ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

ঢাকার ক্রিকেট ঐতিহ্যে ভাটা, আসছে না তারকা

সাজ্জাদ খান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৫
ঢাকার ক্রিকেট ঐতিহ্যে ভাটা, আসছে না তারকা

ঢাকা: ১৯৮৬ সালে শ্রীলংকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু বাংলাদেশের। এক সঙ্গে ১১ জন ক্রিকেটারের ওয়ানডে অভিষেক হয় ওই ম্যাচে।

কারণ, ওট‍াই ছিল বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ।

একাদশের ছয়জনই (রকিবুল হাসান, গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, রফিকুল আলম, গোলাম ফারুক, গোলাম নওসের ও সামিউর রহমান) ছিলেন ঢাকায় জন্ম নেওয়া, বেড়ে ওঠা ক্রিকেটার। বাকিদের মধ্যে চারজন চট্টগ্রামের ও একজন মাত্র কুষ্টিয়ার।

২০০০ সাল পরবর্তী সময়েও কিছুদিন জাতীয় দলে আধিপত্য করে গেছেন ঢাকার ক্রিকেটাররা। আমিনুল ইসলাম বুলবুল, খালেদ মাহমুদ সুজন, নাইমুর রহমান দুর্জয়, মোহাম্মদ রফিক থেকে শুরু করে জাতীয় দলে একে একে খেলে গেছেন মেহরাব হোসেন অপি, শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ, আল শাহরিয়ার রোকন, মোহাম্মদ আশরাফুল, শাহরিয়ার নাফিস ও বিকাশ রঞ্জন দাস।

এরা সবাই ঢাকার ক্রিকেটার, বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলেছেন ঢাকাতেই। তবে গর্ব করার মতো ঢাকার ক্রিকেট আভিজাত্য টিকিয়ে রাখা যায়নি।

২০১৫ সালে এসে সেই ঐতিহ্য এখন অতীত ইতিহাস। এখান থেকে আর উঠে আসছে না জাতীয় পর্যায়ের শীর্ষ ক্রিকেটার। বাংলাদেশের শীর্ষ ক্রিকেটারদের মধ্যে মাত্র একজন এখন ঢাকার প্রতিনিধি। তিনি হচ্ছেন পেসার তাসকিন আহমেদ।

ঢাকা থেকে কেন উঠে আসছে না জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেট প্রতিভা এ নিয়ে বাংলানিউজের কথা হয় জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার রকিবুল হাসানের সঙ্গে।

তিনি বলেন, এটা সত্যি যে ঢাকাতে বসবাসকারী, ঢাকাতে বড় হওয়া, ঢাকাতে বেড়ে ওঠা ক্রিকেটার জাতীয় দলে খুব কম। এখন তো পাওয়াই যাচ্ছে না। এর কারণ প্রথমত, এখানে খেলার মাঠের খুব অভাব। প্র্যাকটিসের জন্য ঘুপচি গোলির মধ্যে থাকলে তো হবে না, ম্যাচ খেলতে হবে।

ঢাকায় যারা বসবাস করে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির। সন্তানদের অভিভাবকরা এ প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে তাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার ব্যাপারে কোনোরকম ছাড় দিতে চায় না। সেই সঙ্গে ল্যাপটপ ও স্মার্টফোনে ফেসবুকের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আকর্ষণের কারণে তাদের ফোকাসটা অন্য দিকে চলে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও যোগ করেন, এখন মাঠগুলো কনভার্ট হয়ে যাচ্ছে, ফাঁকা জায়গাগুলোতে বিল্ডিং হয়ে যাচ্ছে। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয় বাংলাদেশকে একটা ধাক্কা দেয়। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন জায়গায় কোচিং সেন্টার ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ঢাকার সেই কোচিং সেন্টারগুলো খেলোয়াড় সাপ্লাই দিতে পারলো না। কিন্ত জেলা পর্যায়ের কিছু ক্রিকেট সেন্টার সেটা দিতে পেরেছে।

মাঠ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে হতশা ঝরে তার কণ্ঠে, মাঠ নিয়ে সমস্যা সমাধানের কোনো পথ আমি এ মুহূর্তে দেখতে পাচ্ছি না। তবে গেন্ডারিয়ার ধূপখোলা মাঠ, গেন্ডারিয়ার ইস্টার্ন ক্লাব মাঠ, গোলাপবাগ মাঠ আছে। খুঁজলে আরও পাওয়া যাবে। কয়েকদিন আগে নিউজে দেখলাম কেরানীগঞ্জের একটা মাঠ দিচ্ছেন না ওখানকার এমপি। এটা পাওয়া গেলে ভালো একটা সংযোজন হতো। আমাদের তো স্টেডিয়াম দরকার না। দরকার মাঠ ও খেলার জন্য ভালো পিচ। যেখানে ছেলেরা খেলার সুযোগ পাবে। এভাবে একটা আগ্রহ জাগতে পারে। আমাদের সন্তান যারা শহরে থাকে তারা টুর্নামেন্ট খেলতে পারবে। শুধু প্র্যাকটিস করলে তো হবে না। ম্যাচ খেলতে হবে।

