ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

দ্বিতীয় টেস্টের আগে স্বস্তিতে বাংলাদেশ

অঘোর মন্ডল, স্পেশালিস্ট স্পোর্টস রাইটার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৫ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৫
দ্বিতীয় টেস্টের আগে স্বস্তিতে বাংলাদেশ ছবি: (ফাইল ফটো)

ঢাকা: স্বস্তি আর অস্বস্তির মাঝখানে কিছু নেই। দ্বিতীয় টেস্টের আগে স্বস্তিতে যদি থাকে বাংলাদেশ, তাহলে অস্বস্তিতে আছে পাকিস্তান।

দু’টো দল একেবারে বিপরীত দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে। বাংলাদেশের স্বস্তির প্রথম কারণ দারুণ সময় পার করছে দলটা। ওয়ানেডে-তে পাকিস্তানকে ‘ধবল ধোলাই’ দেয়ার পর টি-টোয়েন্টি ম্যাচটাও জিতেছে তারা। এরপর খুলনায় প্রথম টেস্টে যে অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ালো, তাতে  ‘আমরাও পারি’ এই আত্মবিশ্বাসটা প্রবলভাবে সঞ্চারিত গোটা দলে। সব মিলিয়ে সুখে, স্বস্তিতে বাংলাদেশ।


বিপরীত চেহারা পাকিস্তান দলে। বাংলাদেশ সফরে এখনো পর্যন্ত কোনো ম্যাচ জিততে পারেনি তারা। খুলনা টেস্টে প্রায় তিনশ রান (২৯৬) লিড নিয়ে দু’দিন সময় হাতে পেয়েও বাংলাদেশকে হারাতে পারলো না তারা। বরং বাংলাদেশ যে দাপটে টেস্টটা শেষ করলো, তাতে পাকিস্তান দলটাকেই বড় অসহায় মনে হলো! প্রথম টেস্ট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক  বলতে বাধ্য হয়েছিলেন;‘ বাংলাদেশ এতো ভাল ক্রিকেট খেললো, যেখানে আমাদের তেমন কিছু করার ছিল না। ’ দ্বিতীয় টেস্টের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান অধিনায়ক অবশ্য বললেন, তাঁদের অনেক কিছু নতুন করে ভাবতে হবে।

হ্যাঁ, বাংলাদেশকে নিয়ে নতুন করেই ভাবতে হচ্ছে পাকিস্তানকে। এই বাংলাদেশ শুধু পাল্টে যাওয়া বা বদলে যাওয়া বাংলাদেশ নয়। ফর্মের শিখরে থাকা বাংলাদেশ! যারা প্রতিপক্ষের ওপর চাপ তৈরি করছে। আবার প্রতিপক্ষের সৃষ্ট চাপ থেকে খুব দাপট দেখিয়ে বেরিয়ে আসছে! দ্বিতীয় টেস্টের আগে সেই বাংলাদেশের প্রশংসা না করে উপায় কি মিসবাহ-উল হকের! আর সেটা করতে অবশ্য কোনো কার্পণ্য করেননি ভদ্রলোক:  ‘আমাদের অনেক কিছু নতুন করে ভাবতে হবে। ’ মিসবাহ এবং পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনার অনেকটা জুড়ে এখন তামিম:  ‘তামিম খুব ভাল ফর্মে আছেন। বলতে পারেন জীবনের সেরা ফর্মে আছে ও। ’ ওয়ানডেতে টানা দুটো সেঞ্চুরি। প্রথম টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি! স্বপ্নের ফর্ম ছাড়া কি! তামিম ফর্মে থাকা মানে প্রতিপক্ষের স্বপ্ন ফিকে হয়ে যাওয়া। তারপরও পাকিস্তানের স্বপ্নের সূর্যটা যাতে ডুবে না যায়, সেজন্য তাঁদের বোলারদের নতুন কিছু করে দেখাতে হবে। তামিমকে খুব তাঁড়াতাড়ি ফেরাতে হবে। এই ইঙ্গিতটা সংবাদ সম্মেলনে দিয়ে গেলেন পাকিস্তান অধিনায়ক। তামিমের পাশাপাশি খুলনা টেস্টে আরো একজন নীরবে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছেন। তিনি তামিমের ওপেনিং পার্টনার ইমরুল কায়েস। মিডিয়ার ফোকাসটা হয়তো সেভাবে তাঁর উপর পড়েনি বা পড়ছে না। কিন্তু তিনি কি পাকিস্তান দলের থিঙ্ক ট্যাঙ্কের ফোকাসের বাইরে থাকতে পারছেন ? মনে হয় না। খুলনা টেস্টের দুই ইনিংসেই ভাল ব্যাট করেছেন এই বাঁহাতি। দ্বিতীয় ইনিংসে তো দেড়শ রানের ইনিংস খেলেছেন। তার আগে একশ ওভারের বেশি কিপিং করেছেন। দ্বিতীয় টেস্টে অবশ্য কিপিংটা তাকে করতে হবে না, এমন আভাস মিলিছে।   কিপিং করার মতো অবস্থায় ফিরিছেন মুশফিক। প্র্যাকটিসও করেছেন।

