এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই বাড়তি উত্তেজনা। তবে ২০২৫ সালের এই লড়াই ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রে শুধু ক্রিকেট নয়, বরং চারদিনের সাম্প্রতিক যুদ্ধের পর দুই দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্তাপও।
রোববার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে দুই দল। মে মাসের সংঘাত শেষ হলেও যুদ্ধোত্তর তিক্ততা এখনো কাটেনি। আন্তর্জাতিকভাবে মধ্যস্থতা করে যুদ্ধ এড়ানো হলেও সম্পর্কের ভাঙন রয়ে গেছে।
ভারতের ক্রীড়া সাংবাদিক কুদিপ লাল কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেন, ‘এই ম্যাচ নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই ভারতীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা মনে করেন, দুই দেশের সম্পর্ক এতটা সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকা অবস্থায় ক্রিকেট খেলা উচিত নয়। এটি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের সবচেয়ে খারাপ সময়। ’
লালের মতে, সমালোচনার মূল কেন্দ্র ভারতের ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। তিনি বলেন, ‘যদি কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত থাকে, ভিসা না দেওয়া হয়, পাকিস্তানিদের ফেরত পাঠানো হয়, তবে যুদ্ধোত্তর সময়ে কেবল অর্থ উপার্জনের জন্য কেন এই ম্যাচ আয়োজন করা হচ্ছে?’
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ম্যাচে ভারত হেরে গেলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। অতীতে পরাজয়ের পর খেলোয়াড়দের বাড়ি ভাঙচুর, পরিবারের ওপর হামকি, রাস্তায় কুশপুতুল পোড়ানো—সবই ঘটেছে।
অতীতের বন্ধুত্বপূর্ণ আবহ, কিন্তু এবার ভিন্ন চিত্র
রাজনৈতিক অচলাবস্থার মাঝেও অতীতে ভারত ও পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ মুহূর্ত দেখা গেছে। যেমন ২০২৩ সালের এশিয়া কাপে কোহলি-শাদাবের ‘ব্রোম্যান্স’ বা শাহীন আফ্রিদির হাতে বুমরাহর সন্তানের জন্য উপহার।
তবে এবার এমন উষ্ণতা আশা করছেন না বিশেষজ্ঞরা। সাবেক আইসিসি কর্মকর্তা সামি উল হাসান বলেন, ‘আগের মতো বন্ধুত্ব এবার দেখা যাবে না। ছোট্ট একটি পদক্ষেপও ভক্তদের উত্তেজিত করতে পারে। ’
তিনি মনে করিয়ে দেন, ২০২১ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের জয়ের পর কোহলি, বাবর আজম ও রিজওয়ানের হাসিখুশি আলাপের দৃশ্য—যা এবার আর সম্ভব নয়।
ক্রিকেট ও রাজনীতি একসূত্রে
হাসান বলেন, খেলোয়াড়রা রাজনৈতিক প্রশ্ন এড়িয়ে যাবেন, কারণ তারা কূটনীতিক ব্যক্তিত্ব নন। তবে বাস্তবে খেলাধুলা আর রাজনীতি আলাদা রাখা কঠিন।
অন্যদিকে পাকিস্তানি ভক্ত আসাদ খান মনে করেন, ‘রাজনীতি ক্রিকেটে টেনে আনা উচিত নয়। ক্রিকেট বরং সম্পর্ক হালকা করে। দর্শকদেরও রাজনৈতিক বা ধর্মীয় স্লোগান না তুলে শুধু খেলা উপভোগ করা উচিত। ’
অন্য এক ভক্ত আলি বলেন, ‘ক্রিকেটারদের কেন সীমান্তে চার মাস আগে যা হয়েছে তা নিয়ে ভাবতে হবে? তারা খেলোয়াড়, তাদের কাজ শুধু খেলা। ’
তবে বিশ্লেষক কুদিপ লাল মনে করেন, খেলোয়াড়রা মাঠে নামলেই সংঘাতের ছায়া তাদের মনে থাকবে।
আগামীকাল রোববার রাতে দুবাইয়ের ‘রিং অব ফায়ার’ স্টেডিয়ামে তাই শুধু ক্রিকেট নয়, দশকজুড়ে জমে থাকা বৈরিতা নতুন করে উত্তেজনার আগুন জ্বালাতে পারে।
এমএইচএম