ঢাকা: বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দাপুটে সিরিজ জয়ের পেছনে অসাধারণ অবদান রাখেন দলপতি মেহেদি হাসান মিরাজ। তার নেতৃত্বগুণে দলের একতা, স্পিরিট আর ভালো করার ইচ্ছায় সামিল হয়েছিলেন প্রতিটা তরুণ।
ব্যাট-বল দু’টোতেই সফল এই অলরাউন্ডার। সিরিজে সর্বোচ্চ ১৪ উইকেট নিয়েছেন অফস্পিনের ঘূর্ণিতে। ব্যাট হাতে দু’টি ফিফটিসহ ৩৬ গড়ে ১৮০ রান করেছেন এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
সিরিজের কারণে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করা হয়নি। তাই ঢাকায় নেমেই যার যার গ্রামের বাড়িতে ছুটে গেছেন ক্রিকেটাররা। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ এখন অবস্থান করছেন তার গ্রামের বাড়ি খুলনার কাশিপুরে। সেখান থেকেই মুঠোফোনে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন মিরাজ।
সিরিজ জয়ের আনন্দ, অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেন তিনি। পরের বছরে জানুয়ারিতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট। মিরাজ মনে করেন, নিজেদের সেরাটা খেলতে পারলে বিশ্বকাপও জয় করা সম্ভব। সে লক্ষ্যেই পরিকল্পনা সাজাবে তার দল।
অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজের সাক্ষাতকারটি বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
বাংলানিউজ: সিরিজ জয়ের পর অনুভূতি কেমন ছিল?
মিরাজ: খুব ভালো লেগেছে। সবাই অনেক ভালো খেলেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ জেতা অনেক চ্যালেঞ্জের ছিল আমাদের জন্য। সবাই ভালো ক্রিকেট খেলছে তাই সম্ভব হয়েছে।
বাংলানিউজ: অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন দলকে তাদের মাটিতে হারানো মোটেই সহজ কাজ না। এমন সাফল্যর পেছনে আপনার ভূমিকা কেমন ছিল?
মিরাজ: কোনো খেলোয়াড় যদি খারাপ করে তাকে হেল্প করা, তার সঙ্গে সব সময় কথা বলা। এগুলো করেছি। যেমন: সাইফ হাসান দুইটা ম্যাচে শূন্য রানে আউট হওয়ার পরে ওর সারাক্ষণ মন খারাপ ছিল। ওর রুমে গিয়ে কথা বলেছি। ফোনেও কথা বলেছি। বলেছি, ভালো করে খেল। দুইটা শূন্য হতেই পারে। আমি সবসময়ই সবাইকে উৎসাহ দিয়েছি। আর যারা ভালো খেলছিল তাদের বলেছি, ভালো খেললে এটাই শেষ না। যে ম্যাচটা শেষ হয়ে গেছে ওটা শেষ। তোমার আরো সামনে যেতে হবে। চেষ্টা করি টিমের যে যেখানেই খেলে যতটুকু পারি হেল্প করার। মাঠের ভেতরে এবং বাইরেও।
বাংলানিউজ: এ বছর ১৯টি ওয়ানডে ম্যাচের ১৩টিতে জয় পেয়েছে অনূর্ধ্ব-১৯ দল। দলের অধিনায়ক হিসেবে একের পর এক জয় পাওয়াটা কতটা উপভোগ করেন?
মিরাজ: জয়ের ভেতর থাকতে অবশ্যই মজা লাগে। জিতলে ভালো লাগে, হারলে মন খারাপ হয়। ক্যাপ্টেন হিসেবে আমার কাজ সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া। জুনিয়র এবং সিনিয়র খেলোয়াড় যারা আছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা।
বাংলানিউজ: ভালো করার প্রেরণা বা উৎসাহের পেছনে বিশেষ কারো ভূমিকা আছে কিনা?
