রাতের আকাশে ঝড়-বৃষ্টি। কিন্তু তাতে কি? কলকাতা তারায় ভরা।
আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচটা কলকাতায়। তার আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও হয়ে গেলো সেই কলকাতায়। সেখানে অবশ্য ক্রিকেটের চেয়ে বলিউডের রং-মশলা বেশি ছিল। তারপরও সেখানে কোনো না কোনোভাবে ক্রিকেট কিছুটা ছিল। সাইফ আলী খান অনুষ্ঠানটার সঞ্চালনা করলেন। যতোই তিনি বলিউড তারকা হোন; ক্রিকেট পরিবারের বাইরেও তো নন। বিখ্যাত ক্রিকেটার বাবা মনসুর আলী খান পতৌদির ছেলে তিনি। রক্তে ক্রিকেট। আনুষ্কা শর্মার বলিউডি নাচের সময় টেলিভিশনের পর্দায় কেন বিরাট কোহলির মুখ সেটা বুঝতে বাকি নেই ক্রিকেটবিশ্বের। যেমন সিডনিতে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে বিরাট কোহলির ব্যাটিঙে নামা থেকে শুরু করে তাঁর আউট হওয়া পর্যন্ত বার কয়েক টিভি পর্দায় আনুষ্কা শর্মার মুখ! কারণ, একটাই--ক্রিকেটের সঙ্গে বলিউডের রোমান্টিক সম্পর্ক। আর আইপিএল? এর রসায়ন তো ক্রিকেট আর বলিউড মিলে বিনোদন দেওয়া। তবে হ্যাঁ, আইপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হৃতিক রোশানের নাচ-গান দেখা গেলেও ছিলেন না শাহরুখ খান। অবশ্য ইডেনে উদ্বোধনী ম্যাচে থাকছেন বলিউডের এই বড় তারকা।
আর আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে শাহরুখ খানের কলকাতা নাইট রাইডার্স এবং মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। দুটো দলের প্রস্তুতির খণ্ডচিত্র দেখেও বোঝা গেছে, মাঠে এবং মাঠের বাইরে এটা হবে তারকাযুদ্ধ! মাঠে বাইশ গজের লড়াইটা যদি হয় গৌতম গম্ভীর-রোহিত শর্মা, সুনীল নারাইণ- মালিঙ্গা-সাকিব আল হাসান-কোরি অ্যান্ডারসনদের, তাহলে বাউন্ডারি লাইনের বাইরে লড়াইটা হবে ওয়াসিম আকরাম-জ্যাক ক্যালিস এবং শচীন-রিকি পন্টিংদের মতো সাবেক মহাতারকাদের মধ্যে।
সাবেকরা অবশ্য অন্য ভুমিকায়। কেউ কোচ, কেউ মেন্টর। কিন্তু পুরনো লড়াইটা কি থিতিয়ে যাবে? ইডেনের নেটে ওয়াসিম আকরাম, ক্যালিস, শচীন-পন্টিংদের দেখে মোটেও তা মনে হলো না। রিকি পন্টিং মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের কোচ। শচীন দলটার মেন্টর। ওয়াসিম আকরাম কলকাতা নাইট রাইডার্সের বোলিং কনসালট্যান্ট। জ্যাক ক্যালিস ব্যাটিং কনসালট্যান্ট। ম্যাচের সময় এই মুখগুলোকে হয়তো দেখা যাবে কখনো উল্লসিত, কখনো চিন্তিত, কখনোবা উৎকন্ঠা-জর্জর। কখনো বিষণ্নতায় ভরা মুখগুলো আবার হাসি ছড়াচ্ছে সাফল্যে। কিন্তু জোর দিয়ে বলে দেয়া যায় আর একটা কথা, ম্যাচের সময় টেলিভিশন ক্যামেরা একাধিক বার খুঁজবে গ্যালারিতে শাহরুখ খান-জুহি চাওলা কিংবা মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের মালিক নীতা আম্বানিকে।
