দমদমিয়া, টেকনাফ (কক্সবাজার) : ভর শীত মৌসুমে যেখানে লোকে লোকারণ্য থাকে, সেখানটায় এখন কোনও লোকজন নেই। অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ।
কক্সবাজারের টেকনাফের দমদমিয়া ঘাটের অবস্থা এখন এমনটাই। কয়েকদিনের টানা অবরোধ এই জমজমাট ঘাটকে যেন অবরুদ্ধ করে রেখেছে। প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনগামী যাত্রীরা এই ঘাট থেকেই জাহাজে ওঠেন। রাতদিন মানুষের কোলাহলে মুখর থাকে এ ঘাট। শীত মৌসুমে যাত্রীর সংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। কিন্তু এই ভরমৌসুমে এখানে যাত্রী আসার কোন সুযোগ নেই।
দমদমিয়া ঘাটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবদুর রহমান। প্রায় পাঁচ বছর ধরে এখানে আছেন। তিনি বলেন, প্রায় সারাবছরই এই ঘাট দিয়ে বহু মানুষ সেন্টমার্টিনে যাতায়াত করেন। তবে শীত মৌসুমে লোকজনের সংখ্যা বেড়ে যায়। এবারের শীতের শুরুর দিকেও অনেক লোকজন এখানে এসেছেন। কিন্তু অবরোধের কারণে ৩-৪ দিন ধরে প্রায় জনশুণ্য পড়ে আছে ঘাট।
ভর দুপুর। নাফ নদী আর পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পিচঢালা পথে লোকজন নেই। দমদমিয়া বিজিবি চেকপোস্ট অতিক্রম করছে কিছু চান্দের গাড়ি, সিএনজি, ভ্যান, জীপ। বাস-মিনি বাসের দেখা নেই। কিছু বাস ঝুঁকি নিয়ে কক্সবাজারের পথে যাতায়াত করছে। দূরপাল্লার কোন বাস নেই কয়েকদিন ধরে। অবরোধের কারণে আটকা পড়া মানুষেরা যে যেভাবে পারছে গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করছেন। অনেকে বাড়তি হোটেল ভাড়া গুনছেন। অপেক্ষা করছেন কখন অবরোধ প্রত্যাহার হবে।
ঢাকাগামী যাত্রী সাইফুল ইসলাম। দমদমিয়ায় আটকে আছেন দু’দিন। অফিসের কাজে এসে আর ফিরতে পারেন নি। অবস্থান করছেন স্থানীয় একটি হোটেলে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ঢাকা যাওয়ার যানবাহন খুঁজছেন। বললেন, অবরোধের কারণে আটকা পড়েছি। ঢাকাগামী বাসের কাউন্টার থেকেও কোন ভালো খবর জানতে পারছি না।
আল-আমীন। দমদমিয়ায় হোটেল ব্যবসা করেন। ক্রেতা না থাকায় হোটেল বন্ধ রেখেছেন দু’দিন। দোকানে খুঁটিনাটি কাজ করছিলেন। বললেন, হোটেল চালিয়ে সংসার চালাই। ৬ জনের সংসার। দিনের আয় রোজগার না থাকায় সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে।
শুধু সেন্টমার্টিন যাতায়াতের ঘাট দমদমিয়া নয়, দেশের পূর্ব-দক্ষিণ সীমানায় সমুদ্র পাহাড় আর নদী বেষ্টিত টেকনাফ তিনদিন ধরে ফাঁকা। রাস্তায় লোকজন কম। স্থানীয় যানবাহন ছাড়া দূরপাল্লার কোন যানবাহনের দেখা নেই। তুরাগতীরের বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে দু’একটি রিজার্ভড বাস যাচ্ছে মাত্র। দু’দিন ধরে রাজধানী ঢাকা ও বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী পরিবহনের অধিকাংশ কাউন্টার বন্ধ রয়েছে।
টেকনাফে পর্যটক নেই বললেই চলে। আবাসিক হোটেল ফাঁকা। দোকানপাটে বেচাকেনা কম। রাস্তায় লোকজন চলাচলও অনেক কম। প্রধান সড়কের স্টেশন এলাকা, লামার বাজার, উপরের বাজারসহ আশপাশের সব এলাকায় ব্যবসায়ীরা হাত-পা গুটিয়ে বসে আছেন।
বার্মিজ সব ধরনের পণ্য পাওয়া যায় বলে শহরের লামার বাজারের বার্মিজ মার্কেট সবসময়ই পর্যটকের ভিড়ে মুখর থাকত। কিন্তু তিনদিন ধরে ওই বাজারের অধিকাংশ দোকানপাটে কোন বেচাকেনা নেই। সারাদিনে একজন গ্রাহকও মিলছে না অনেকের ভাগ্যে।
মার্কেটের ব্যবসায়ী মা চিন রাখাইন বলেন, টেকনাফে আসা পর্যটকেরা বার্মিজ মার্কেটে অন্তত একবার আসেন। শীতের এই মৌসুমে এখানে পর্যটকের ভিড় থাকে অনেক বেশি। অবরোধের কারণে লোকজন আসতে পারছেন না বলে বেচাকেনা একেবারেই নেই।
এদিকে অবরোধের কারণে টেকনাফে আটকা পড়ে আছেন বহু মানুষ। কেউ পর্যটক হিসাবে বেড়াতে গিয়েছিলেন, কেউবা কাজে। কারও পক্ষেই টেকনাফের বাইরে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কেউ কেউ কক্সবাজার হয়ে চট্টগ্রাম যেতে চাইলেও পথেই আটকা পড়ছেন। টেকনাফ থেকে দূরপাল্লায় ছেড়ে আসার মত কোন বাসও এখানে নেই। সব বাস অবরোধের ডাক দেওয়ার পর চট্টগ্রাম কিংবা ঢাকায় আটকা পড়েছে।
গন্তব্যে ফিরতে টেকনাফে বহু মানুষ এক কাউন্টার থেকে ও কাউন্টারে ঘুরছেন। এদের একজন সাইমন আহমেদ। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। অফিসের কাজেই এসেছিলেন। এখন ফেরার সুযোগ নেই। তিনি জানালেন, কাউন্টারে গিয়ে জেনেছি বাস নেই। ইজতেমার জন্য বিশেষভাবে দু’একটি বাস গেলেও তাতে কোন সিট নেই।
[ পশ্চিমে সাতক্ষীরা, পূর্বে টেকনাফ, উপকূলের এই ৭১০ কিলোমিটার তটরেখা বেষ্টিত অঞ্চলে সরেজমিন ঘুরে পিছিয়ে থাকা জনপদের খবরাখবর তুলে আনছে বাংলানিউজ। প্রকাশিত হচ্ছে ‘উপকূল থেকে উপকূল’ নামের বিশেষ বিভাগে। আপনি উপকূলের কোন খবর বাংলানিউজে দেখতে চাইলে মেইল করুন এই ঠিকানায়: ri_montu@yahoo.com ]
বাংলাদেশ সময়: ০২০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৫