পটুয়াখালী: উপকূলে এখন কাঁকড়ার মৌসুম। এ কারণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কাঁকড়া শিকারীরা।
কাঁকড়া শিকারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোর হওয়ার ঘণ্টা দুই আগেই নিজ নিজ বাড়ি থেকে সমুদ্র উপকূলের দিকে রওনা হন তারা। তারপর ভোর থেকেই চলতে থাকে কাঁকড়া শিকারের অভিযান।
এরকম একটি কাঁকড়া শিকারী দল ভোর ৪টার দিকে পটুয়াখালীর মনোহরপুর গ্রাম থেকে ট্রলারে করে সুন্দরবন সংলগ্ন কুয়াকাটার পশ্চিমে ফাতরার বনের উদ্দেশ্যে রওনা হন। শীতের কুয়াশা মাখা ভোর সাড়ে ৬টায় গন্তব্যে পৌঁছে ট্রলারেই সকালের খাবার সেরে নিলেন তারা।
এরপর লোহার তৈরি বিশেষ শিক আর মাটি কাটার খুন্তিসহ শিকারের যাবতীয় সামগ্রী নিয়ে বনের মধ্যে প্রবেশ করেন তারা।
শুরু হয় কাঁকড়া সন্ধানের পালা। বড় বড় গর্তে লোহার শিক দিয়ে অনুসন্ধান করে কাঁকড়ার উপস্থিতি যাচাই করা হয়।
এক পর্যায়ে গর্ত থেকে বের করে আনা হয় ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের বড় বড় কাঁকড়া।
আর এভাবেই ভোর থেকে জোয়ার আসার আগে পর্যন্ত কাঁকড়া ধরতে থাকেন শিকারীরা।
কাঁকড়া শিকারী সন্তোষ, গৌতম, বাদল জানান, বর্ষায় প্রজননের পর ছোট কাঁকড়া শীত মৌসুমে বড় হয়ে সাগর উপকূলের বিভিন্ন বনের বড় বড় গাছের গোড়ায় গর্ত করে আবাসস্থল তৈরি করে। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পূর্ণ বয়স্ক কাঁকড়া এভাবে থাকায় খুব সহজে ধরা যায়।
এ কারণে অনেকে পেশা বদল করে এখন কাঁকড়া শিকার করছেন। পটুয়াখালীর উপকূলীয় ফাতরা, গঙ্গামতি, সোনারচরসহ অর্ধশতাধিক বনাঞ্চলে অন্তত ২০ থেকে ৩০ হাজার মানুষ এ পেশায় জড়িত। এতে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। আবার অনেকে কাঁকড়া বিক্রি করে ভালভাবেই জীবিকা নির্বাহ করছেন।
তবে বিভিন্ন জাল দিয়ে মাছ শিকার করতে গিয়ে অনেকেই ছোট কাঁকড়া মেরে ফেলছেন। এতে করে কাঁকড়ার সংখ্যা দিন দিন কমে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
পটুয়াখালী সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তণ অধ্যক্ষ পিযূষ কান্তি হরি বাংলানিউজকে বলেন, কাঁকড়ায় প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কাঁকড়ার চাহিদা থাকায় এটি রপ্তানিযোগ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত।
কুয়াকাটার আলীপুর-মহিপুর কাঁকড়া আড়তদার হরিদাস বাংলানিউজকে বলেন, পরিবহন সমস্যার কারণে অনেক কাঁকড়া মারা যাওয়ায় সেগুলো রপ্তানিযোগ্য না হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
তা সত্ত্বেও পটুয়াখালীর বিভিন্ন এলাকার আড়ত থেকে প্রতিমাসে কোটি টাকার কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. আবুল হাছানাত বাংলানিউজকে বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে শুধু চিংড়ি খাতের উপর নির্ভরশীল না হয়ে কাঁকড়ার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। উপকূলীয় এলাকায় কাঁকড়া চাষকে জনপ্রিয় করে তোলা গেলে এটিও হতে পারে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খাত।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৬
এমজেড/জেডএম