ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

করাচি টেস্ট: সরফরাজের বীরোচিত সেঞ্চুরির পর নাটকীয় ড্র

স্পোর্টস ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২৩
করাচি টেস্ট: সরফরাজের বীরোচিত সেঞ্চুরির পর নাটকীয় ড্র

করাচি টেস্টের পঞ্চম দিন। নিউজিল্যান্ডের ছুড়ে দেওয়া বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় নেমে বেশিদূর যেতে পারবে না পাকিস্তান- এমনটাই ভাবা হচ্ছিল।

শুরুটাও হয়েছিল তেমনভাবেই। কিন্তু ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে গেলেন কিছুদিন আগেও 'ব্রাত্য' হয়ে থাকা সরফরাজ আহমেদ। বুড়ো হাড়ের ভেলকি দেখিয়ে ৯ বছরে প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিলেন; স্বাগতিকদের জয়ের স্বপ্নও দেখাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু তার বিদায়ের পর নাটকীয় ড্রয়ে শেষ হলো ম্যাচ।
 
সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে শেষ দিনে আজ চূড়ান্ত নাটকীয়তা দেখলো করাচি স্টেডিয়াম। ২৭৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করার পর পাকিস্তানের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩১৯ রানের। কঠিন এই লক্ষ্য তাড়ায় নেমে স্কোর বোর্ডে কোনো রান তোলার আগেই ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে স্বাগতিক দল। এরপর ৮০ রান তুলতে হারায় পঞ্চম উইকেট। স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তানের হার দেখছিল সবাই। কিন্তু নাটকের তখনও বাকি।

পাকিস্তানের ব্যাটিং অর্ডার যখন বিধ্বস্ত, তখন হাল ধরেন সরফরাজ। অন্যপ্রান্তে তাকে সেভাবে কেউ সঙ্গ দিতে না পারলেও নিজের কাজটা চালিয়ে যান তিনি। প্রথমে সাউদ শাকিলকে নিয়ে গড়েন ১২৩ রানের জুটি, যেখানে তিনি একাই করেন ৮৩ রান। বাকি ৩২ রান আসে শাকিলের ব্যাট থেকে। এরপর আঘা খানকে নিয়ে ৭০ রানের জুটিতেও মুখ্য ভূমিকা সরফরাজের। ১৩৫ বলের মোকাবিলায় দারুণ এক সেঞ্চুরিও তুলে নেন এই ডানহাতি ব্যাটার। ২১৩ ওভার কিপিং করার পর সেঞ্চুরি হাঁকানো প্রথম ব্যাটার তিনি। তার সেঞ্চুরিতে জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করে পাকিস্তান।  

দিনের শেষ ১৮ ওভারে পাকিস্তানের সামনে লক্ষ্য ছিল ৮৮ রান। হাতে ৪ উইকেট। ওই অবস্তায় সরফরাজ ছিলেন আশা হয়ে। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু ৮২তম ওভারে দারুণ খেলতে থাকা সালমানের (৩০) বিদায়ে বড় ধাক্কা আসে। সরফরাজ যেন কিছুটা গুঁটিয়ে যান। ৮৫তম ওভারে অষ্টম ব্যাটার হিসেবে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন হাসান আলীও (৫)। এরপর আলোকস্বল্পতা দেখা দিলে ফ্লাডলাইট জ্বলে ওঠে। ওই ওভারে নাসিম শাহর এক চার ও ছক্কায় আসে ১০ রান। আলো কমে যাওয়ায় তখন পেসারদের আক্রমণে আনতে পারছিল না কিউইরা। ফলে স্পিনারদের দিয়েই কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছিল।

ফ্লাডলাইটের আলোয় যখন পাকিস্তানকে স্বপ্ন পূরণের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন সরফরাজ; ঠিক তখন আঘাত হানেন কিউই স্পিনার মিচেল ব্রেসওয়েল। তার বলে আউট হওয়ার আগে সরফরাজের ব্যাট থেকে আসে ১১৮ রান, যা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ইনিংস। পাকিস্তানের স্বপ্নও ভেঙে যায় তাতে। অবশ্য ব্রেসওয়েলের পরের ওভারে ফের এক ছক্কা ও চারে ১০ রান তোলেন নাসিম। জয় থেকে মাত্র ১৭ রান দূরে ছিল তখন পাকিস্তান। ৯০তম ওভারে ২ রান আসায় তা নেমে আসে ১৫ রানে। শেষ উইকেট জুটি সবমিলিয়ে ২১ বল মোকাবিলা করেও অবিচ্ছিন্ন থাকে।  

শেষ ইনিংসে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩০৪ রান তুলে ফেলেছিল পাকিস্তান। কিন্তু আলো এতটাই কমে যায় যে, আম্পায়াররা আর খেলা চালিয়ে যেতে দেননি। ফলে ৩ ওভার বাকি থাকতেই জয় থেকে মাত্র ১ উইকেট দূরে থামতে হয় নিউজিল্যান্ডকে। অন্যদিকে জয় থেকে মাত্র ১৫ রান দূরে শেষ হয় পাকিস্তানের লড়াই। ফলে রোমাঞ্চকর এক ড্রয়ের সাক্ষী হয় ক্রিকেটবিশ্ব। পাকিস্তানের ১ উইকেট হাতে রেখে টেস্ট ড্র করার ঘটনা এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ঘটল। ১৯৮৮ সালে পোর্ট অব স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচটি ১ উইকেট হাতে রেখে ড্র করেছিল পাকিস্তান।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 
নিউজিল্যান্ড: ৪৪৯ এবং ২৭৭/৫ ডি. (টম ব্ল্যান্ডেল ৭৪, মিচেল ব্রেসওয়েল ৭৪; নাসিম শাহ ৪৩/১, মীর হামজা ৩৮/১, হাসান আলী ৩৯/১)
পাকিস্তান: ৪০৮ এবং ৩০৯/৯ (সরফরাজ আহমেদ ১১৮; ব্রেসওয়েল ৭৫/৪, টিম সাউদি ৪৩/২)
ফলাফল: ড্র 
সিরিজ: ড্র
ম্যাচসেরা: সরফরাজ আহমেদ (৭৮ ও ১১৮ রান)
সিরিজ সেরা: সরফরাজ আহমেদ (৩৩৫ রান)

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২৩
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।