তবে ম্যাচের আগের দিন পাকিস্তান দল মধ্যদুপুরে যেভাবে প্র্যাকটিস করেছে, তাতে বুঝতে অসুবিধা হয় না, কতোটা মরিয়া তারা নিজেদের ফিরে পেতে। দেশে সমালোচনার ঝড় বইছে। প্রাক্তনরা দল বেঁধে প্রশ্ন তুলছেন, এ কোন পাকিস্তানকে দেখছেন তারা! কেউ কেউ কোচ ওয়াকার ইউনিসের পদত্যাগ দাবি করছেন! সব মিলিয়ে ভয়াবহ চাপে পাকিস্তান। প্রাক্তনরা বুঝতে না চাইলেও, বুঝতে পারছেন মিসবাহ বাংলাদেশ দ্রুততম সময়ে কতোটা উন্নতি করেছে। মানসিকভাবে এই বাংলাদেশ আগের যে কোনো বাংলাদেশ দলের চেয়ে অনেক বেশি শক্ত। এই দলটার বিপক্ষে শুধু ভাল পারফর্ম করলেই জেতা যাবে না। অনেক বেশি ভাল পারফর্ম করতে হবে জিততে হলে। কিন্তু তারুণ্যনির্ভর পাকিস্তান দলটাকে সেই বেনিফিট অফ ডাউট দিতে চাইছেন না সেদেশের প্রাক্তনরা। বরং তারা চাপটা বাড়িয়েই চলেছেন। আর সেই দিক থেকে যথেষ্ট ভাল অবস্থায় বাংলাদেশ। তারা আপাতত পারফরম্যান্স দিয়ে সমালোচকদের মুখ বন্ধ রাখতে পেরেছেন। কিন্তু মুশফিকুর রহিমরাও নিশ্চয়ই জানেন, মুখ খুলতে কতক্ষণ?

ম্যাচের আগের দিন দুটো দলের মনোজগৎ যা-ই হোক, কয়েকটা বিষয়ে তাদের ফোকাস একই জায়গায়। দু’দলের অধিনায়ক-ই মিরপুর স্টেডিয়ামের উইকেট দেখে একটা কথা বললেন;‘ এই উইকেটে রেজাল্ট আসবে। ’ অর্থাৎ ম্যাচে জয়-পরাজয় হবে বলেই ধরে নিচ্ছেন তারা। তবে দুটো দলই চাইচ্ছে জয়। হ্যাঁ, বাংলাদেশও এখন সাহস করে বলতে পারে, ‘এই টেস্ট-টা আমরা জিততে চাই। ’ এই সিরিজের আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা আট টেস্টের আটটিতেই যারা হেরেছিল, খুলনায় প্রথম টেস্টে দুর্দান্ত লড়াই করে তারা ড্র করেছে। ঐ ড্র-টা বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস এতোটাই বাড়িয়ে দিয়েছে, জয়ের কথা তারা ভাবতেই পারে।

তবে জয়ের কথা ভাবা আর ম্যাচ জেতা এক কথা নয়। জিততে হলে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সের গ্রাফটাকে আরো ঊর্ধ্বমুখী করতে হবে। গোটা বিশেক উইকেট তুলে নিতে হবে বাংলাদেশ বোলারদের। কিন্তু দলের মূল স্ট্রাইক বোলার রুবেল হোসেন ছিটকে গেছেন ইনজুরিতে পড়ে। দলের বোলিং কম্বিনেশনে পরিবর্তন হচ্ছে এটা নিশ্চিত। রুবেলের জায়গায় রাজীব না আবুল হোসেন রাজু--কে আসবেন সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। মিরপুরের উইকেটে  বাংলাদেশ এক পেসার নিয়ে খেললেও  অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

তবে টেস্ট ক্রিকেটে অবাক হওয়ার মতো অনেক কিছু আপনি পাবেন, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়। আর তাতে আপনি স্বস্তিবোধ করতে পারেন, আবার চরম অস্বস্তিতেও পড়তে পারেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৫
জেএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।