মাঠ, মাঠের বাইরে গ্যালারির যদি হয় ঐ চেহারা, তাহলে কমেন্ট্রি বক্সের চেহারাটা কি হতে পারে, সেটা সহজেই আন্দাজ করা যায়। এক ঝাঁক সাবেক তারাকা থাকছেন। তারপরও এবার সেখানেও একটু নতুনত্ব। কমেন্ট্রি বক্সে অনেক নারী ক্রিকেটতারকা থাকছেন এবার। আইপিএলে ধারাভাষ্য দেবেন ইংল্যান্ডের সাবেক ফাস্ট বোলার ঈশা গুহ, ভারতের সাবেক ক্যাপ্টেন অঞ্চুম চোপরা, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক দুই অলরাউন্ডার মেলানি জোন্স এবং লিজা স্টেলকার। আইপিএলের মধ্য দিয়ে কমেন্ট্রি বক্সে ফিরছেন রবি শাশরীও। ভারতীয় দলের টিম ডিরেক্টর হিসেবে যিনি লম্বা একটা সময় পার করলেন। যে কারণে বিশ্বকাপের কমেন্ট্রি বক্সেও তিনি ছিলেন অনুপস্থিত।
তবে হ্যাঁ, এবারের আইপিএলে একজনের উপস্থিতি হতে পারে একটু অন্যভাবে। এতোদিন যিনি ভারতীয় ক্রিকেট তথা বিশ্বক্রিকেটকেও নির্লজ্জভাবে নিজের ইচ্ছায় চালাতে চেয়েছেন সেই এন শ্রী নিবাসন এখন আর ভারতীয় বোর্ডে নেই। যদিও তাঁর অনুগামী আছেন অনেক। তারপরও জগমোহন ডালমিয়া নামের পচাত্তর বছর বয়সী এক ভদ্রলোক ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্টের চেয়ারে আবার ফিরে আসায় শ্রী নিবাসনের ছক উল্টাতে শুরু করেছে। শ্রী নিবাসনবিরোধী লোকজন এখন আইপিএল এবং বিসিসি আইয়ের বিভিন্ন কমিটিতে। তাই শ্রী নিবাসনের চাওয়া-পাওয়া কমতে শুরু করেছে। চেন্নাই সুপার কিংসের মালিককে বিশ্বক্রিকেট কি চোখে দেখে সেটা নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে এই ভদ্রলোক (অন্য কিছু পড়তে পারেন) বাংলাদেশের ক্রিকেট কর্মকর্তা আইসিসি’র সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট আ.হ.ম. মুস্তাফা কামালের সঙ্গে অভদ্রজনোচিত ব্যবহার করেও চুপ থাকতে চাননি। তিনি উদ্যোগী হয়েছিলেন আগামী জুনে ভারতীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর বাতিল করারও। কিন্তু ভারতীয় বোর্ডের সভাপতি জগমোহন ডালমিয়া এবং সচিব অনুরাগ ঠাকুরের দৃঢ় অবস্থানের কারণে শ্রী নিবাসনের সেই উদ্যোগ আপাত সফল হচ্ছে বলে মনে হলো না ভারতীয় ক্রিকেট মহলের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে। সেই সঙ্গে একটা ভবিষৎ আভাসও মিললো, সেপ্টেম্বরে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সাধারণ সভায় নির্ধারণ হতে পারে আইসিসি’র চেয়ারম্যান পদে শ্রীনিবাসনকে ভারত দেখতে চায় কি না!
তবে আপাতত এটুকু বলা যায়, আইপিএলে বড় বড় তারকার মাঝে ‘শ্রীনিবাসন’ নামটাকে এখন সলতে পাকানো প্রদীপ ছাড়া কিছু মনে হচ্ছে না!
বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘণ্টা, ৮ এপ্রিল, ২০১৫
সম্পাদনা: জেএম