ইংল্যান্ডের ইতিহাস গড়া রান তাড়া থেমে গেল মাত্র হাত ছোঁয়া দূরত্বে। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম নাটকীয় ও রোমাঞ্চকর ম্যাচে মাত্র ৬ রানে জয় তুলে নিল ভারত, আর তাতেই সিরিজ শেষ হলো ২-২ সমতায়।
মোহাম্মদ সিরাজের অবিশ্বাস্য স্পেল আর ভারতীয় দলের দৃঢ় মানসিকতা বদলে দিল ওভালের দৃশ্যপট, ক্রিকেটজগতে লিখে গেল এক নতুন কিংবদন্তি।
চতুর্থ ইনিংসে ইংল্যান্ডের লক্ষ্য ছিল ৩৭৪ রান — যা হলে সেটি হতো তাদের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সফল রান তাড়া এবং ওভালে সর্বোচ্চ। পঞ্চম দিন শুরুতে ইংল্যান্ডের স্কোর ৩৩৯/৬, জয়ের জন্য প্রয়োজন মাত্র ৩৫ রান, উইকেটে ছিলেন জেমি স্মিথ ও জেমি ওভারটন।
দিনের শুরুতেই প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ প্রথম বলেই চার হজম করেন ওভারটনের কাছে, পরের বলটাও গিয়ে পড়ে বাউন্ডারিতে। ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য তখন প্রয়োজন পড়ে মাত্র ২৭ রান। ওভালজুড়ে তখন উত্তেজনার আগুন।
তখনই ভারতের হয়ে বল হাতে আসেন মোহাম্মদ সিরাজ। প্রথমেই স্মিথকে পরাস্ত করে উইকেটকিপার জুরেলের হাতে ক্যাচ করান। পরের বলেই অ্যাটকিনসন স্লিপে সুযোগ দেন, তবে রাহুলের সামনে বল পড়ে বেঁচে যান তিনি।
ওভারটন এরপর এলবিডব্লিউ হন। প্রথমে তিনি রান নেওয়ার পরও নিশ্চিত ছিলেন রিভিউ বাঁচাবে, কিন্তু ‘অ্যাম্পায়ার্স কল’ তাকে ফিরিয়ে দেয়। ইংল্যান্ড তখনো আশাবাদী, কিন্তু চাপ ক্রমেই বাড়ছিল।
জশ টাং এলবিডব্লিউ থেকে একবার রিভিউতে বেঁচে গেলেও শেষরক্ষা হয়নি — প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ তাকে বোল্ড করেন। ইংল্যান্ড তখনও ১৭ রানে পিছিয়ে, হাতে মাত্র এক উইকেট। এই মুহূর্তেই নাটকীয় মোড় নেয় খেলা।
ক্রিস ওকস, যিনি ডান কাঁধে গুরুতর চোট পেয়ে পুরো ম্যাচে অনুপস্থিত ছিলেন, এক হাতে ব্যাট হাতে নামেন! বাঁ হাতে ব্যাট ধরেন, ডান কাঁধে স্লিং। মাঠে নামতেই গ্যালারি জুড়ে হিরোদের মতো অভ্যর্থনা পান।
অ্যাটকিনসন এরপর সিরাজকে ছক্কা হাঁকান, পরের বলে উইকেটকিপারের মিসে ওকস এক বাই রান নেন, স্ট্রাইক ফিরে আসে অ্যাটকিনসনের কাছে।
পরের ওভারে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণর বলে আরও ৩ রান আসে — একটি দুই রান ও একটি সিঙ্গেল। ইংল্যান্ড তখন জয়ের জন্য চায় মাত্র ৭ রান।
শেষ ওভারে ফের আসেন সিরাজ। অ্যাটকিনসন আবারও বড় শট খেলতে যান, কিন্তু সিরাজের নিখুঁত ইয়র্কার ভেঙে দেয় স্টাম্প, ভেঙে দেয় ইংল্যান্ডের স্বপ্ন। ভারতের খেলোয়াড়রা ছুটে যান উদযাপনে — ওভাল কাঁপে উল্লাসে।
ম্যাচের নায়ক নিঃসন্দেহে মোহাম্মদ সিরাজ। বল হাতে ইনিংসে নিয়েছেন ৫ উইকেট। ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে বল হাতে অসাধারণ স্পেল, শেষ ওভারে নিজের হাতেই ভারতের জয় নিশ্চিত করেন।
ম্যাচ শেষে প্রথমেই ভারতীয় খেলোয়াড়রা ছুটে যান আহত ওকসের কাছে। যিনি এক হাতে মাঠে নেমে শুধু তার দল নয়, গোটা ক্রিকেট দুনিয়ার ভালোবাসা কুড়িয়েছেন। এরপর ভারতীয় দল পুরো মাঠ ঘুরে ল্যাপ অফ অনার দেয়, ভক্তদের সঙ্গে ভাগ করে নেয় এই ঐতিহাসিক জয়।
স্কোরকার্ড (ওভাল টেস্ট, পঞ্চম টেস্ট)
ভারত:
১ম ইনিংস – ২২৪ রান (কারুণ নায়ার ৫৭; অ্যাটকিনসন ৫/৩৩, টাং ৩/৫৭)
২য় ইনিংস – ৩৯৬ রান (যশস্বী জয়সওয়াল ১১৮; টাং ৫/১২৫)ইংল্যান্ড:
১ম ইনিংস – ২৪৭ রান (জ্যাক ক্রাউলি ৬৪; প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ৪/৬২, সিরাজ ৪/৮৬)
২য় ইনিংস – ৩৬৭ রান (হ্যারি ব্রুক ১১১, জো রুট ১০৫; মোহাম্মদ সিরাজ ৫/১০৪)ভারত জয় পেল ৬ রানে
সিরিজ সমতা ২–২
এমএইচএম