টাঙ্গাইল: ১৯৫৭ সালে যখন তৎকালীন টাঙ্গাইলের কাকুয়াকে ইউনিয়ন বোর্ড করা হয়, তখন কাকুকা ইউনিয়নের গ্রাম ছিল মোট ২২টি। লোকসংখ্যা ছিল প্রায় ৪২ হাজারের কাছাকাছি।
এরপর প্রায় ৬ দশক পেরিয়ে এসেও বাড়েনি কাকুয়া ইউনিয়নের জনসংখ্যা। বরং ৫৮ বছর পেরিয়ে এসেও এক তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা কমেছে এ ইউনিয়নের। শুমারি হিসেবে এখন জনসংখ্যা ২৮ হাজার ৭৭৮ জন।
মানুষ কমার সঙ্গে প্রায় ৫ যুগে পাল্লা দিয়ে কমেছে এ ইউনিয়নের জমিও। এ দীর্ঘ সময়ে রীতিমতো নাই হয়ে গেছে ২২টি গ্রামের অর্ধেকেরও বেশি, ১৩টি গ্রাম।

সময়ের পরিক্রমায় টাঙ্গাইলের ভেতর দিয়ে বহমান যমুনা বিভিন্ন সময়ে ধীরে ধীরে গিলে নিয়েছে এ ১৩টি গ্রাম। তার করালগ্রাসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে অবশিষ্ট ৯টি গ্রামের আরো দু’একটি।
ফলে ৫৮ বছরে একে একে ভিটে-মাটির মায়া ছেড়ে, নিজ হাতে গড়া লোকালয় ছেড়ে চলে গেছেন অনেক মানুষ। এতে করে সারাদেশে জ্যামিতিক হারে জনসংখ্যা বাড়লেও কমেছে কাকুয়া ইউনিয়নে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫৭ সালে বর্তমান টাঙ্গাইল সদর উপজেলার যমুনা তীরবর্তী কাকুয়া ইউনিয়ন ২২টি গ্রাম নিয়ে গঠিত হয়। সে সময় ইউনিয়নের আয়তন ছিল ১২ হাজার ৭৪৮ একর। লোকসংখ্যা ছিল মোট প্রায় ৪২ হাজার ও ভোটার ২৮ হাজারের মতো।
এরপর থেকে থেকে অব্যাহত ভাঙনে যমুনার গর্ভে বিলীন হতে থাকে বিভিন্ন এলাকা। বদলে যায় ইউনিয়নের মানচিত্র, পাল্টে যেতে থাকে জীবনযাত্রা। এভাবে বর্তমানে টিকে আছে মাত্র ৯টি গ্রাম।

ইউনিয়নের যে গ্রামগুলো নদীগর্ভে চলে গেছে সেগুলো হলো, গয়লা হোসেন, গয়লাদেব, মুকুন্দ গয়লা, আর গয়লা, জুধা খাস, ঢেকিয়াবাড়ি, রাজনগর, শর্মাকেউটিল, সেটেলপাড়া, ভাটচান্দা, গোপালকেউটিল, পূর্ব নরসিংহপুর ও কাকুয়া গ্রামের চার ভাগের তিন ভাগ।
যে গ্রামগুলো নিয়ে এখন ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালিত হচ্ছে সেগুলো হলো, দেলধা, ওমরপুর, তালগাছি, পানাকুড়া, রাঙ্গাচিড়া, গোটবাড়ি, শলিকেউটিল, ঝাউগড়া ও চরপৌলী।
কাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র জানায়, ৯নং ওয়ার্ড সম্পূর্ণ নদীতে চলে গেছে। গয়লা হোসেন, গয়লা দেব, আর গয়লা ও জুঠা খাস গ্রাম নিয়ে ৯নং ওয়ার্ড ছিল। এছাড়া ঢেকিয়াবাড়ি, রাজনগর, শর্মাকেউটিল ও সেটেলপাড়া নিয়ে গঠিত ৮নং ওয়ার্ডও যমুনায় প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার উপক্রম।
এছাড়া ১নং ওয়ার্ড ও ২নং ওয়ার্ড আংশিক ভেঙে পাশের কালিহাতী উপজেলার দুর্গাপুর ও গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়নে চলে গেছে।
৫নং ওয়ার্ডের কাকুয়া গ্রাম নদীতে বিলীন হওয়ায় তালগাছি গ্রামকে কাকুয়া মৌজা নাম দিয়ে ও নকশা তৈরি করে ইউনিয়নের নাম রাখা হয়েছে।

