‘ক্ল্যাসিক্যাল ম্যাচ’! নাকি ‘গেম অব দ্য টুর্নামেন্ট’! বিশ্বকাপে ২৬ মার্চ কি দেখতে যাচ্ছে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড? সিডনি যাই দেখুক, বাংলাদেশ তার আর্বিভাব দিবসে শুধু-ই দর্শক! হ্যাঁ, সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ভারতের মুখোমুখি কে হচ্ছে, তা নির্ধারিত হবে স্যার ডনের শহরে অস্ট্রেলিয়া - পাকিস্তান ম্যাচে।
পাকিস্তান জিতে সিডনি গেলে, দুই প্রতিবেশীর লড়াই ক্ল্যাসিক্যাল পর্যায়ে পৌঁছাবে সেটা অনুমান করা যায়।
কিন্তু তার আগে যে ম্যাচটা জিতে ভারত সেমিফাইনালে গেলো তাকে কি বলবেন? বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য! নাকি আম্পয়ারদের আর্শীবাদধন্য ভারতের এমসিজি জয়ের গল্প!
বাংলাদেশের ভাগ্য বিড়ম্বানা আর ভারতের আম্পায়ারদের আর্শীবাদ ধন্য হওয়ার গল্প ছাড়া অন্য কোন ট্যাগ লাগানো যাচ্ছে না ম্যাচটার গায়ে। টস হারা থেকে ম্যাচ হারা, সব জায়গাই বাংলাদেশের ভাগ্য বিড়ম্বনা! টস জিতলে আগে ব্যাট করতো বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে সে কথা জানালেন মাশরাফি বিন মতুর্জা। তাহলে বাংলাদেশের ইনিংসের চেহারাটা অন্যরকম কিছু হতে পারতো।
কিন্তু ক্রিকেট ঈশ্বর তা চাননি। তাই এমসিজিতে আগে ব্যাট করে বড় স্কোর দাঁড় করানোর সুযোগটা পেয়ে গেলো ভারত। স্কোরটা পার করে নিলো তারা তিনশ’র কোটা। ৩০২ অংকটা অনেক বেশি স্বস্তি এনে দিলো ভারতকে। কারণ; এমসিজির ইতিহাসে তিনশ তাড়া করে ম্যাচ জেতার নজির নেই কোন দলের। অতএব বাংলাদেশের ব্যাটসম্যনারা রান তাড়া করতে নামার আগে মানসিকভাবে অনেকটা এগিয়ে থাকলো ভারতীয় বোলাররা। কিন্তু তার আগেই যে ভারতকে এগিয়ে দিলেন আম্পায়াররা!
বাংলাদেশ তিনশ’ রান তাড়া করে এমসিজিতে জিতবে এবং সেমিফাইনাল খেলবে এটা বলার মতো লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু ভারত যে তিনশ’ করলো, তাঁর পেছনে অবদান রাখলেন আম্পায়ার গৌল্ড, আলিমদার আর ডেভিস সেটা বলার লোকের অভার নেই ক্রিকেট গ্রহে।
এবি ডিভিলিয়ার্স থেকে জ্যাক ক্যালিস, অ্যান্ড্রু স্ট্রউস থেকে ডেভিড গাওয়ার, শেন ওয়ার্ন থেকে ভিভিএস লক্ষণ, সবাই স্বীকার করলেন, ভেরি ভেরি স্পেশাল কিছু সিদ্ধান্তে ভারতের ইনিংস তিনশ’ পার হলো!
সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম থেকে টেলিভিশনের টক শো, সব জায়গায় আলোচনার ঝড়! প্রযুক্তির ব্যবহারÑ সেটা কি কোন দলকে বাড়তি সুবিধা দিতে! এমন প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
এবি ডি ভিলিয়ার্স টুইট করেছেন; ‘ক্রিকেট খেলাটা ভদ্রলোকের খেলা হিসেবেই জানতাম। কিন্তু এমসিজিতে কি দেখলাম!’
এমসিজিÑ ক্রিকেটের অনেক প্রথমের স্বাক্ষী। প্রথম টেস্ট এখানে। প্রথম ওয়ানডে ম্যাচও প্রসব করেছিল এমসিজি। বডি লাইন সিরিজে স্যার ডন ব্র্যাডম্যান প্রথম বলে শুন্য করে প্যাভিলিয়নে ফিরেছিলেন এখানে। সেই এমসিজিতে বাংলাদেশ তাদের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল খেললো। এবং খুব বাজেভাবে হারলো!
একটু বোধহয় ভুল বলা হলো। বাজেভাবে হারানো হলো। ভারত যদি তিনশ’ রানের কোটা পেরুতে না পারতো, রেজাল্টটা অন্যরকম হতেই পারতো। কিন্তু হলো না। কারণ; তিন আম্পায়ারের তিন বির্তকিত সিদ্ধান্ত। যা ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিলো। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারটা পেলেন রোহিত শর্মা। ম্যাচের একমাত্র সেঞ্চুরিটা যিনি করলেন, স্কোর কার্ড বলছে তিনি ছাড়া ঐ পুরস্কারের অন্য তেমন কোন জোরালো দাবিদার ছিলেন না। এবং সেটাও ভুল। একজন নয়, দু’জন নয় তিন তিনজন দাবিদার হতে পারেন ঐ একটা পুরস্কারের! কাকে রেখে কাকে দেবেন?
