ঢাকা: ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা, আইসিসির যেকোনো ইভেন্টে ভারতের গ্রুপে রাখা হচ্ছে পাকিস্তানকে। ইচ্ছে করেই দুই চির-প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ দুটোকে একই গ্রুপে বারবার রাখার কারণ জানিয়েছে আইসিসি।
২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে আইসিসির প্রায় সব টুর্নামেন্টে একই গ্রুপে খেলেছে ভারত আর পাকিস্তান। ভারতের মাটিতে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও গ্রুপপর্বে মুখোমুখি হয় এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। এবারে ইংল্যান্ডের মাটিতে বসতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির (২০১৭) লটারিতেও একই গ্রুপে ভারত-পাকিস্তান। তাদের গ্রুপের বাকি দুটি দল দক্ষিণ আফ্রিকা আর শ্রীলঙ্কা।
এশিয়ার আরেক জায়ান্ট দল বাংলাদেশ রয়েছে অন্য গ্রুপে। যেখানে টাইগারদের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড।
আগামী বছর ০১ জুন থেকে শুরু হয়ে ফাইনালের মধ্যে দিয়ে আসরের পর্দা নামবে ১৮ জুন। ০৪ জুন পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামবে ভারত। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন টিম ইন্ডিয়ার মিশন শুরু হবে এজবাস্টনে।
আইসিসির প্রধান নির্বাহী ডেভিড রিচার্ডসন জানান, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ছোট একটি ইভেন্ট। যেখানে ক্রিকেটার ও সমর্থকরা বেশ উপভোগ করে থাকেন। ২০১৭ সালের এই ইভেন্ট শুধুমাত্র একটি ওয়ানডে প্রতিযোগিতা নয়, কারণ ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে সেরা আট দলকে এই টুর্নামেন্টের ঠিক তিন মাস পরেই বাছাই করা হবে। সুতরাং এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইভেন্ট। ’
আইসিসির প্রধান এই নির্বাহী আরও জানান, ক্রিকেট বিশ্বে ভারত-পাকিস্তান এই দুই দেশের দ্বৈরথের গুরুত্বের কারণেই আইসিসি চেষ্টা করে দুই দলকে একই গ্রুপে রাখতে।
দ্য টেলিগ্রাফকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে রিচার্ডসন বলেন, ‘আমরা সব সময় চেষ্টা করি আইসিসির ইভেন্টে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে ম্যাচ রাখার। আইসিসির দৃষ্টিকোণ থেকে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো সন্দেহ নেই ক্রিকেট প্রেমীরাও এই দুই দেশের ম্যাচ দেখতে চায়। তারা এই দুই দেশের ম্যাচ দেখার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে থাকে। ’
এর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সাতটি আসর সম্পন্ন হয়েছে। এবার পঞ্চমবারের মতো ভারত-পাকিস্তান একই গ্রুপে খেলবে। রিচার্ডসন জানান, এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্যও দুই দেশের ম্যাচটি হবে হাইভোল্টেজ ম্যাচ। এই ম্যাচ দেখার জন্য টেলিভিশনের পর্দায় থাকবে অজস্র চোখ। বরাবরের মতো ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ কখনো কখনো টিভি দর্শক সংখ্যায় ১০০ কোটিও ছাড়িয়ে যায়।
এই প্রথমবার আইসিসির পক্ষ থেকে জানানো হলো, দর্শক আগ্রহ মাথায় রেখে ইচ্ছে করেই ভারত-পাকিস্তানকে একই গ্রুপে রাখা হচ্ছে। কিন্তু, পাঠক মনে প্রশ্ন জেগেছে আইসিসির সততা নিয়ে। যেকোনো ইভেন্টের ড্র অনুষ্ঠিত হয় লটারির মাধ্যমে। এমনটিই যদি হবে তাহলে কি করে ভারত-পাকিস্তানকে বারবার একই গ্রুপে ফেলা হচ্ছে?
এমন প্রশ্নের উত্তরে রিচার্ডসন জানান, আমরা সব সময় ড্র’র আগে একটি খসরা করে থাকি। সেখানে নিশ্চিত করি প্রতিটি গ্রুপ যেন ৠাংকিংয়ে ভিত্তিতে খেলতে পারে। কাছাকাছি ৠাংকিং পয়েন্টের দলগুলোকে আমরা গ্রুপপর্বে সাজিয়ে দেই। আমরা ড্র’টি অনেক ভাবেই করে দেখি। যদি মনে হয় ভারত-পাকিস্তানকে এক গ্রুপে রাখলে অন্য কোনো দলের সমস্যা হচ্ছে না, তখন আমরা ভারসাম্য ধরে রেখে সেভাবেই ড্র সম্পন্ন করি।
আইসিসি নিজেদের স্বার্থের কথা ভেবে যদি বারবার এমনটা করতে থাকে, সেক্ষেত্রে বাকি দলগুলোর উপর বাজে প্রভাব পড়তে পারে। আইসিসি ক্রিকেটের বাণিজ্যের কথা ভেবে এমন করেও যদি বলে ভারসাম্য ঠিক রাখার কথা, তবে সেটা এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ড্রয়ের পর আষাঢ়ে গল্পের মতোই শোনাচ্ছে।
ভারত-পাকিস্তানকে এক গ্রুপে রাখতে এবার তাদের গ্রুপে রাখা হয়েছে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে। অপরদিকে, বাংলাদেশকে লড়তে হচ্ছে কঠিন গ্রুপেই। ২০১৭ সালের ০১ জুন থেকে অনুষ্ঠেয় আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপ ‘এ’তে খেলবে বাংলাদেশ। আসরের প্রথম দিনই দ্য ওভালে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে মাশরাফি বাহিনী। অষ্টম আসরে টাইগাররা নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে ০৫ জুন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে (ওভালে)। আর ০৯ জুন কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপপর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, ০২ জুন ২০১৬
এমআরপি