৬নং ওয়ার্ডের কালিকেউটিলের অর্ধেক অংশ এরই মধ্যে যমুনার পেটে চলে গেছে। বাড়ি-ঘর ভেঙে যাওয়ায় সেখানকার লোকজন বর্তমানে দেলধা গ্রামে বসবাস করছেন।
একইভাবে নদী গ্রাস করে নেওয়া গোপাল কেউটিল গ্রামের কিছু মানুষ ওমরপুরে, কিছু বাঘিল ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে এবং পোড়াবাড়ি ইউনিয়নে আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে, নদীগর্ভে চলে যাওয়া গ্রামগুলোতে থাকা স্কুল-কলেজ, মসজিদ, বাজারসহ নানা স্থাপনা বিলীন হওয়ায় চরম বিড়ম্বনা পোহাচ্ছেন এসব এলাকার মানুষজন।
নদীতে হারিয়ে যাওয়া দক্ষিণ গয়লা হোসেন দাখিল মাদ্রাসা কয়েকবার ভাঙার পর অবশেষে ওমরপুর গ্রামে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
কাকুয়া পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র নদীতে চলে যাওয়ায় তা বর্তমানে তালগাছি গ্রামে নবনির্মিত কমপ্লেক্সের একটি কক্ষ থেকে পরিচালিত হচ্ছে।

এছাড়া খাস কাকুয়া উচ্চ বিদ্যালয়, কাকুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনও সরিয়ে এখন নিয়ে আসা হয়েছে তালগাছি গ্রামে। একইভাবে কাকুয়া থেকে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ও কাকুয়া হাটও নিয়ে আসা হয়েছে তালগাছি গ্রামে।
কাকুয়ায় একটিমাত্র ডাকঘর ছিল, তাও কয়েক দফা ভাঙনের কবলে পড়ে এক সময় নদীতে বিলীন হয়ে যায়। সর্বশেষ গত দুই মাস আগে তালগাছি গ্রামে একটি টিনের ঘর নির্মাণ করে সেখান থেকে ডাকঘরের কার্যক্রম আপাতত পরিচালিত হচ্ছে।
অন্যদিকে, নদীগর্ভে যাওয়া গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের বেশিরভাগই পাশের গ্রাম বা ইউনিয়নে চলে গেছেন। অনেকে শহরে নতুন করে বাড়ি করেছেন। নদীতে ঘর-বাড়ি হারানো ১৩টি গ্রামের মানুষেরা অনেকেই বিক্ষিপ্তভাবে ভোটার হয়েছেন। ফলে ভোটারের সংখ্যা ও বিন্যাস নিয়ে তৈরি হয়েছে অস্পষ্টতা।

কাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান ফারুক জানান, ৭/৮টি গ্রাম ভাঙনের কারণে ১, ২, ৪, ৭ ও ৮নং ওয়ার্ডে ভোটার বেড়েছে। তাই ভৌগোলিক অখণ্ডতা, জনসংখ্যার বিন্যাস ও প্রশাসনিক সুবিধার জন্য নতুন করে সব ওয়ার্ডের সীমানা পুনর্নির্ধারণ ও পুনর্গঠন প্রয়োজন।
তিনি জানান, ওয়ার্ড পুনর্গঠন করা না হলে আগামী নির্বাচনে আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে। এ লক্ষ্যে সীমানা পুননির্ধারণের জন্য গত ১ আগস্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ইউনিয়নটিতে জরিপ করা হচ্ছে। খুব দ্রুতই নতুন করে সীমানা নির্ধারণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৫
এসআর/এএসআর