ক্রিকেট কুইজে প্রশ্নটা থাকলে তার নামটাও থাকবে। আর সেটা ভেবেই তিনি বেশি আনন্দিত এবং গর্বিত।
ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বোলারদের একেবারে ‘শ্রমিক’-র পর্যায়ে নামিয়ে আনা হচ্ছে। এসো, ক্রিকেট নামক ব্যাটসম্যানদের খেলাটায় তোমরা কিছু শ্রম দিয়ে যাও! এবং বোলাররা দিয়ে যাচ্ছেন! এরচেয়ে বেশি কিছু কি দেখা যাচ্ছে?’ বেদনার মিউজিকটাই যেন বেজে উঠলো ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম হ্যাটট্রিক করা বোলারের মনে। তারপর হঠাৎ যেন সেই মিউজিকের বিট পাল্টে গেলো। দুঃখ নয়, হতাশা নয়, রীতিমতো ক্ষুব্ধ তিনি। আর সেই ক্ষোভ উগরে দিলেন আইসিসি’র দিকে। ‘ ক্রিকেটের সবোর্চ্চ সংস্থা খেলাটাকে হাস্যকর পর্যায়ে নামিয়ে আনছে! ক্রিকেটকে ব্যাটসম্যান গেম বানিয়ে ফেললো! অথচ এর বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলছেন না! মুখ খুলছেন না! আমি বুঝে উঠতে পারছি না, বোলারার-ই বা কেন স্বোচ্চার হচ্ছে না!’
ইডেন পার্কে পাকিস্তান -সাউথ আফ্রিকা ম্যাচে বোলারদের দাপট দেখতে দেখতে বলছিলেন এ সাবেক পেসার। বিশ্বকাপে এসেছেন ক্রিকেট লিখিয়ে হিসেবে। লিখছেন পাকিস্তানের একটা কাগজে। তবে তার সেই লেখক সত্ত্বাকে দূরে ঠেলে রেখে সাবেক সেই পাকিস্তানি পেসারকে একটু খুঁজে দেখার চেষ্টা করলাম। এবং তিনি সাড়া দিলেন। স্মৃতির পাতা উল্টাতে শুরু করলেন। উপর ওয়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন পাকিস্তানের হয়ে গোটা কয়েক ওয়ানডে আর টেস্ট খেলা এ বোলার। তবে হাসতে হাসতে বললেন,‘আমি কৃতজ্ঞ আরো একজনের প্রতি। ইমরান খান। ’৮২-তে তিনি-ই পাকিস্তান দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে আমি স্কোয়াডে ছিলাম না। কিন্তু ইমরান ইংল্যান্ড থেকে একটু দেরি করে ফিরেছিল। সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের গরমের সঙ্গে ঠিক মানিয়ে নিতে পারিছল না।
তাই নিজেই সরে দাঁড়ালো হায়দ্রাবাদের সেই ওয়ানডে থেকে। ওর জায়গায় আমি দলে ডাক পেলাম। তার আগে অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আমি একটা সাইড ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েছিলাম। যে কারণে সুযোগটা আমার সামনে এসে গেলো। এবং আমার মনে হয়, আমি সেটা ভালভাবেই কাজে লাগিয়েছিলাম। ওই ম্যাচেই হ্যাটট্রিকসহ চার উইকেট নিলাম। তারপর সিরিজের বাকি দুটো ওয়ানডে খেলাম। খেললাম টেস্টও। ’ হ্যাটট্রিকের কথাটা উঠতেই যথেষ্ট উজ্জ্বল হয়ে উঠলো জালাল উদ্দিনের মুখটা। এবং সেটা খুব স্বাভাবিক। ‘সত্তরের দশকের গোড়ায় ওয়ানডে ক্রিকেট শুরু হলেও প্রায় এক যুগ পর প্রথম হ্যাটট্রিকটা আমি করেছিলাম। এরপর অনেক হ্যাটট্রিকতো নিজেই দেখলাম। ’
জালাল উদ্দিনকে থামিয়ে প্রশ্নটা করার লোভ সামলাতে পারলাম না। তাই জানতে চাওয়া, আপনারটা বাদ দিলে কোন হ্যাটট্রিকটা আপনার মনে বেশি দাগ কেটেছে? ‘ওয়াসিম! শারজায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়াসিম আকরামের হ্যাটট্রিকটা। হ্যাটট্রিকের পর ওকে অসম্ভব উত্তেজিত এবং উচ্ছ্বসিত মনে হচ্ছিলো! কেন যেন ওরকম কোন অনুভূতি আমার ভেতর কাজ করেনি!’-- বলছিলেন ডান হাতি এ সাবেক পেসার। তবে ফ্ল্যাশব্যাকে সেই হ্যাটট্রিকের প্রায় ফ্রেম টু ফ্রেম বর্ণনা করে গেলেন জালালউদ্দিন।
‘হ্যাটট্রিকের আগে আমি অ্যালেন বোর্ডারের উইকেট নিয়েছিলাম। কিন্তু হ্যাটট্রিকের প্রথম উইকেট ছিল রডনি মার্শের। বোল্ড! গুড লেংথ বল ছিল। একটু ভেতরে এসেছিল। মার্শ আড়াআড়ি ব্যাটে খেলতে গিয়েছিলেন। এবং বোল্ড। বল স্টাম্পের বেল তুলে নিয়ে যায়। অলরাউন্ডার ব্রুস ইয়ার্ডলি অবশ্য ক্যাচ দিয়েছিলেন উইকেটের পেছনে। অফ স্টাম্পের একটু বাইরের বল। কিছুটা ওভার পিচড। ও ড্রাইভ করতে গিয়েছিল। বল তার ব্যাটে লেগে উইকেটের পেছনে চলে যায়। ওয়াসিম বারী সেটা গ্লাভসে নিতে কোনো ভুল করেনি। তারপরের বলে জেফ লসনকে বোল্ড করলাম। এটাও অফ স্টাম্পে বাইরে পিসড করেছিল। হালকা ভেতরে এসেছিল। লসন ডিফেন্স করতে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যাট আর প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড হয়েছিলেন। সেই লসন পরে আমাদের পাকিস্তান দলের কোচ হয়েছিলেন। ’
