৌসী বেগম বলেন, এরই পূর্বে পাশের সুশীলগাতি, কোমরপুর ও নাংলা সীমান্তে ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়। প্রতিবারই বেড়িবাঁধ ভাঙলে প্রায় মাস খানেক নিচু এলাকা পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এভাবে যদি বারবার বেড়িবাঁধ ভাঙতে থাকে, তাহলে বসতবাড়ি হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে নদীর পাড়ের জনগণকে।

তিনি ভাতশালার ভাঙন কবলিত এলাকায় জরুরিভাবে কংক্রিটের ব্লক ও বালুভর্তি বস্তা ডাম্পিংয়ের পাশাপাশি নদী ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, বাঁধ ভাঙার আগে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বাঁচা সম্ভব হবে। কিন্তু পাউবো কর্তৃপক্ষের খোঁজ নেই। আগে থেকে তারা কোনো পদক্ষেপ নেন না।

দেবহাটা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বকুল বলেন, ভাতশালা এলাকায় ইছামতির বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। বেড়িবাঁধের বেশিরভাগ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে এরই মধ্যে। এতে এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।  

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গাফিলাতির বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সীমান্ত এলাকায় পাউবোর বেড়িবাঁধ সংস্কারে কোনো বরাদ্দ হলে সংশ্লিষ্ট সেকশন অফিসারদের (এসও) সঙ্গে ঠিকাদাররা মিলে দায়সারা গোছের কাজ করে চলে যান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঠিকাদারের কাছ থেকে সংস্কার কাজ কিনে নিয়ে পাউবোর এসও’রাই তা শ্র্রমিক সরদারদের কাছে আবার বিক্রি করে অতিরিক্ত অর্থ পকেটস্থ করেন। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারের সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনো তদারকি থাকে না। ফলে বরাদ্দের অধিকাংশ টাকা লোপাট হয়ে যায়। কাজ হয় যৎসামান্য। উপকূলের মানুষের জানমাল রক্ষায় ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ সঠিকভাবে করতে তিনি এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

দেবহাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও কংক্রিটের ব্লক ডাম্প (ফেলতে) করতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন অফিসার (এসও) সাইদুর রহমান বলেন, ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেছি। ভাঙনের মাত্রা তীব্র হওয়ায় কেবলমাত্র কংক্রিটের ব্লক এবং বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্প করে তা রোধ করা কষ্টসাধ্য। মূলত ভাঙন কবলিত এলাকাটিতে নতুন করে রিং বাঁধ দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু স্থানীয়রা রিং বাঁধ নির্মাণের পক্ষে মতামত দিচ্ছে না। তবুও শিগগিরই বালুর ব্যাগ ও ব্লক ডাম্পিং শুরু করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।