ঢাকা: দুই প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটীয় দ্বৈরথটা নতুন কিছু নয়। তবে, পরিসংখ্যানের দিক থেকে কিউইদের চেয়ে অজিরা ঢের এগিয়ে।
রোববারই (২৯ মার্চ) নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের সুযোগ পাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। একদিকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে কিউইদের সামনে শিরোপা জয়ের হাতছানি। অপরদিকে, বিশ্বকাপ ট্রফি পুনরুদ্ধারের মিশনে নামবে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
বিশ্বকাপ ইতিহাসে দশমবারের মতো মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দু’দল। এর আগে নয়বারের দেখায় ছয়টিতে অজিরা ও বাকি তিন ম্যাচে কিউইরা জয়ী হয়। ওয়ানডে পরিসংখ্যানেও ব্ল্যাক ক্যাপসরা বেশ পিছিয়ে। ১২৬টি ওডিআই ম্যাচের মধ্যে ৮৫ ম্যাচেই হার মানে নিউজিল্যান্ড। জয় মাত্র ৩৫টি। ছয় ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।
বিশ্বকাপ মঞ্চে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড যে ৯টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল তার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হলো:
১৯৮৭ বিশ্বকাপ
এই বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে দু’বার মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। প্রথমটিতে ভারতের নেহরু স্টেডিয়ামে বৃষ্টি হানা দেয়। ম্যাচ কমে দাঁড়ায় ৩০ ওভারে। ওপেনার ডেভিড বুনের ৮৭ ও ডিন জোন্সের ফিফটিতে ভর করে চার উইকেটে ১৯৯ রান করে অস্ট্রেলিয়া।
জবাবে কেন রাদারফোর্ড (৩৭) ও জন রাইট (৪৭) উদ্বোধনী জুটিতে ৮৩ রান করে দুর্দান্ত শুরু এনে দেন। ওয়ানডাউনে নামা মার্টিন ক্রো করেন ৫৮ রান। কিন্তু, ভাগ্য কিউইদের সহায় ছিল না। শেষ ওভারে দরকার ছিল সাত রান। হাতে ছিল চার উইকেট। স্টিভ ওয়াহ দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে ফেরান ইয়ান স্মিথকে। এরপরই রান আউটের ফাঁদে পড়েন মার্টিন স্নেডেন। এর মধ্য দিয়েই তিন রানে ম্যাচ জিতে নেয় অজিরা।
গ্রুপ পর্বের ফিরতি ম্যাচে চন্ডিগড় স্টেডিয়ামে আবারও মুখোমুখি হয় দু’দল। এবারও হতাশায় ডোবে কিউইরা। ১৭ রানের জয় পায় অজিরা। ডিন জোন্সের ফিফটি ও জিওফ মার্শের ১২৬ রানে ভর করে আট উইকেটে ২৫১ তোলে অজিরা।
মার্টিন স্নেডেন ও জন রাইটের ৭২ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপে ভালোই এগোচ্ছিল নিউজিল্যান্ড। স্নেডেন ৩২ রানে বোল্ড হওয়ার পরই মার্টিন ক্রোকে রান আউটের ফাঁদে পেলেন স্টিভ ওয়াহ। অপর প্রান্ত আগলে রাখা রাইট সর্বোচ্চ ৬১ রান করেন। কেন রাদারফোর্ড ৪৪ রানের কার্যকরী ইনিংস খেললেও অপর পাশে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়ায় ২৩৪ রানে গুটিয়ে যায় ব্ল্যাক ক্যাপসরা।
১৯৯২ বিশ্বকাপ
অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে বিশ্বকাপের দুই আয়োজক দেশ মুখোমুখি হয়। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে আগের বিশ্বকাপে দুই ম্যাচে হারের প্রতিশোধ নেয় নিউজিল্যান্ড। মার্টিন ক্রো সামনে থেকে দলকে নেতৃ্ত্ব দেন। তার হার না মানা শতকে ছয় উইকেটে ২৪৮ রান তোলে কিউইরা।
জয়েল লক্ষ্যে খেলতে নেমে কিউই বোলারদের সামনে বাধার দেয়াল হয়ে দাঁড়ান ডেভিড বুন। কিন্তু, তার লড়াকু সেঞ্চুরির পরও হার মানে অস্ট্রেলিয়া। স্টিভ ওয়াহ হিট আউট হওয়ার পর শেষদিকে ১২ রান তুলতেই পাঁচ উইকেট হারালে ২১১ রানেই থেমে যায় অজিদের ইনিংস। ৩৭ রানের জয় পায় স্বাগতিকরা।
১৯৯৬ বিশ্বকাপ
চেন্নাইয়ের চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখেন মার্ক ওয়াহ। তার অনবদ্য শতকে ভর করেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া। প্রথমে ব্যাট করে অধিনায়ক লি জারমনের ৮৯ ও ক্রিস হ্যারিসের অভিষেক সেঞ্চুরিতে ভর করে ২৮৬ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড।
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরতেই মার্ক টেইলরের উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। পরে রিকি পন্টিংয়ের সঙ্গে ৬৫, শেন ওয়ার্নের সঙ্গে ৪৩ ও চতুর্থ উইকেট জুটিয়ে বড় ভাই স্টিভ ওয়াহয়ের সঙ্গে ৮৬ রানের পার্টনারশিপ গড়েন মার্ক ওয়াহ। তিনি ১১০ রান করে ফিরে গেলেও স্টিভের অপরাজিত ৫৯ রানে ১৩ বল বাকি থাকতেই সেমিতে পৌঁছে যায় অজিরা।
১৯৯৯ বিশ্বকাপ
