ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

আল্লায়ও মোগো ওপর অবরোধ দেছে!

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০০ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২২
আল্লায়ও মোগো ওপর অবরোধ দেছে!

পাথরঘাটা, (বরগুনা): ‘এমনিতেই হারা বছর সাগরে মাছ তেমন পাই নাই, কয়েক দিন আগে জাটকার অবরোধ, এহন আবার ৬৫ দিনের অবরোধ। সরকার তো অবরোধ দেছেই, আল্লায়ও যেন মোগো ওপরে অবরোধ দেছে।

এমন আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন পাথরঘাটা উপজেলার বাদুরতলা গ্রামের জেলে হাফিজুর রহমান ও জামাল হোসেন।

একদিকে সমুদ্রে মাছ শিকার বন্ধ, অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের দাম লাগামহীন বৃদ্ধি। এ কারণে সাগর উপকূলীয় বরগুনার পাথরঘাটার জেলেদের চরম দুর্দিন যাচ্ছে।

সংসারের ব্যয়ভার বহন ও মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া দাদনের (ঋণ) টাকা শোধ নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাজার হাজার জেলে। আয় রোজগারহীনভাবে দীর্ঘদিন বেকার সময় কাটানোর ফলে অনেকের ঘরের চুলায় এখন আগুন জ্বলছে না। এমন অবস্থায় বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন পাথরঘাটা উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে হাহাকার চলছে।  সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, জেলে পরিবারে হাহাকার। তবে সরকার কর্তৃক যে বরাদ্দ তা যদি প্রকৃত জেলেদের মাঝে সঠিকভাবে বন্টন করা হয় এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া হয় তাহলে অবরোধকালীন অন্তত হাহাকার থাকবে না।  

বাদুরতলা গ্রামের জেলে হাফিজুর রহমান ও জামাল হোসেন বাড়ির উঠানে জাল বুনছেন আর এ প্রতিবেদকের কাছে বলেন, ‌গত কার্তিক থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত মাত্র ২২ হাজার টাকা ভাগে পাইছি, সাগরে তেমন কোন মাছ পাওয়া যায় নাই। সরকার তো বছরে তিনবার অবরোধ দেয়, আর এবার মনে হইছে যেন আল্লায়ও মোগো উপরে অবরোধ দেছে। পোলা-মাইয়া লইয়া খুব কষ্টে পার করছি।

তারা আরও বলেন, অনেক বছর ধইরা মাছ ধরি কিন্তু জেলে কারড নাই। গত বছর তালিকায় নাম নেওয়ার পর চাউল পাইছি।

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এ বছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তাই বর্তমানে সমুদ্রে মাছ শিকার বন্ধ রয়েছে। তবে মৎস্য বিভাগ ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার আগ থেকেই ঘূণিঝড় অশনির কারণে উপকূলে ইলিশ শিকার বন্ধ ছিল। গত দুই বছর করোনার প্রভাবে দেশব্যাপী লকডাউনে বাজার মন্দা যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়ায় অনেক জেলেই মাছ ধরতে যাননি।

এদিকে গ্রামের ক্ষেত খামারে কোনো কাজ নেই। বিগত বছরগুলোতে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে জেলেরা সমুদ্র থেকে উঠে এসে এলাকায় দিনমজুরি বা অন্য কোনো কাজ করে সংসার চালাতেন। কিন্তু করোনায় শহরের অনেকে চাকরি হারিয়ে এলাকায় এসে দিনমজুরের কাজ ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালানোর কারণে এ কাজের সুযোগটিও হারিয়ে ফেলেছে জেলেরা। এ কারণে ঘরে বসেই বেকার সময় পার করতে হচ্ছে জেলেদের। সংসার চালানোর একমাত্র মাধ্যম ছিল জেলে পেশা। এখন বিকল্প কোনো আয়ের উৎস না থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা।

পাথরঘাটা জেলেপল্লির জহিরুল ইসলাম, আবদুল্লাহ জানান, সরকারের পক্ষ যে সহায়তা প্রদান করে তাতে আমাদের কিছুই হয় না। ১০ দিন ধরে বেকার হয়ে আছি। এখনই সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাকি দিনগুলো কি হবে জানি না।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, দেশীয় জেলেরা সরকারের দেয়া আইন মেনে চলছে। কিন্তু ভারতীয় জেলেরা এই সুযোগে বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশ ইলিশ শিকার করে। ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সরকারকে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এছাড়াও নিবন্ধনের বাহিরে অনেক জেলে রয়েছে। এদেরকে অতিশীঘ্র নিবন্ধনের আওতায় আনা উচিত।

পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, জুন মাসের মধ্যে পাথরঘাটায় নিবন্ধদিত ১১ হাজার ৪১১ জেলেদের প্রথম দফায় ৫৬ কেজি চাল জুন মাসের মধ্যেই বিতরণ করা হবে। পরবর্তী জুলাই মাসের শেষের দিকে বাকি ৩০ কেজি চাল বিতরণ করা হবে। এছাড়াও নিবন্ধনের বাহিরে থাকা জেলেদের তালিকা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে চাওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৭ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।