দাবিদার এক. স্টিভ ডেভিস। থার্ড আম্পায়ার। তার অবদান সুরেশ রায়নার ইনিংসটাকে পঞ্চাশ পেরুতে দিলো। মাশরাফির বলে দশ রানেই ফিরতে পারতেন এই বাঁহাতি। এলবিডব্লিউ’র আবেদন করেছিলেন বোলার মাশরাফি। আম্পায়ার সাড়া দিলেন না। তৃতীয় আম্পয়ার ডেভিসের কাছে সিদ্ধান্ত জানানোর ভার দেয়া হলো। তিনি রায়নাকে নট আউট বললেন! যা দেখে ভিভিএস লক্ষণের মতো ভারতের সাবেক তারকা ব্যাটসম্যানও বললেন; ‘মাশরাফি আন লাকি!’ স্দ্ধিান্তটা কি হতে পারতো তা কি আর বলার দরকার পড়ে?
দাবিদার দুই. আলিম দার। বিশ্বকাপে প্রায় ঘুমিয়ে থাকা রোহিত শর্মাকে সেঞ্চুরি করে জেগে ওঠার সুযোগ দিলেন! দুর্দান্ত গতির রুবেল হোসেনকে খেলতে হিমশিম খাচ্ছিলেন ভারতের ব্যাটম্যানরা। প্রথম পাঁচ ওভারে তিনি রান দিয়েছিলেন মাত্র ১১! সেই রুবেলের বলে ৯০ রানে ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ দিলেন রোহিত, কিন্তু হাত বাড়িয়ে ‘নো’ বল ডাকলেন আম্পয়ার গৌল্ড। কারণ লেগ আম্পয়ার আলিম দার ইশরারা করলেন বল রোহিতের কোমরের উচ্চতা ছাড়িয়ে গিয়েছিল! কিন্তু বার বার রিপ্লেতে দেখা গেছে; বল হাঁটু ভাঙা অবস্থায়ও রোহিত শর্মার কোমর সমান উচ্চতা অতিক্রম করেনি। সৌভাগ্যবান ব্যাটসম্যানের নাম যদি হয় রোহিত শর্মা, তাহলে দুর্ভাগা বোলার অবশ্যই রুবেল হোসেন। পুরো টুর্নামেন্টে যিনি একশ চল্লিশ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বল করে চমকে দিয়েছেন বিশ্বকে। কিন্তু তাকে চমকে দিলেন আম্পায়ার আলিম দার! ‘নো বল’ ডেকে যিনি জীবন ফিরিয়ে দিলেন রোহিতের। রোহিত এবং রায়না- দুই ‘আর’ মিলে ভারতের রান তোলার গতিকেও দিলেন বাড়িয়ে। ভারত তাই ছড়িয়ে গেলো তিনশ’ রানের সীমানা।
দাবিদার তিন. গৌল্ড। বাংলাদেশ পর পর দুটো উইকেট হারানোর পরও মাহমুদ উল্ল্যাহ যখন সৌম্য সরকারকে সঙ্গে নিয়ে ভালভাবে টেনে নিতে শুরু করলেন বাংলাদেশের ইনিংসকে তখন তাকে আউট ঘোষণা করা হলো শিখর ধাওয়ানের বাউন্ডারি সীমানার দড়ি কাপিয়ে নেওয়া ক্যাচে! যেভাবে তিনি ক্যাচটা নিয়েছেন সেটা যদি বাউন্ডারির সীমানা না ছুঁয়ে নেন তাহলে বলতে হবে অসাধারণ। কিন্তু তিনি যখন ক্যাচটা নিলেন, সেই মুর্হুতে তার পা সীমানা স্পর্শ করেছিলো কি না নিশ্চিত করে তা বলা যাচ্ছে না। বার কয়েক রিপ্লে দেখেও বলা কঠিন। সন্দেহ যখন থাকছে সেখানে বেনিফিট অফ ডাউট ব্যাটসম্যানেরই পাওয়ার কথা। কিন্তু আম্পায়ার দিলেন যিনি ক্যাচ নিয়েছেন তাকে! মাহমুদউল্ল্যাহ যে ফর্মে ছিলেন এবারের বিশ্বকাপে তাতে কে বলতে পারেন তার টানা তিন নম্বর সেঞ্চুরিটাও এমসিজিতে ভারতের বিপক্ষেই হতো।
কিন্তু যা হলো তাতে ক্ষোভ-হতাশা সব কিছু বেরিয়ে পড়লো ক্রিকেট গ্রহের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। কিন্তু তারপরও বলতে হবে ভারত এবারের বিশ্বকাপে একমাত্র দল যাদের বোলাররা টানা সাত ম্যাচে প্রতিপক্ষের দশটা করে উইকেট নিয়েছেন। ধোনির দল টানা সাতটা ম্যাচ জিতলো। কিন্তু অষ্টম জয়টা পাওয়া মনে হয় না খুব সহজ হবে। প্রতিপক্ষের নাম অস্ট্রেলিয়া কিংবা পাকিস্তান যাই হোক না কেন!
অধিনায়ক হিসেবে ধোনি যেখানে ওয়ানডেতে শততম জয়ের পতাকা ওড়ালেন সেই এমসিজি-তে বাংলাদেশ খেললো তাদের তিনশতম ওয়ানডে ম্যাচ। সেই ম্যাচটাকে বাংলাদেশ একটু বেশি মনে রাখবে হয়তো তিন আম্পায়ারের কারণে। যারা ক্রিকেট বিশ্বের ধোনী দেশটার পাশে দাঁড়ালেন ধোনির কাপ ধরে রাখার মিশনে!
বাংলাদেশ সময় ২১৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৫