ঢাকা: আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই নামবে একাদশ বিশ্বকাপের পর্দা। ইতোমধ্যে ফাইনাল নিশ্চিত করা অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড আগামীকাল মেলর্বোন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ খেলতে পরস্পরের মুখোমুখি হবে।
ক্রিকেট ম্যাচে যে কোন দলের জয়ের পছেনে যে ক্রিকেটার সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে তাকে দেয়া হয় ম্যাচ সেরার পুরস্কার। কারণ ম্যাচ জয়ের মূল নায়কই থাকেন তিনি। আর অন্য যে কোন ম্যাচ থেকে বিশ্বকাপ ফাইনালের ম্যাচ সেরা হওয়ার কৃতিত্বটা অনেকাংশে বেশি। যা সমর্থকরা সব সময় মনে রাখেন।
নিচে পাঠকদের জন্য গত ১০টি বিশ্বকাপ ফাইনালের যারা ম্যাচ সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন তাদের পরিচিতি তুলে ধরা হলো।
১৯৭৫: ক্লাইভ লয়েড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ (১০২ রান)
প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে দুই শক্তিশালী দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়া। তবে অজিদের ১৭ রানে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় ক্যারিবীরা। আর দলের এমন জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড। তার ১২ চার ও দুই ছয়ে ১০২ রানের ইনিংসটিই মূলত দু’দলের পার্থক্য গড়ে দেয়। ক্যারিবীয়রা প্রথমে ব্যাট করে ২৯১ রান করেছিল।
১৯৭৯: ভিভ রিচার্ডস, ওয়েস্ট ইন্ডিজ (১৩৮* রান)
দ্বিতীয় বিশ্বকাপের ফাইনালে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড। তবে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২৮৬ রানের বড় স্কোর গড়ে ক্যারিবীয়রা। আর দলের এ বড় সংগ্রহে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন মারকুটে ব্যাটসম্যান ভিভ রিচার্ডস। তিনি ১৫৭ বলে ১৩৮ রানের অসাধারণ একটি ইনিংস খেলেন। পরে ব্যাটিংয়ে নামা ইংলিশরা শুরুতে ভালো করলেও শেষে ৯২ রানে ম্যাচটি হারে।
১৯৮৩: মহিন্দর অমরনাথ, ভারত (১২ রানে তিন উইকেট ও ২৬ রান)
টানা তৃতীয় শিরোপা জয়ের লক্ষে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে মুখোমুখি হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। তবে ক্যারিবীয় বোলারদের দাপটে মাত্র ১৮৩ রানেই গুটিয়ে যায় ভারত। দলের হয়ে ২৬ রান করেন অমরনাথ আর সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেন শ্রীকান্ত। তবে পরে ব্যাটিংয়ে নেমে বিপদেই পড়ে যায় ক্লাইভ লয়েডরা।
ভারতীয় বোলারদের আগুন ঝড়া বোলিংয়ে ১৪০ রানেই নিজেদের সবকটি উইকেট হারিয়ে ফেলে আগের বারের চ্যাম্পিয়নরা। দলের ব্যাটিংয়ে কার্যকরী রান করা অমরনাথ পরে মাত্র ১২ রানের বিনিময়ে তিন উইকেট নিয়ে হন ম্যাচ সেরা। ক্যারিবীয়রা ৪৩ রানে ম্যাচটি হারে।
১৯৮৭: ডেভিড বুন, অস্ট্রেলিয়া (৭৫ রান)
ইডেন গার্ডেনের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে মাত্র সাত রানে হারিয়ে প্রথমবারের মত শিরোপা জয় করে অস্ট্রেলিয়া। প্রথমে ব্যাট করা অজিরা ডেভিড বুনের ম্যাচ সেরা ৭৫ রানের উপর ভর করে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে ২৫৩ রান তোলে। তবে শুরুটা ভালো করলেও শিরোপা বঞ্চিত থেকেই মাঠ ছাড়ে ইংল্যান্ড।
১৯৯২: ওয়াসিম আকরাম, পাকিস্তান (৩৩ রান ও ৪৯ রানে তিন উইকেট)