মিরাজ: আমরা যখন দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছিলাম তখন ফাহিম স্যার (নাজমুল আবেদিন) বলেছিলেন, বাংলাদেশ এখন অনেক উপরে আছে। আমাদের নিয়ে সবাই এখন চিন্তা করছে। তোমাদের মনের ভেতর গেঁথে ফেলতে হবে তোমাদের যে কোনো টিমকে হারানোর মতো শক্তি আছে। বাংলাদেশ জাতীয় দল ভারতকে ওয়ানডে সিরিজ হারিয়েছে ফাহিম স্যার আমাদের সেই উদাহরণটা দেন। এছাড়া তিনি বলেন, তোমরা নিজেদের মনের ভেতর ঢুকিয়ে নেবে যে কোনো টিমকে হারানোর শক্তি তোমাদের রয়েছে। সেই বিশ্বাসই আমাদের মনের ভেতর ছিল। বিশ্বাস কাজে লাগিয়ে আমরা সেভাবেই খেলছি। জাতীয় দল ভালো করলে আমাদেরও বাড়তি উৎসাহ কাজ করে। হেড কোচ বাবুল স্যার, তিনি সব সময় আমাদের সাহায্য করেন।
বাংলানিউজ: ২৫ দিনের সফর ছিল আপনাদের। সবাই-ই তো তরুণ। নিশ্চয়ই সবাই উপভোগ করেছেন সফরটা?
মিরাজ: মজার বিষয়টা হল, দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম গেলাম আমরা। মজা লেগেছে একটা বিষয়ে, চাঁদ রাতের দিন আমরা সিরিজ জিতেছি। ঈদের দিন আমরা সবাই একসাথে নামাজ পড়তে গিয়েছি মসজিদে। নাস্তা করে একটা পার্কে গিয়েছিলাম। শার্ক(হাঙ্গর) পার্ক। ওখানে আমরা বড় বড় শার্ক দেখেছি। সুইমিং করেছি। পানিতে ডুব দিয়েও শার্ক দেখছিলাম। এটা অনেক মজার ছিল আমাদের জন্য। সিরিজ জয়ের পরের দিনই ঈদ। দুইটা আনন্দ আমরা এক সাথে করেছি।
বাংলানিউজ: মজার আর কোনো স্মৃতি?
মিরাজ: আমরা যখন ম্যাচ জিতলাম তখন পুরো টিম ম্যানেজম্যান্ট, বাবুল স্যার, সোহেল স্যার, সালাউদ্দিন স্যার, শিপন স্যার, সেজান স্যার এবং এনাম স্যার-তারা সবাই এসে আমাদের সঙ্গে গল্প করেছে, আনন্দ করেছে। আরো একজন ছিলেন। তিনি হচ্ছেন বাংলাদেশ থেকে ম্যাচ পরিচালনা করতে আসা আম্পায়ার মোর্শেদ আলী খান সুমন। তিনিও আমাদের সঙ্গে মজা করেছেন, সময় কাটিয়েছেন টিম হোটেলে।
বাংলানিউজ: দক্ষিণ আফ্রিকায় কঠিন কোনো পরিস্থিতি?
মিরাজ: খেলার বাইরে কঠিন কোনো পরিস্থিতিতে আমাদের পড়তে হয়নি। ম্যাচ নিয়েই কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ডারবানের উইকেট খুব ভালো ছিল। পিটারমরিসবার্গের উইকেটও ভালো ছিল। কিন্তু ওখানের গ্রাউন্ডটায় একটু প্রবলেম ছিল। ওখানের মাটি খুব হার্ড। সেই সঙ্গে উইকেটটাও খুব গ্রাসি ছিল। এক পাশের উইকেট আবার একটু ঢালু। যে সাউডে ঢালু কম ছিল সেখানে বল কম সুইং করতো। সবচেয়ে বড় অভিজ্ঞতা হয়েছে আমাদের পঞ্চম ম্যাচে। ১৮৪ চেজ করে জিততে পারিনি আমরা। ৩৮ ওভারের কার্টেল ম্যাচ ছিল ওটা। ওখানে তাপমাত্রা মাত্র ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সেদিন আমি এবং মোসাব্বেক ভালো খেলেছিলাম। ওরকম ঠান্ডার মধ্যে খেলে আমরা কেউ অভ্যস্থ না। জীবনে প্রথম এমন ঠান্ডার মধ্যে খেলেছি। ঠান্ডার মধ্যে ব্যাটিং করা কঠিন হয়ে যায়। এটা আমাদের জন্য ভালো একটা শিক্ষনীয় বিষয় ছিল। এমন ঠান্ডার মধ্যেও যেভাবে চেষ্টা করেছি পরবর্তীতে এর চেয়ে ভাল করতে পারবো ইনশাল্লাহ। এটা ভালো একটা অভিজ্ঞতা ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৫
এসকে/এমএমএস/এমআর