ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

হারানো দিনের খোঁজে গুলশান ইয়ুথ ক্লাব

মহিবুর রহমান, সিনিয়র করেসপনডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৬
হারানো দিনের খোঁজে গুলশান ইয়ুথ ক্লাব ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘কোন টাকা পয়সা ছাড়াই ৪২ জন ক্রিকেটারকে আমরা ক্রিকেটের সরঞ্জাম সরবরাহ করি এবং অনুশীলন করাই। কারণ, ওদের কারও বাবা পান দোকানী, রাজ মিস্ত্রী, লন্ড্রী দোকানের হেলপার, কারও বাবা-মা নেই আর কারও বা মা আছে বাবা নেই’।

কথাগুলো বলছিলেন গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের প্রধান ক্রিকেট কোচ আলী হায়দার।

এই ৪২ জনসহ আরও ২০৮ ক্রিকেটারকে নিয়ে এগিয়ে চলেছে এক সমযের নামকরা ‘গুলশান ইয়ুথ ক্লাব’। ক্লাবটি বর্তমানে দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট খেলছে তারপরেও নামকরা বলার কয়েকটি সুস্পষ্ট কারণ আছে। আর তা হল, এক সময়ে এই ক্লাবটি প্রিমিয়ার লিগ খেলেছে। সময়টি ছিল ১৯৮৭-১৯৯৬। এই সময়ের মধ্যে টানা দু’বার বাংলাদেশ বিমানের সঙ্গে তৃতীয় হওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছে ক্লাবটি।

এই ক্লাব থেকেই বের হয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক তিন খেলোয়াড় মঞ্জুর আহমেদ, নাসির আহমেদ, মিজানুর রহমানের মত দেশসেরা ক্রিকেটাররা। খেলোয়াড়ী জীবনের মত উজ্জ্বল তাঁদের পেশাগত জীবনও।

খেলোয়াড়ী জীবন শেষে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সিইও’র দায়িত্ব পালন করেছেন প্রয়াত মঞ্জুর আহমেদ।

নাসির আহমেদ বর্তমানে জাতীয় ক্রিকেট দলের ভিডিও বিশ্লেষকের দায়িত্বে আছেন আর মিজানুর রহমান দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ অনু-১৯ দলের কোচ হিসেবে।

এদিকে বর্তমানদের মধ্যে উল্লেখ করার মত আছেন তাসামুল, রাতুল ও অপু। এরমধ্যে তাসামুল, রাতুল ও অপু জাতীয় ক্রিকেট লিগ খেলেছেন। আর বিপিএলের এবারের আসরে প্রথমবারের মত নাম লিখিয়েছেন রাতুল ও অপু।
 
এক সময়ের প্রিমিয়ার ক্রিকেট খেলা ক্লাবটির এখন দ্বিতীয় বিভাগে খেলছে কেন? উত্তরে হায়দার জানালেন, ‘মুলত বর্তমানে আমরা সম্পূর্ণ দেশের প্লেয়ার দিয়েই খেলা চালিয়ে যাচ্ছি তাই আহামরি সাফল্য না পাওয়ায় দ্বিতীয় শ্রেনী খেলতে হচ্ছে। এক সময়ে অনেক টাকা বরাদ্দ করে বিদেশী প্লেয়ার দিয়ে খেলিয়েও প্রিমিয়ার ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন বা রানার আপ হতে না পারায় মুলত বরাদ্দ কমে গেছে। তাই আপাতত দ্বিতীয় বিভাগ খেলতে হচ্ছে তবে আমরা চেস্টা করছি তৃণমুল থেকে প্লেয়ার সংগ্রহ করে দ্বিতীয় বিভাগ খেলিয়ে আবার আগের গৌরব ফিরিয়ে আনতে। ’

ক্রিকেটে এক সময়ের দাপুটে এই ক্লাবটিতে এক ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্যই আছেন ১৪ জন কোচ। এখানে নিছক থাকার জন্য থাকা নয়, ক্লাবসহ দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজ করে যাওয়া এই ক্লাবের কোচরা বেশ ভালই আছেন বলে জানালেন ‍আলী হায়দার। তাছাড়া পাচ্ছেন আর্থিক সুযোগ সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধাদিও।
 
‘ভালই আছি। এখানে আমাদের আর্থিক সমস্যা তেমন নেই। ক্লাব সদস্যরা মাসিক চাঁদার মাধ্যমে ক্লাব চালায়। ’

শুধু ক্রিকেটই নয়। ১৯৭৭ সালে যাত্রা শুরু করা এই ক্লাবটিতে আছে ফুটবল, বাস্কেটবল, স্কেটিং, সুইমিং, টেনিস, আর্টস, মিউজিক ও পথশিশু পাঠশালার মত ইভেন্ট।

ক্রিকেটের মত ক্লাবটি বাস্কেট বল ও হ্যান্ড বলে দ্বিতীয় বিভাগ খেলছে। তবে ফুটবলে এখনও পাইওনিয়ার এর গন্ডি পার হতে পারেনি।

মাঠের পারফরমেন্সে ক্লাবটি দ্বিতীয় বিভাগে খেললেও সেখানে প্লেয়ারদের জন্য বিদ্যমান সুযোগ সুবিধাগুলো বর্তমানের যে কোন প্রিমিয়ার ক্রিকেট খেলা ক্লাবের চাইতে কোন অংশ কম নয় বলে আশ্বস্ত করলেন আলী হায়দার।

‘ক্লাবটির বিশাল মাঠে মনোরম পরিবেশে অনুশীলনের জন্য আছে সুপেয় পানির ও পর্যাপ্ত অনুশীলন ম্যাচ খেলার ব্যবস্থা, অনুশীলনরত খেলোয়াড়দের অভিভাবকদের বসার সু ব্যবস্থা এবং ক্লাবের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হাটার পথ। ’

তবে, গুলশান ইয়ুথ ক্লাবে খেলোয়াড় ও প্রশিক্ষকদের থাকার জন্য কোন আবাসিক ব্যবস্থা নেই। লিগ শুরু হলে বা মৌসুমের অন্যান্য সময়ে নিজ নিজ বাসা থেকে এসে তাঁদের ম্যাচে বা প্রস্তুতি অংশ নিতে হয়।   

এখানে প্রাতঃকালীন ও সান্ধ্যকালীন শরীর চর্চার জন্য যে কেউই আসতে পারেন। দেশী-বিদেশী ছোট শিশু থেকে শুরু করে তরুণ, তরুণী, বয়স্ক সবাই এখানে নিয়মিত শরীর চর্চা এবং স্কেটিংয়ের জন্য আসেন বলেও জানান আলী হায়দার।     

গুলশান ইয়ুথ ক্লাবে ভর্তি হতে হলে ভর্তিচ্ছুদের ট্রায়ালে অংশ নিয়ে তবেই ক্লাবাঙ্গনে নিজেদের নাম লেখাতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০১১২ ঘণ্টা, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।