ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

বাবার সঙ্গে মই টানা মারুফা যেভাবে অদম্য ক্রিকেটার

ডিসট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২৩
বাবার সঙ্গে মই টানা মারুফা যেভাবে অদম্য ক্রিকেটার

নীলফামারী: গরিব ঘরে জন্ম তাঁর। বেড়ে ওঠা অভাবী সংসারে।

কিন্ত তার টার্গেট ছিলো দেশসেরা ক্রিকেটার হওয়ার। যে বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সে পরিবারের ছোট মেয়ের কাজকর্ম বাদ দিয়ে ক্রিকেটার হতে চাওয়া 'গরিবের ঘোড়া রোগ' ছাড়া তো আর কিছুই নয়! 

এত কথা যাকে নিয়ে, তাঁর নাম মারুফা আখতার। নীলফামারী সদর উপজেলার সংগলশী ইউনিয়নের কাদিখোল ডাক্তারপাড়ার মেয়ে তিনি। একসময় বাবার সঙ্গে চাষের জমিতে মই টানা সেই মেয়েটি আজ নারী ক্রিকেট দলের হয়ে খেলছেন।  

বাবা আইমুল্লাহ হক বর্গাচাষি আর মা মর্জিনা বেগম গৃহিণী। মা-বাবা, চার ভাই-বোনসহ ছয়জনের বেশ বড়সড় পরিবার। বড় ভাই আল-আমিন স্নাতকে পড়ালেখা করছেন নীলফামারী সরকারি কলেজে। মেজো ভাই আহসান হাবিব একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে কাদিখোল কম্পিউটার কলেজে। তাঁর বড় বোন মাহফুজা আখতারের বিয়ে হয়েছে। গৃহিণী এই বোনের স্বামী কৃষি কাজ করেন। কেবল ভিটেমাটি ছাড়া আর কোনো জায়গা-জমি নেই মারুফাদের। ঘরের যেই ভিটে তাও মারুফার নানার দেওয়া।

ক্লাস সিক্সে উঠে মারুফা বায়না ধরেন প্রতিবেশী চাচা নাজমুল হুদার সঙ্গে সৈয়দপুরে গিয়ে কোচ ইমরান হাসানের কাছে ক্রিকেট বলে অনুশীলন করার। মা–বাবার আপত্তি ছিল। তা উপেক্ষা করেই ২০১৮ সালে বিকেএসপির প্রতিভা অন্বেষণ ক্যাম্পের মধ্য দিয়ে নজরে আসা। আর্থিক কারণে সেখানে ভর্তি হতে না পারলেও খুলনা বিভাগীয় দলে সুযোগ পান। ২০১৯ সালে জায়গা করে নেন অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের ক্যাম্পে। খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপেও। ওই আসরে বল হাতে দলের সেরা পারফর্মার ছিলেন তিনি।  

লিকলিকে পাতলা দেহের গঠন আর চেহারায় কৈশোরের ছাপ। এ বয়সেই নারী ক্রিকেট দুনিয়ায় ঝড় তুলেছেন মারুফা। তাঁর বোলিং অ্যাকশন আর ঝোড়ো গতি ব্যাটারদের কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে ভারত বধের যে ইতিহাস রচিত হয়েছে, তাঁর পাতা সুসজ্জিত করেছেন তিনি ৭ ওভারে ২৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে। তাঁর ক্যারিশমাটিক বোলিংয়ে মুগ্ধ বিশ্ব। তাই তো ২১ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে ভারতের সহ-অধিনায়ক স্মৃতি মান্ধানা গাইতে বাধ্য হন মারুফার জয়গান।


মারুফার কাছে আগামীর স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার স্বপ্ন এখন জাতীয় দলের বোলিংয়ে নেতৃত্ব দেওয়া। এই স্বপ্নটা আজকের নয়; সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি। '


মারুফার সাফল্যে এলাকার মানুষ দারুণ খুশি। সংগলশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'গরিব ঘরের সন্তান কিন্ত তাঁর অদম্য ইচ্ছার কারণে এতটা পথ পাড়ি দিতে পেরেছে। ' 

যে স্কুলের ছাত্রী মারুফা, সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাজমুল হক বলেন, 'মেধাবী ছাত্রী, লেখপড়ার পাশাপাশি ক্রিকেটে তাঁর দারুণ আগ্রহ। সে নিজের চেষ্টায় এগিয়ে গেছেন। আমরা তাঁর আরও সাফল্য কামনা করি। '

অদম্য মারুফা শূন্য থেকে শিখরে উঠেছেন। হারিয়ে দিয়েছেন সকল প্রতিবন্ধকতাকে। তাঁর এই ছুটে চলার গল্প রূপকথাকেও হার মানায়, স্বপ্ন দেখায় দেশের নারী ক্রিকেটকেও।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২৩
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।