ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

মুশফিক বাবুর চোখে টাইগার বাহিনী

সাজ্জাদ খান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৫ ঘণ্টা, মে ৯, ২০১৫
মুশফিক বাবুর চোখে টাইগার বাহিনী ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ক্রিকেটার মুশফিকুর রহমান বাবু মনে করেন, দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ দল ভালো ব্যাটিং করে টেস্ট ম্যাচটাকে পঞ্চম দিনে নিয়ে যেতে পারত। মিরপুর টেস্টের চতুর্থ দিনে বাংলাদেশের খেলা দেখতে শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এসেছিলেন সাবেক এই অলরাউন্ডার।



বাংলাদেশের হয়ে ১০টি টেস্ট ও ২৮টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিলেন এই ক্রিকেটার। ২০০৪ সালে দেশের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে ও টেস্ট ম্যাচ খেলেন তিনি। এরপর ইনজুরিতে পড়লে ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন মুশফিক। বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে কর্মরত মুশফিক বাবু।

মিরপুর স্টেডিয়ামে বসে বেশ কিছুক্ষন কথা হয় সাবেক এই ক্রিকেটারের সঙ্গে। বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে কথোপকথনটি বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো: 

বাংলানিউজ: ইতিহাস গড়ে আমরা খুলনায় প্রথম টেস্ট ড্র করলাম। অথচ দ্বিতীয় টেস্টে ৩২৮ রানের হারকে কী বলবেন?

মুশফিকুর: আমরা হয়তো অনেক রানে পিছিয়ে ছিলাম কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে আমরা ভালো ব্যাটিং করতে পারতাম। আপনি যখন পাঁচদিনের ম্যাচ খেলবেন এই সময়গুলোতে ব্যাটিং করতেই হবে। আপনাকে এটাতে অভ্যস্থ হতেই হবে। এটা প্র্যাকটিসের ব্যাপার। অভ্যাস করে ফেলতে পারলে সেটা ক্রিকেটারদের জন্য সুবিধা হবে। প্রতিবারই যদি এমন খেলতে খেলতে আউট হয়ে যান, বাজে বল পিক করে আউট হয়ে যান, সেটা টিমের জন্য প্রেসার, ক্রিকেটারদের নিজের জন্যও প্রেসার। ভবিষ্যতের জন্যও ক্রিকেটারদের প্রেসারে থাকতে হবে। রেজাল্ট পরে, আগে চিন্তা থাকবে আমি নিজে কেমন করে রান করব। কিভাবে উইকেটে টাইমটা পাস করবো।   চারদিন থেকে ম্যাচটা পাঁচ দিনে নিয়ে যাওয়া যায় কিনা। তাছাড়া আমি সহজে উইকেট দিব না বা উইকেটে থাকবো। প্রতিপক্ষকে একটু খাটিয়ে নেই। এ ধরণের মানসিকতা ক্রিকেটারদের মধ্যে তৈরি হলে সেটা দলের জন্য ভালো।

বাংলানিউজ: গতকাল শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে সাকিব আল হাসান বলেছেন, আমরা প্রতিরোধ গড়বো। লাঞ্চ-বিরতির কিছু সময় আগে সাকিব যেমন হাওয়ায় ভাসিয়ে শট খেললেন! তার আউটটি সম্পর্কে কী বলবেন?

মুশফিকুর: বলগুলো আমরা খুব বাজে পিক করেছি। সাকিব আউট হলো লাঞ্চের ২০-২৫ মিনিট আগে। এটা তো, কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডারের কাছ থেকে। তার কাছ থেকে জুনিয়ররা শিখবে। যারা আপকামিং দলে আসছে কিংবা যারা ঘরোয়া লিগে চারদিনের ম্যাচ খেলছে তাদের কাছে সাকিব তো আইডল। লাঞ্চের আগে, টি-ব্রেকের আগে কিংবা খেলা শেষ হওয়ার আগে কোচরাও সবসময় বলেন, এই সময়ে উইকেট দেওয়া যাবে না। ও (সাকিব) হয়তো কনফিডেন্ট ছিল, ছয় মেরে দেবে। আসলে এই সময় ছয় মারলে ম্যাচের ফলাফল তো ঘুরছে না। এভাবে উইকেটগুলো যদি না পড়তো... পাকিস্তান দল কিছুটা হলেও প্রেসারে থাকতো।

বাংলানিউজ: টসে জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিং পাঠানো এবং তাদের ৫৫৭ রানের ইনিংস। তাতে ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে গেল কী না?

