ঢাকা: মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ার শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বিশ্বকাপের একাদশতম আসর। সেই সঙ্গে ভাঙলো ক্রিকেটার, দর্শক ও ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মিলন মেলা।
সেই শুরু, এরপর ৪৪ দিনে মাঠে গড়ায় ফাইনালসহ ৪৯টি ম্যাচ। উদ্বোধনী ম্যাচ, একটি কোয়ার্টার ফাইনাল ও একটি সেমিফাইনাল ম্যাচসহ নিউজিল্যান্ডের মাটিতে গড়ায় মোট ২২টি ম্যাচ। ফাইনালসহ বিশ্বকাপের বাকি ২৭টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় অস্ট্রেলিয়ায়।
আগের যে কোনো বিশ্বকাপের চেয়ে এবারের আসরটি অনেক বেশি আলো ছড়িয়েছে। দলীয় সংগ্রহ, চার-ছক্কার ফুলঝুরি কিংবা ব্যক্তিগত অর্জন- সবদিক থেকেই এবারের বিশ্বকাপ যেকোনো বারের চেয়ে রোমাঞ্চ তৈরী করে। রেকর্ডের দিক দিয়েও সবচেয়ে এগিয়ে এবারের আসর। পূর্বের প্রায় সব রেকর্ড ভেঙে দেয় ২০১৫ বিশ্বকাপ।
এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি তিনশোর্ধ ও চারশোর্ধ দলীয় স্কোর হয়। টানা চার ম্যাচে সেঞ্চুরি করে শ্রীলংকান ক্রিকেটার কুমার সাঙ্গাকারা নাম লিখিয়েছেন ইতিহাসের অনন্য চূড়ায়।
বিশ্বকাপের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ানকেও পায় ২০১৫ বিশ্বকাপ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ক্রিস গেইল ২১৫ রানের ইনিংস খেলে বিশ্বকাপকে স্মরনীয় করে রাখেন। শুধু গেইলই নন; ডাবল সেঞ্চুরি করেন কিউই ওপেনার মার্টিন গাপটিল। গেইলকেও ছাড়িয়ে যান এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। গেইলের দল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৬৩ বলে ২৩৭ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন গাপটিল। দুই ডাবল সেঞ্চুরিতে ইতিহাসের পাতায় মোটা দাগেই লেখা থাকবে ২০১৫ বিশ্বকাপ।
মাঠে দর্শকের উপস্থিতি থেকে শুরু করে টেলিভিশনের সামনে দর্শকদের পলকহীন নজর বিবেচনায় ক্রিকেট ইতিহাসে পূর্বের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে এবারের বিশ্বকাপ। প্রতিটি খেলায় মাঠে দর্শকের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, রেডিওতে গভীর মনোযোগে কান পেতে থাকা, পত্রিকার পাতা থেকে বিশ্বকাপের খবর হজম করা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল-এমনকি আইসিসির ওয়েবসাইটেও ঢুঁ মারাসহ সার্বিক বিবেচনায় ক্রিকেটের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল আসর এটি।
এবারের বিশ্বকাপ কাভারে কাজ করেছেন রেকর্ডসংখ্যক ১৪শ’ সাংবাদিক। ২২০টি অঞ্চলে সাতটি ভাষায় খেলা সরাসরি প্রচার করেছে ৪৪টি নিবন্ধিত সম্প্রচারমাধ্যম। ৮০টি অঞ্চলে সরাসরি ধারাবর্ণনা শুনিয়েছে ১০টি নিবন্ধিত বেতারমাধ্যম। এবারের বিশ্বকাপ উপভোগে প্রযুক্তিরও বিস্ময়কর ব্যবহার দেখিয়েছেন ক্রীড়ানুরাগীরা। হিসাব মতে, ক্রিকেটযজ্ঞ চলাকালে বিশ্বকাপ কাভার করা ওয়েবসাইটগুলো পেয়েছে সোয়া ২৬ মিলিয়নেরও বেশি ইউনিক ভিজিটর। অবিশ্বাস্যভাবে পেয়েছে ২২৭ মিলিয়ন পেজ ভিউ।
এমন আলো ঝলমলে বিশ্বকাপকেও শতভাগ সাফল্যমন্ডিত বলা যাচ্ছে না। তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে ভারতের পক্ষে আম্পায়ারদের একচেটিয়া পক্ষপাতিত্ব কলঙ্কের কালো আভা ছড়িয়ে দেয় বিশ্বকাপের গাঁয়ে। বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনটি বড় ধরণের ভুল সিদ্ধান্ত দেন আম্পায়াররা। রুবেল হোসেনের ফুলটস ডেলিভারিতে ডিপ মিড উইকেটে রোহিত শর্মা ক্যাচ আউট হলেও আম্পায়াররা ওয়েস্ট হাইট দেখিয়ে নো-বল ডাকেন। কোটি ক্রিকেটভক্ত সেদিন নির্বাক হয়ে যান আম্পায়ার-কান্ডে।
ম্যাচের ধারাভাষ্যকার থেকে শুরু করে ক্রিকেটের সাবেক সব ক্রিকেটাররা প্রতিবাদ জানায় আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্তের। অথচ সেই দুই ম্যাচের আম্পায়ার আলিম দার ও ইয়ান গোল্ডের পক্ষে সাফাই গায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার (আইসিসি) সিইও ডেভিড রিচার্ডসন। এতে বিতর্ক আরো বাড়ে। ফলে আইসিসি নিরপেক্ষ কী না এবং সঠিক পথে ক্রিকেট পরিচালিত হচ্ছে কী না, এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। অনেক সাফল্যের পথকেও একটি কালিমা কলুষিত করে দিতে পারে-এই বোধোদয় হবে কী আইসিসির? বল-ব্যাটের লড়াই যেমন আন্দোলিত করে ক্রিকেটপ্রেমীদের, তেমনি কোনো দলকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হলে ততটাই আঘাতপ্রাপ্ত হন ক্রিকেভক্তরা। সেই সঙ্গে ক্ষুন্ন হয় ক্রিকেটের ভাবমূর্তিও।
বাংলাদেশ সময় ১৭৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৫