ঢাকা: শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট পাওয়া কিউইদের প্রতিপক্ষ কারা হচ্ছে? অপর স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া? নাকি বিতর্কিত ভূমিকার কারণে ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল’ তকমা কুড়োনো আইসিসি!
২৬ মার্চ সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ ভারত (ইন্ডিয়া) হলেও ক্রিকেটপ্রেমীরা এখন আর ভারতকে প্রচলিত নামে ডাকতে রাজি নন। তাই ভারতের নাম তারা দিয়েছেন ‘আইসিসি টিম’।
ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে এই নিয়ে প্রচার-প্রচারণা আর ব্যঙ্গ বিদ্রুপের হাট বসেছে যেনো। উদীয়মান ক্রিকেট শক্তি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ক্রিকেট জায়ান্ট ভারতের ‘বিতর্কিত’ জয়ই যে গণমানুষের এমন আক্ষেপ আর বিদ্রুপের কারণ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
গত ১৯ মার্চ টাইগারদের বিপক্ষে ওই ম্যাচের পর ক্রিকেট ভক্তরাই আইসিসির নামকরণ করেন ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল’। হবে না কেন, ম্যাচে টাইগারদের হারিয়ে দিতে আইসিসির পাশাপাশি ভূমিকা রাখেন আম্পায়াররাও। আর গ্যালারিতে উপস্থিত টাইগার সমর্থকদের হাতে আইসিসির পুরো নাম ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল’ সংবলিত পোস্টারও দেখা যায়।
কোর্য়াটার ফাইনালে ভারতের কাছে ১০৯ রানে হারে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে আম্পায়ারদের বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে যায়। রুবেলের ছোড়া ফুল টস বলটি নো-বলের সিদ্ধান্তের পর মাহমুদুল্লাহর শটটি ক্যাচ সিদ্ধান্ত দিয়ে আইসিসি মূলত ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। আর আইসিসি যে ভারতের জন্যই বিজয়ের মঞ্চ তৈরি করে রেখেছিল তা ম্যাচ শুরুর পরই বোঝা যায়।
বিষয়গুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাবেক ক্রিকেট লিজেন্ডদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তা সহজেই নজরে আসে বিশ্বব্যাপী ক্রিকেট ভক্তদের। এসব সিদ্ধান্ত ভুল ছিল লিখে অনেক ক্রিকেট লিজেন্ড টুইট করে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ম্যাচ শেষে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন আইসিসি সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালও।
এরপরই আইসিসির নাম ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের পরিবর্তে ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল’ নামকরণ করেন টাইগার সমর্থকরা। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে আইসিসির নতুন এ নাম নিয়ে চলে ব্যাপক প্রচারণা। শুধু তাই নয়, আইসিসি বলতে এখন অনেকেই বোঝেন ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল’।
এদিকে, ‘চোরের মায়ের বড় গলা’র মতো ম্যাচের পরদিন আম্পায়ারদের পক্ষেই সাফাই গেয়ে বিবৃতি দেয় আইসিসি। ‘খেলায় আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত’ উল্লেখ করে মাঠের দুই আম্পায়ার আলিমদার ও ইয়ান গোল্ডকে সম্পূর্ণ সমর্থনের কথা জানান আইসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেভিড রিচার্ডসন।
তবে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তটি (নো-বলে) আম্পায়ারদের ‘ফিফটি-ফিফটি কল’ ছিল উল্লেখ করলেও এর কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। বরং আম্পায়াদের সিদ্ধান্ত ঠিকই ছিল বলে উল্লেখ করে আইসিসি।
বিশ্বকাপের এবারের আসরে বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামছে ভারত। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় ম্যাচটি শুরু হবে। ম্যাচটিকে এগারোতম বিশ্বকাপের ‘গেম অব দ্য টুর্নামেন্ট’ বলা হচ্ছে।
টাইগারদের ওপর ‘প্রভাব’ বিস্তার করে সহজেই জয় তুলে নেয় ভারত। আয়োজক দেশ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কী একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে তারা। ঘটনা যদি এমন হয় তবে আইসিসির নতুন নাম ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল’ কেন হবে না!
তবে আইসিসি বা আর কারো ঘাড়েই ভর করে সিডনিতে যে সহজে সেমিফাইনালের বৈতরণী পাওয়া হওয়া সহজ হবে না এ মাঠের পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ। ৩৫ বছরের ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে এই মাঠে কেবল একটাই জয় পেয়েছিলো ভারত। আর সেটা লিটল মাস্টার শচীনের শতকে ভর করে ২০০৮ সালে। আর বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে কখনোই হারেনি অস্ট্রেলিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০১ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৫