ঢাকায় দুটি মাঠ পাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। মহাখালীর টিঅ্যান্ডটি মাঠ ও সংসদ ভবন সংলগ্ন ফাঁকা মাঠের বড় একটা অংশ পেতে যাচ্ছে বিসিবি। যেখানে প্রথম বিভাগ ও দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট আয়োজনের কথা ভাবছে বিসিবি।

দুটি মাঠ সংযোজন হতে যাওয়া প্রসঙ্গে রকিবুল হাসান বলেন, মাঠ দুটি বিসিবিকে দিলে খুবই ভালো হয়। আমার প্রশ্ন, কেন দেওয়া হবে না। আজকে বাংলাদেশকে বর্হিবিশ্বে পরিচিত করেছে ক্রিকেট। তাই ক্রিকেট তো এটা ডিজার্ভ করে। বর্তমান সরকারও তো ক্রীড়া-বান্ধব সরকার। কোথায় কোথায় লুকিয়ে আছে মাঠ কিংবা খালি জায়গা সেগুলো বের করতে হবে। রাজধানীকে ক্রিকেটের মধ্যে আনতে হবে। রাজধানীর ছেলে-মেয়েরা যখন ক্রিকেট খেলবে উচ্চবিত্ত পরিবারের বাবা-মায়েরাও তখন ক্রিকেটে পৃষ্ঠপোষকতা করতে এগিয়ে আসবে।

ঢাকাকে অনেক আগেই পেছনে ফেলে ক্রিকেটে একক আধিপত্য করছে খুলনা বিভাগ। সেখান থেকেই উঠে এসেছেন মাশরাফি, সাকিব, রুবেল, ইমরুল, এনামুল, সৌম্য, মুস্তাফিজরা। জাতীয় দলের বৃত্তের মধ্যে আছেন রবিউল ইসলাম, আল-আমিন হোসেন, জিয়াউর রহমানরা।

খুলনা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ক্রিকেটার উঠে আসা প্রসঙ্গে রকিবুল হাসান বলেন, এটা ট্র্যাডিশেনেরও একটা ব্যাপার হয়ে গেছে এই উপমহাদেশে। ভারতের দিকে যদি তাকাই দেখবেন খেলোয়াড়রা মুম্বাই থেকে আসত, এখন সাউথ বেঙ্গল থেকে আসছে। পাকিস্তানের দিকে তাকালেও লাহোর, করাচি ও রাওলাপিন্ডি থেকে উঠে আসছে ক্রিকেটাররা। আমাদের ক্রিকেটাররাও শিফট হয়ে গেছে। এখন যদি বাংলাদেশের দিকে তাকাই দেখা যাবে দক্ষিণাঞ্চল ডমিনেট করছে।

এর কারণ হিসেবে রকিবুল মনে করেন, মফস্বলে বড় হওয়া ও সেখানকার আবহাওয়া ক্রীড়াবান্ধব। যারা মফস্বল শহরে বড় হয় তাদের ভেতরে বড় কিছু হওয়ার ইচ্ছাটা প্রবল থাকে। সেখানে খেলার মাঠের কোনো অভাব হয় না। গোছালো একটা ট্রেনিংয়ের মধ্যে থাকেন ক্রিকেটাররা। ওরা শক্তিমান ও স্বাস্থ্যবান হয়। আরও একটা কারণ হলো, তারা প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বড় হচ্ছে।

ঢাকায় ক্রিকেটার তৈরিতে স্কুল ক্রিকেটের গুরুত্বারোপ করে রকিবুল হাসান বলেন, স্কুল ক্রিকেট গোছানো ফরম্যাটে হতে হবে। যখন স্কুল বন্ধ হয় তখন স্কুল ক্রিকেট আয়োজন করতে হবে। যে সমস্ত স্কুলগুলোর নিজস্ব মাঠ আছে সেই মাঠে যেন অন্যান্য স্কুল ব্যবহার করতে পারে সপ্তাহে অন্তত একদিন বা দু’দিন।

এ কাজটা শিক্ষা বোর্ড এবং ক্রিকেট বোর্ড মিলে উদ্যোগ নিয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সহযোগিতায় করতে পারে। যদি পাঁচটা ভালো মাঠ থাকে তাহলে যেন ২০-২৫টা স্কুল তা ব্যবহার করতে পারে। তাহলে ঢাকা থেকেও ক্রিকেটার উঠে আসবে। আমাদের সময়ে যেমন আসতো।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৫
এসকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।