মুশফিকুর: প্রথম ওভারেই ইনজুরির কারনে আমরা শাহাদাতকে হারালাম। তারপর আমরা রিভিউ নিয়েছিলাম সেটাও সাকসেসফুল হয় নাই। বড় দুইটা উইকেট ‘নো’ বলের কারণে পাইনি। এই জায়গাগুলোতে আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। টেস্ট ক্রিকেট খেলতে গেলে প্রথম ইনিংস খুব ভাইটাল। প্রথম ইনিংসে বড় একটা রান করতে পারলে ফাইট-ব্যাক করা যায়। যখন আপনি তিনশ’র নিচে রান করবেন, তখন বিপদে পড়ার সম্ভাবনা থাকবেই। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে চাপ থাকবেই। কারন, তখন উইকেট ভেঙে যায়, স্পট বেরিয়ে আসে। বোলাররা ওই স্পটে বল ফেলে।

বাংলানিউজ: পাকিস্তান দলের লেগস্পিনার ইয়াসির শাহ খুব ভালো বল করেছেন। আমাদেরও তো লেগস্পিনার জুবায়ের  ছিল। সেক্ষেত্রে একদশ নির্বাচনে দূর্বলতা ছিল কি না?

মুশফিকুর: আমি যতটুকু জানি, জুবায়ের ইনজুরড। আগে ফিট ছিল। খেলার আগে সে আনফিট হয়ে গেছে। মুশফিকও বললো জুবায়ের বিবেচনায় ছিল। একজন স্পিনার কিংবা একজন সিমারকে দিয়ে হবে না- পাইপ লাইনে অনেক প্লেয়ার থাকতে হবে। মুশফিকের বদলে আরেকটা মুশফিক, কিংবা সাকিবের বদলে সাকিব না হলেও তার কাছাকাছি মানের কেউ থাকতে হবে। প্লেয়ার আমরা যত পাব ততই আমাদের জন্য ব্যাকআপটা ভালো থাকবে। হয়তো, আবুল হোসেনকে খেলাতে পারতো শুভাগত হোমের জায়গায়। শুভাগত হোম দলে কি হিসেবে খেললো সেটাও বোঝা গেল না। ব্যাটসম্যান না বোলার। আমার মনে হয় এই জায়গাগুলোতে কাজ করা দরকার।

বাংলানিউজ: ওয়ানডে ও টেস্ট সিরিজে রনি তালুদার ও লিটন দাশের অভিষেক হলো না। দলে যখন তাদের নেয়া হয় ধরেই নেওয়া হয়েছিল তাদের খেলানো হবে। আসলে উঠতি ক্রিকেটারদের প্রথম সিরিজটিতেই যদি এমন অভিজ্ঞতা হয়-সেটা তাদের ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলতে পারে কী না?

মুশফিকুর: আমার ক্ষেত্রেও এমন হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে আমরা কমনওয়েলথ গেমস খেলতে গেলাম মালয়েশিয়ায়। জাস্ট  ট্যুর করিয়ে নিয়ে আসা  হলো আমাকে, ম্যাচ খেলানো হলো না। মানুষের তো একটা টার্গেট থাকে। নতুন পরিবেশ, নতুন করে উঠতে শেখায়। যেই খেলুক তার একটা টার্গেট থাকে। যে নতুন তার তো লক্ষ্যটা বড় থাকে। আমাকে কিছু একটা করতে হবে...এমন। আমার কাছে মনে হয়, দলে যদি নতুন কাউকে নেওয়া হয় তাকে খেলানো উচিত।

বাংলানিউজ: শেষ টেস্টের হারের প্রভাব ভারতের বিপক্ষে সিরিজে পড়বে কী না?

মুশফিকুর: দেখেন, টেস্টে জিম্বাবুয়ে ছাড়া অন্য কারো বিপক্ষে জয় আশা করা কঠিন। যদিও আমরা এই ম্যাচে মনে করেছিলাম জয়ের জন্য খেলছি। আমার মনে হয় এই ট্যাকটিসে যাওয়াও ভুল ছিল। আমরা এখনো ওই মানের দল হয়ে যাইনি যে, আমাদের ২০টা উইকেট নেওয়ার বোলার আছে। টেস্টে আপনার ২০ উইকেট নিতেই হবে।   আমাদের দলে তো মুরালি-ওয়ার্ন,  ওয়াকার-শোয়েবদের মতো বোলার নেই। এখনো আমাদের ওই সময় আসে নি। টেস্টে পাঁচদিন খেলবো। ‘ড্র’ করবো। যত বেশি ‘ড্র’ করবো, ততই আত্মবিশ্বাস বাড়বে। তারপর একদিন টেস্ট জিতবো। সেক্ষেত্রে ভারত সিরিজে এই পরাজয়ের প্রভাব অতটা পড়বে না। ওয়ানডেতেই আমরা মেইন টিম। আশা করছি ভারতের বিপক্ষে সিরিজে বাংলাদেশ ভালো করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, ০৯ মে ২০১৫
এসকে/এমআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।