ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

বহু প্রতীক্ষার বাঁধ, তবুও আতঙ্ক!

রফিকুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫১ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৪
বহু প্রতীক্ষার বাঁধ, তবুও আতঙ্ক!

চর কুকরী মুকরী, চরফ্যাসন, ভোলা থেকে: বহু প্রতীক্ষার পর বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে চরকুকরী-মুকরীতে। এ বাঁধ নিয়ে এলাকার মানুষ নিরাপদে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখলেও এবারও বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে তাদের আতঙ্কের শেষ নেই!

কারণ, বর্ষার আগে বাঁধ পুরোপুরি শেষ হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ এলাকাবাসীর।

তাদের আশঙ্কা বর্ষার আগে কাজ শেষ না হলে নতুন বাঁধ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

দক্ষিণ কুকরী-মুকরীর মনুরা বাজারের গা ঘেঁষে জেগে ওঠা নতুন বেড়িবাঁধ দেখিয়ে এলাকার প্রবীণ শিক্ষক মো. বাদশা মিয়া বলেন, প্রায় চারশ বছরের পুরনো এই চরে বাঁধ তৈরি হচ্ছে। এটা আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। বাঁধ জোয়ারের পানি থেকে এলাকার মানুষকে রক্ষা করবে। ফসলি জমি ভরে উঠবে সবুজে সবুজে। কিন্তু, বর্ষার আগে কাজ শেষ না হলে এবারও ভোগান্তি পোহাতে হবে।

উপকূলীয় জেলা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বহু পুরনো দ্বীপ কুকরী-মুকরী। কেবলমাত্র বিচ্ছিন্নতাই সবুজ বন-বনানী ঘেরা এই দ্বীপকে নানা সংকটের মুখে রেখেছে। এলাকার মানুষদের পিছিয়ে রেখেছে সবদিক থেকে। নাগরিক সুবিধার কোনোটাই এখানকার মানুষের হাতের নাগালে নেই।

অন্যদিকে, অনেকদিন বেড়িবাঁধবিহীন এই দ্বীপ ইউনিয়নের মানুষ বর্ষার পানিতে হাবুডুবু খেয়ে জীবন কাটাতেন। লবণ পানির কারণে কোনো ফসল হতো না। জোয়ারের পানি আসা শুরু হলে ছুটি হয়ে যেতো অধিকাংশ বিদ্যালয়েই।

সরেজমিন দেখা যায়, চরের চারদিকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শ্রমিকেরা মাটি কেটে বাঁধ তৈরি করছে। যে স্থানে মাটির সঙ্গে প্রায় মিশে যাওয়া মাটির রাস্তা ছিল, সে স্থানে এখন উঁচু বাঁধ হচ্ছে। এরই মধ্যে কোথাও কোথাও বাঁধ প্রায় সম্পন্ন হয়ে গেছে। আবার কোথাও মাটির কাজ চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। কোথাও এখন পর্যন্ত মাটিই পড়েনি।

আলাপকালে দক্ষিণ কুকরী-মুকরীর মনুরা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মো. হাসান মাতুব্বর বলেন, বাঁধ আমাদের অনেক উপকার করবে। বাঁধের আশায় তো আমরা চেয়েছিলাম যুগের পর যুগ। কিন্তু মনুরা বাজারের পাশে তেঁতুলিয়া নদীর তীরে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ও দেড় কিলোমিটার প্রশস্ত বিশাল এলাকা বাঁধের বাইরে রাখায় এই জমি কৃষি আবাদের বাইরে থাকবে। তাছাড়া বর্ষা মৌসুম আসার আগে বাঁধের কাজ সম্পন্ন না হলে বাঁধ টেকসই করতেও সমস্যা হতে পারে।

বাঁধ নির্মাণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাঠকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চর কুকরী-মুকরীর এই বাঁধে মোট চারটি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হবে। কিন্তু, সে স্লুইস গেটের কাজ কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়নি।

এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বহু পুরনো চর হলেও কুকরী-মুকরীতে উন্নয়নের ছোঁয়া খুব একটা লাগেনি। মনুরা বাজার থেকে বাবুগঞ্জ গ্রামে অবস্থিত ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র পর্যন্ত মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার পাকা রাস্তা আছে এখানে। দুটি টেম্পু চলে এ পথে। কিন্তু, টেম্পু এসে থেমে যায় পাকা রাস্তার মাথায়। সেখান থেকে বাজার পর্যন্ত পরের রাস্তাটুকুর অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, পায়ে হেঁটে চলাই কষ্টকর।

কুকরী-মুকরী পুরান বাজারের খালের দক্ষিণ পাড় ধরে একটি রাস্তা চলে গেছে খেয়াঘাটের দিকে। ইট বিছানো এ রাস্তার ইটের অর্ধেকই যেন হারিয়ে গেছে।

রাস্তাটির কোথাও ভেঙে খালে চলে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের সামনের ব্রিজ পার হয়ে ডাকাতিয়া ঘাটে যেতে থমকে দাঁড়াতে হয়। ব্রিজের ওপারের রাস্তাটি ডানদিকে গেছে, নাকি বাম দিকে গেছে, বোঝাই কষ্টকর। কারণ, সেখানে কোনো রাস্তা নেই। বলা যায়, হাঁটার পথ।

ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দিয়ে একটা রাস্তা কচ্ছপিয়ার সোজা এ পাড়ে চলে গেছে। এই রাস্তাটি করা হয়েছে, ম্যানগ্রোভ বন কেটে। বনের ভেতর দিয়ে রাস্তায় হেঁটে দেখা যায়, সেখানে বহু গাছ কাটা হয়েছে। তারপরও সেটাকে চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব হয়নি।

আরো কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেল, পায়েহাঁটা সরু পথের মতো রাস্তা। বর্ষায় এগুলো পানিতে ডুবে থাকে। ছড়ানো-ছিটানো বহু বাড়ির সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের  ব্যবস্থা হয়নি। তাইতো, এলাকার মানুষ মাঠের ভেতর দিয়েই চলাচল করে মাইলকে মাইল পাড়ি দেন।

এলাকাবাসীর দাবি, এলাকার উন্নয়নের জন্য এখানে পরিপূর্ণভাবে বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন করতে হবে। পানি নিষ্কাশনের জন্য থাকতে হবে পর্যাপ্ত স্লুইসগেট। চরফ্যাশনের সঙ্গে কুকরী-মুকরীকে সংযুক্তির করার উদ্যোগ নিতে হবে। সংযোগ দিতে হবে বিদ্যুতের। তা হলেই কুকরী-মুকরী এগুবে। এখানকার মানুষ পাবেন সমৃদ্ধির পথ।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪১ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।