ঢাকা: ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার কোয়ার্টার ফাইনালে বাজে আম্পায়ারিং নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে পুরো বিশ্বজুড়ে। টাইগারদের দমিয়ে দিতে এমন আম্পায়ারিং যেমন ক্ষুব্ধ করেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের, তেমনি বিস্মিত করেছে শেন ওয়ার্ন, ভিভিএস লক্ষ্মণ, শন পোলক, শোয়েব আখতারদের মতো সাবেক তারকা ক্রিকেটারদেরও।
খোদ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার (আইসিসি) সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামালও আম্পায়ারদের বাজে সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। কিন্তু সেই আম্পায়ারদের পক্ষেই বিস্ময়করভাবে সাফাই গাইলেন আইসিসির প্রধান নির্বাহী ডেভিড রিচার্ডসন। এমনকি মোস্তফা কামাল যে বাজে আম্পায়ারিং নিয়ে কথা বলেছেন তা হতাশার বলেও মন্তব্য করেছেন রিচার্ডসন।
শুক্রবার (২০ মার্চ) এক বিবৃতিতে রিচার্ডসন বলেন, ‘আইসিসি মোস্তফা কামালের মন্তব্য সম্পর্কে অবগত হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। তবে এটা তার ব্যক্তিগত অভিমত হতে পারে। কিন্তু সংস্থার সভাপতি হিসেবে আইসিসির ম্যাচ পরিচালনাকারীদের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে তার সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। ’
রুবেলের করা সেই ‘নো’ বলটির ব্যাপারে রিচার্ডসন দাবি করেন, ‘নো-বলের সিদ্ধান্তটা ৫০-৫০ ছিল। ক্রিকেটের স্পিরিট অনুযায়ী আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত এবং এটাকে সম্মান করতে হবে। ’
রিচার্ডসনের এ বিবৃতিতে মূলত আইসিসির মধ্যকার বোঝাপড়ার অভাব ও সমন্বয়হীনতা এবং সংস্থাটিতে ভারতের প্রভাবের বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে গেল।
কোয়ার্টার ফাইনালে রুবেলের করা একটি বল ‘নো’ ডাকায় এবং মাহমদুল্লাহ রিয়াদের হাঁকানো ছক্কাকে শিখর ধাওয়ানের ক্যাচ বানানো নিয়েই এ তুমুল বিতর্ক।
মেলবোর্নে বৃহস্পতিবারের (১৯ মার্চ) দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে রুবেল হোসেনের ওই ফুলটস ডেলিভারি রোহিত শর্মা পুল করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকা ফিল্ডার ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। কিন্তু আউটের সিদ্ধান্ত না দিয়ে পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দারের ইঙ্গিতে ইংলিশ আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড সেটিকে ‘নো’ বল ডেকে বসেন। ওই সিদ্ধান্তই খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ৯০ রানের মাথায় জীবন পেয়ে ২৫ বল থেকে আরও ৪৭ রান যোগ করেন রোহিত।
শুধু ‘নো বল’ বিতর্কই নয়। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময় আরেকটি ভুল সিদ্ধান্ত দেন থার্ড আম্পায়ার। মোহাম্মদ সামির করা ১৭তম ওভারের চতুর্থ বলে রিয়াদ সজোরে হাঁকালে বলটি ডিপ ফাইন লেগ দিয়ে প্রায় ছক্কা হতে যাচ্ছিল, কিন্তু শিখর ধাওয়ান সেটি লুফে নিয়ে বুনো উল্লাস করতে থাকেন। যেহেতু বলটি একেবারে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েছে সেহেতু শিখরের পা বাউন্ডারি লাইন ছুঁয়েছে কিনা তা দেখতে আম্পায়াররা দায়সারাভাবে রিপ্লে দেখেন। ভারতের পক্ষে যায় এমন রিপ্লেগুলো অনেক কাছ থেকে (ক্লোজলি) দেখা হলেও রিয়াদের আউটের রিপ্লেটি মাত্র তিন অ্যাঙ্গেলে এবং অনেক দূর থেকে দেখেই সিদ্ধান্ত দিয়ে দেন ইংলিশ থার্ড আম্পায়ার স্টিভ ডেভিস।
বাজে আম্পায়ারিং নিয়ে ম্যাচ শেষে টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা এক লাইনেই বুঝিয়ে দেন হতাশার কথা। খেলা শেষে তিনি বলেন, ‘মাঠে কী হয়েছে সবাই তা দেখেছে। ’
আম্পায়ারিং নিয়ে আইসিসি সভাপতি মোস্তফা কামালও হতাশা ব্যক্ত করেন। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘আম্পায়ারিংয়ে পক্ষপাতিত্বের বিষয়টি আইসিসির পরবর্তী বোর্ড সভায় তুলে ধরা হবে এবং আম্পায়াররা ইচ্ছাকৃতভাবে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন কিনা তা আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী খতিয়ে দেখা হবে। ’
দরকার হলে বাজে আম্পায়ারিংয়ের প্রতিবাদে পদত্যাগ করবেন বলেও হুমকি দেন আইসিসি সভাপতি।
বাজে আম্পায়ারিংয়ের শিকার হয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে মোড়ল ভারতের কাছে ১০৯ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০১ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৫