সাদা পোশাকে লাল বলে করা তার সেই হ্যাটট্রিকের ভিডিও ক্লিপস দেখেছেন তিনি একাধিকবার। দেখে খানিকটা স্মৃতিকাতরও হয়ে পড়েন। কিন্তু এতো বছর পর তার মনে হয়, ‘আইসিসির উচিত, প্রাক প্রযুক্তি আর প্রযুক্তির জমানার মধ্যে একটা বিভাজন রেখা টেনে দেয়া। তা না হলে একজনের সঙ্গে আরেক জনকে যেভাবে তুলনা করা হচ্ছে, তাতে সবার যোগ্য মূল্যায়ন হয় না। আসলে ক্রিকেটে তুলনা করাই ঠিক না। তারপরও যদি করতে হয়, একটা সময়ের সীমারেখা থাকা উচিত সেখানে। কারণ, এখন খেলাটা অনেক বেশি প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে গেছে।
প্রত্যেক ক্রিকেটারের শক্তি আর দুর্বলতার দিকটা বহুভাবে কাঁটা ছেড়া করা হচ্ছে। যেটা হয়তো আমাদের সময় ছিল না। তবে যাই হোক আমার ভাল লাগে আমি বলতে পারছি যে যাই করো ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম হ্যাটট্রিকটা আমি করেছিলাম! সত্যিই ভাবতেও ভাল লাগে। এই যে আপনি আমার সঙ্গে কখা বলছেন, সেটাও হয়তো ওই হ্যাটট্রিকটার কারণে। ’ কিন্তু সেই জালালউদ্দিনের ওয়ানডে ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে পাকিস্তানের পক্ষে মাত্র ৮টা ম্যাচ খেলে! আর টেস্ট খেলেছেন ৬টি। ক্যারিয়ারের আয়ু কেন এতো সল্প হলো? প্রশ্নটা শুনে একটু যেন বিষন্নতা ভর করলো জালালউদ্দিনের চোখে মুখে! সেটা সামলে উঠে বললেন, ‘নির্বাচকরা আর দলে নিলেন না! নির্বাচকদের কথা বলছি কেন! ইমরান আর দলে নিলো না! সে সময় ইমরান শুধু পাকিস্তানের অধিনায়ক ছিল তা নয়। সে-ই ছিলো দলের প্রথম আর শেষ কথা!’ সেই ইমরান খানের সঙ্গে সম্পর্কটা খারাপ হলো কিভাবে? এ প্রশ্নের উত্তরটা অবশ্য শেষ করলেন না জালালউদ্দিন!
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩১ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৫
** অনেক নাটক জন্ম দিতে পারে ইডেন পার্ক ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ইয়র্কার এখন বিরল ডেলিভারি!॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** বিশ্বকাপের রান উৎসবে বাংলাদেশও ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** নেলসনে টাইগারদের তিন ‘ল্যান্ড’ হার্ডল ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ইংল্যান্ড পারলে বাংলাদেশ কেন নয়? । । অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** শচীন আছেন শচীন নেই! | অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ব্রিলিয়ান্ট! সুপার! গ্রেট! অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** বাংলাদেশের ব্র্যান্ড সাকিব!|| অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** মিরপুর টেক্কা দিচ্ছে মেলবোর্নকে ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট সংস্কৃতি নিয়ে বাকযুদ্ধ ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** নীল-হলুদ নাকি লাল-সবুজের ঢেউ ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** চোক’ কি ক্রিকেটীয় জোক?। । অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** সাকিব-ই সেরা মানতে অসুবিধা কোথায়!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** বৃষ্টিবিলম্বিত ক্লার্কের ফেরা! না থেকেও আছেন আশরাফুল॥ ব্রিসবেন থেকে অঘোর মন্ডল
** শঙ্কার চোরা স্রোত ব্রিসবেনে॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ম্যাচের নায়করা ছিলেন বাইশ গজের বাইরে। । অঘোর মন্ডল, ক্যানবেরা থেকে
** ‘সি’ ফর ক্রিকেট নাকি সাইক্লোন!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে