এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের প্রত্যাশা কী ছিল? গ্রুপ পর্বের ম্যাচ শেষে সেরা আটটি দলের একটি হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা। এই প্রত্যাশাটুকু পূরণ হবে কি না তাই নিয়ে চলছিল আমাদের যত জল্পনা-কল্পনা।
কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল গতবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত। এবারের বিশ্বকাপেও তারা গ্রুপ পর্যায়ে দুর্দান্ত খেলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। পরিসংখ্যান ও শক্তির দিক দিয়ে ক্রিকেটে ভারত বরাবরই বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে, এবারের কোয়ার্টার ফাইনালেও। তবু নতুনভাবে গর্জে ওঠা বাংলাদেশকে ভারতের পক্ষে খুব একটা সহজভাবে নেবার কোন সুযোগ এবার ছিল না। তাদের সাম্প্রতিক কথা-বার্তা, আচরণেও সেটা বারবার ফুটে উঠেছে।
মেলবোর্ণের ক্রিকেট মাঠে বৃহস্পতিবার কোয়ার্টার ফাইনালে টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছে ভারত। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশও ভারতের রানরেট যাতে সীমার মধ্যে থাকে সেভাবেই খেলছিল। পরিকল্পনামাফিক ভালই খেলছিল বাংলাদেশ। কিন্তু খেলার মাঝপথে এসে পাকিস্তানী আম্পায়ার আলিম দার, বৃটিশ আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড আর টিভি আম্পায়ার স্টিভ ডেভিস যেভাবে নিরপেক্ষতার আবরণে ভারতের পক্ষে দাঁড়ালেন তাতে তরুণ বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মন ভেঙে যেতে বাধ্য। ফলে ফিল্ডিংয়ের শেষদিকে এসে বাংলাদেশ দল অনেকটা খেই হারিয়ে ফেলে যা একটি অপেক্ষাকৃত নতুন, কম অভিজ্ঞ দলের জন্য খুব স্বাভাবিক।
চৌত্রিশতম ওভারে মাশরাফির বলে সুরেশ রায়নার বিরূদ্ধে একটি এলবিডব্লিউ’র সিদ্ধান্ত অন্যায্যভাবে নাকচ করে দেন। আবার রুবেলের বলে নব্বই রানের মাথায় রোহিত শর্মার যখন ঘরে ফেরার পালা, তখন অন্যায়ভাবে বলটিকে নো-বল হিসেবে সঙ্কেত দিয়ে রোহিতকে আরো কিছুক্ষণ রান করবার সুযোগ করে দিয়েছেন আম্পায়াররা। পাশাপাশি আমাদের মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ যখন বল সীমান্তের কাছাকাছি পাঠান, তখন সেই বল ক্যাচ ধরতে গিয়ে ভারতীয় খেলোয়াড়ের পা সীমানা এলাকায় রাখা দড়ি ছুঁলেও ছয়ের পরিবর্তে দেওয়া হয় আউট।
ক্রিকেট দেখি সেই কৈশোর থেকেই, তবে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের মত গুরুত্বপূর্ণ খেলায় এরকম নিম্নমানের আম্পায়ারিং কখনো দেখিনি। ক্রিকেটের ধারাভাষ্যকারসহ প্রাক্তন খেলোয়াড়রা এরইমধ্যে নিম্নমানের আম্পায়ারিং নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে আইসিসি আর আম্পায়ারিংয়ের বিরূদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা, ইচ্ছেমত তুলোধনা করছে বাংলাদেশের সমর্থকরা। ঢাকায় বিতর্কিত এই তিন আম্পায়ারের কুশপুতুল দাহ করা হয়েছে। মাত্র আঠারোটি আন্তর্জাতিক একদিনের খেলায় আম্পায়ারিংয়ের অভিজ্ঞতা থাকা সত্বেও এক আম্পায়ারকে কোয়ার্টার ফাইনালের মত গুরুত্বপূর্ণ খেলায় আম্পায়ারিংয়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে (সুত্র: বাংলানিউজ২৪.কম)। উইকিপিডিয়ার মতে, ইয়ান গোল্ড হলেন ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম নির্লজ্জ এক আম্পায়ার। সুযোগ পেয়ে আইসিসি’র প্রশ্রয় ধন্য এই দুই বৃটিশ ইয়ান গোল্ড আর স্টিভ ডেভিস বাংলাদেশের কাছে ইংল্যা-ের হারের প্রতিশোধও নিয়ে নিলেন!
স্বভাবতই অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছে বিশ্ব ক্রিকেট সংস্থা আইসিসি’র দিকে। ক্রিকেট নয়, বরং বিশ্বকাপ সংক্রান্ত ক্রিকেট বাণিজ্যই কি তবে প্রধান বিবেচ্য আইসিসির কাছে? প্রতিযোগিতা থেকে এত তাড়াতাড়ি ভারতের মত দলের বিদায় হলে শতকোটি ডলারের বিজ্ঞাপন - বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়ে যাবে? আর সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই কি আম্পায়ারদের সহায়তায় আইসিসি ভারতের বিজয়কে নিশ্চিত করল? তবে এভাবে বিজয় অর্জন মনে হয় না ভারতের মত বড় দলের জন্য খুব সন্মানের হল! এমনি ভাল খেলে ভারত জিতত, আমাদের মানতে কোন দুঃখ ছিল না।
কোয়ার্টার ফাইনালে তাই ভারত জিতেছে, তবে বাংলাদেশ হারেনি, হেরেছে স্বয়ং ক্রিকেট খেলাটাই।
পুনশ্চ: কোয়ার্টার ফাইনালের ফলাফল যাই হোক না কেন বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ দলমত নির্বিশেষে তাদের ক্রিকেট দলের পাশে ঐক্যবদ্ধ। আমি নিশ্চিত, এই দলটি দেশে ফিরলে সরকারের সর্ব্বোচ্চ মহল থেকে শুরু করে সবাই তাদের আন্তরিকভাবেই গ্রহণ করবে। বীরের মর্যাদায় তাদের সম্বর্ধনা জানাবে। জয়তু টাইগার্স। তোমাদের নিয়ে আমাদের অনেক অহংকার।
ডঃ আবুল হাসনাৎ মিল্টন: কবি ও চিকিৎসক, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনারত। ই- মেইল: miltonhasnat@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৫