কার্ডিপে অনুষ্ঠিত গ্রুপ পর্বের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে পাঁচ উইকেটে হারায় নিউজিল্যান্ড। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই মার্ক ওয়াহ ও অ্যাডাম গিলক্রিস্টের উইকেট খোয়ালেও রিকি পন্টিং ও ড্যারেন লেম্যানের ৯৪ রানের পার্টনারশিপে ভর করে আট উইকেটে ২১৩ রান তোলে অজিরা। কিউইদের হয়ে জিওফ অ্যালট নেন চার উইকেট।
তুলনামূলক সহজ লক্ষ্য হলেও ৪৯ রান তুলতেই চার উইকেট হারিয়ে বসে ব্ল্যাক ক্যাপসরা। তখনই অজি বোলারদের সামনে চীনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়ান রজার টুসি ও ক্রিস কেয়ার্নস। এ দু’জনের ১৪৮ রানের পার্টনারশিপে ভর করে ২৮ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় কিউইরা।
২০০৩ বিশ্বকাপ
পোর্ট এলিজাবেথে সুপার সিক্সের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে সহজেই পরাজিত করে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া। তবে, কিউই পেসার শেন বোল্ডের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে রীতিমত বিধ্বস্ত হয় অজিরা। ৮৪ রানেই সাত উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন মাইকেল বেভান (৫৬) ও অ্যান্ডি বিকেল (৬৪)। দু’জনের ৯৭ রানের পার্টনারশিপে ভর করে ৯ উইকেটে ২০৮ রান তোলে অজিরা। বোল্ড ২৩ রানের বিনিময়ে নেন ছয় উইকেট।
এ ম্যাচ জিতলেই সেমিফাইনালে উঠতে পারত নিউজিল্যান্ড। কিন্তু, ব্রেট লি ও গ্লেন ম্যাকগ্রার বিধ্বংসী বোলিংয়ে ১১২ রানেই অলআউট হয়ে যায় কিউইরা। সর্বোচ্চ ৪৮ রান করেন অধিনায়ক স্টিফেন ফ্লেমিং। লি পাঁচটি ও ম্যাকগ্রা তিন উইকেট লাভ করেন।
২০০৭ বিশ্বকাপ
এই আসরে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড দু’দলই সেমিফাইনালে উঠে। কিউইরা শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে গেলেও ফাইনাল ম্যাচে লঙ্কানদের হারিয়ে শিরোপা ঘরে তোলে অজিরা।
এর আগে সুপার এইট পর্বে দুর্দান্ত অস্ট্রেলিয়ার সামনে দাঁড়াতেই পারেনি নিউজিল্যান্ড। ঐ ম্যাচে কিউই বোলিংয়ের মূল ভরসা শেন বোল্ড ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি। প্রথমে ব্যাট করে ম্যাথু হেইডেনের শতকে স্কোরবোর্ডে ছয় উইকেট হারিয়ে ৩৪৮ রান জমা করে অজিরা। রিকি পন্টিংয়ের ব্যাট থেকে আসে ৬৬ রান।
ঐ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হ্যামিল্টনে অজিদের বিপক্ষে ৩৪৭ তাড়া করে জয়টিই কিউইদের প্রেরণার উৎস ছিল। কিন্তু, বিশ্বমঞ্চে এসে অজি বোলারদের সামনে খেই হারিয়ে ফেলে ব্ল্যাক ক্যাপসরা। ২৫.৫ ওভারে ১৩৩ রানেই গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। অজিদের হয়ে শন টেইট তিনটি, গ্লেন ম্যাকগ্রা দুটি ও স্পিন বোলার ব্রাড হগ নেন চার উইকেট।
২০১১ বিশ্বকাপ
ভারতের নাগপুরে অনুষ্ঠিত গ্রুপ পর্বের ম্যাচটিতে মিচেল জনসন ও শন টেইটের আগুনজ্বরা বোলিংয়ে ৭৩ রান তুলতেই ছয় উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। পরে নাথান ম্যাককালাম (৫২) ও ড্যানিয়েল ভেট্টোরির (৪৪) দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ২০৬ রানে গিয়ে অলআউট হয় কিউইরা। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেইট তিনটি ও জনসন চার উইকেট দখল করেন।
সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সহজেই জয় পায় অজিরা। শেন ওয়াটসন (৬২) ও ব্রাড হাডিন (৫৫) উদ্বোধনী জুটিয়ে ১৩৩ রান তোলেন। ১৬ ওভার হাতে রেখে সাত উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় পন্টিং-ক্লার্করা।
২০১৫ বিশ্বকাপ
চলমান বিশ্বকাপের ফাইনালে আগামীকাল (২৯ মার্চ) মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। একই গ্রুপে থাকার সুবাদে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দু’দল। অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে লো স্কোরিং ম্যাচ হলেও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতা শেষে এক উইকেটের জয় পায় কিউইরা।
ট্রেন্ট বোল্টের বোলিং তান্ডবে ১৫১ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন ব্রাড হাডিন। ২৭ রানের বিনিময়ে পাঁচ উইকেট দখল করেন বোল্ট। সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুই উইকেটে ৭৮ রান তুলে ফেলে কিউইরা।
এর পরেই শুরু হয় মিচেল স্টার্ক শো। এই বাহাতি বোলারের বিধ্বংসী বোলিংয়ে একসময় হারের শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল ব্ল্যাক ক্যাপসরা। নাটকীয় ম্যাচটিতে ২৪ ওভারের সময় প্যাট কামিন্সের করা প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন ওয়ান ডাউনে নামা কেন উইলিয়ামসন (৪৫)।
বাংলাদেশ সময়: ০৪০১ ঘন্টা, মার্চ ২৯, ২০১৫