৮৭’র বিশ্বকাপে জয়ের খুব কাছে গিয়ে হারা ইংল্যান্ড পরবর্তী ফাইনালে মেলর্বোনে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়। প্রথমে ব্যাট করা ইমরান খানের পাকিস্তান ছয় উইকেট হারিয়ে ২৪৯ রান তোলে। দলের হয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেন ওয়াসিম আকরাম। সর্বোচ্চ ৭২ রান এসেছিল মঈন খানের ব্যাট থেকে।
তবে পরে ব্যাট করা ইংলিশদের ব্যাটিংয়ে ধ্বস নামান ওয়াসিম। তার ৪৯ রানের বিনিময়ে তিন উইকেটই ইংলিশদের ২২ রানে হারায়। আর চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করে পাকিস্তান।
১৯৯৬: অরবিন্দ ডি সিলভা, শ্রীলঙ্কা (১০৭* রান ও ৪২ রানে তিন উইকেট।
প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয় ফেভারিট অস্ট্রেলিয়া। তবে প্রথমে ব্যাট করা অজিদের ২৪১ রানের জবাবে মাত্র তিন উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যাওয়া লঙ্কানরা চমক সৃষ্টি করে। আর এ জয়ে সবেচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন ডি সিলভা। তিনি প্রথমে বোলিং করে তিন উইকেট আর পরে ব্যাটিংয়ে অপরাজিত থেকে ১০৭ রান করেন।
১৯৯৯: শেন ওয়ার্ন, অস্ট্রেলিয়া (৩৩ রানে চার উইকেট)
৯৯’র ফাইনালে মুখোমুখি হয় সাবেক দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান। তবে প্রথমে ব্যাট করা পাকিস্তান শেন ওয়ার্নের ঘূর্ণিতে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে। কোন ব্যাটসম্যানই ২৫ রানের বেশী করতে না পারায় পাকিস্তান মাত্র ১৩২ রানেই নিজেদের সবকটি উইকেট হারায়। পরে আট উইকেটের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে অজিরা। ম্যাচ সেরা হন ওয়ার্ন।
২০০৩: রিকি পন্টিং, অস্ট্রেলিয়া(১৪০*)
ভারতকে হারিয়ে তৃতীয় ও টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা উৎযাপন করে অস্ট্রেলিয়া। টসে হেরে অজিরা প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ফাইনালের রেকর্ড ৩৫৯ রান করে। দলের হয়ে ম্যাচ সেরা ১৪০ রান করেন অধিনায়ক রিকি পন্টিং। পরে ভারত ব্যাটিংয়ে নেমে সব উইকেট হারিয়ে ২৩৪ রান করলে ১২৫ রানের বড় জয় পায় অজিরা।
২০০৭: অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (১৪৯ রান)
শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে নিজেদের চতুর্থ ও টানা তৃতীয় শিরোপা জয় করে অস্ট্রেলিয়া। বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে আগে ব্যাট করে গিলক্রিস্টের ব্যাটে ২৮১ রানে পুঁজি পায় দলটি। এ ম্যাচে ফাইনালে রেকর্ড ১০৪ বলে ১৪৯ রান করেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান গিলক্রিস্ট। পরে লঙ্কানদের ইনিংসে আরো একবার বৃষ্টি আসলে টার্গেট দাঁড়ায় ৩৬ ওভারে ২৬৯ রান। তবে ৫৩ রানে জয় পায় অজিরা।
২০১১: মহেন্দ্র সিং ধোনি(৯১* রান)
শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মত শিরোপা জয় করে ভারত। লঙ্কানদের দেয়া ২৭৫ রানে বিশাল টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে অধিনায়ক ধোনির অসাধারণ ব্যাটিংয়ে জয় পায় শচীন টেন্ডুলকাররা। ধোনি শেষ বলে ছক্কা মেরে ১০ বল বাকি থাকতে ভারতের ছয় উইকেটের জয় নিশ্চিত করে। আর ঘরের মাঠে প্রথম কোন দল হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অজর্ন করে ভারত। ধোনি ৯১ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ সেরা হন।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৫