ঢাকা: জীবনে ‘প্রথম’ সবকিছুই অন্যরকম। চেষ্টা করলেও প্রথম কোনো অভিজ্ঞতা ভোলার নয়! আর ব্যাপারটা যখন হয় রুটি-রুজির, সেটাতো এড়িয়ে সামনে আগানো দায়।
অথচ লিগ শেষে বাজে অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়তে হলো এ তরুণদের। তারা সবাই ক্রিকেট কোচিং স্কুলের (সিসিএস) হয়ে শেষ করেছেন ক্যারিয়ারের প্রথম প্রিমিয়ার লিগ।
দল সুপার লিগে না ওঠায় গত ৬ জুন শেষ হয়েছে তাদের লিগ। পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালনে ১০ জুনের মধ্যেই বাড়ি ফিরে গেছেন তারা। ক্লাব-কর্তারা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে পাওনা টাকা দিতে অপারগতার কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। চুক্তির ৮-১০ শতাংশ পারিশ্রমিকই তাদের সম্বল। লিগ চলাকালে সামান্য পরিমানে পাওয়া টাকা খরচ হয়ে গেছে অনেকের। শূন্য হাতেই বাড়ি ফিরতে হয়েছে কয়েকজনকে। দুই মাস পর বাড়ি ফিরে থাকতে হচ্ছে গৃহবন্দী হয়ে। পকেটে টাকা নেই, লজ্জায় বন্ধুদের সঙ্গে দেখাও করতে পারছেন না সিসিএসের ক্রিকেটাররা।
প্লেয়ার্স বাই চয়েজে ‘বি’ গ্রেডে থাকায় ১২ লাখ করে টাকা পাওয়ার কথা ছিল। বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানো, পরিবারের প্রয়োজনে ইচ্ছামতো খরচ করবেন এমন ইচ্ছাই ছিল লিগের আগে। অথচ লিগ শেষে তাদের বেশিরভাগ ক্রিকেটার পায়নি লাখ টাকাও। বিসিবিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দিতেও সাহস পাচ্ছেন না তারা। পরে না কোনো বিপদে পড়তে হয়!
বিসিবির দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে এই তরুণ তারকাদের। খেলোয়াড়দের পাওনা পরিশোধে বিসিবি ক্লাবগুলোকে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম বেধে দিলেও ক্লাবগুলোর টনক নড়েনি। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন আশ্বাস দিয়েছিলেন ক্লাব টাকা পরিশোধ না করলে বিসিবি তা পরিশোধ করবে। ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে আরও দু’দিন অতিবাহিত হলেও বিসিবি’র তরফ থেকে সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। সঙ্গত কারণেই বিসিবির উপরও আস্থা রাখতে পারছে না ওই তরুণ ক্রিকেটাররা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রিকেটার মুঠোফোনে জানালেন, ‘বিসিবি তো কত কথাই বলে। আমাদের পাওনা বুঝে পাব কিনা-এ নিয়ে সন্দেহ থাকছেই। মনে হয় না পাব। জানেন, লজ্জায় বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। লিগ শুরুর সময়ে ঈদে দর্শনীয় কোনো জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে বন্ধু-বান্ধবরা। সব কিছুই ভেস্তে যাবে। লজ্জায় বাড়ি থেকেই বের হচ্ছি না। তারা তো মনে করছে ১২ লাখের মতো টাকা পাব। ’
সিসিএসের কর্মকর্তা আবু ইউসুফ চৌধুরী নিকুর অদ্ভুত যু্ক্তি, ‘যে প্লেয়ারকে ১২ লাখ টাকার চুক্তিতে নিতে হয়েছে তারা আসলে ৬-৭ লাখের প্লেয়ার। লিগের আগে এমন টাকাতেই তারা আমার ক্লাবে খেলতে রাজী ছিল। কিন্তু ‘প্লেয়ার্স বাই চয়েজ’ আমাকে ডুবিয়েছে। ’ টাকার সংস্থান না করেই কেন বি গ্রেডের প্লেয়ার নিতে গেলেন সে ব্যাপারে অবশ্য কোনো মন্তব্য করলেন না ওই কর্মকর্তা। ‘সি’ কিংবা ‘ডি’ গ্রেডের প্লেয়ারও তো নিতে পারতেন কম পারিশ্রমিকে!
সিসিএসের ক্রিকেটারদের মতো অবস্থা ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবেরও। লিগ শেষ হলেও ক্লাব কর্তৃপক্ষ এখনো তাদের পাওনা টাকা বুঝিয়ে দেয়নি। লিগের মাঝপথে এ নিয়ে অসন্তোষ ছড়ায় ভিক্টোরিয়া শিবিরে। নাদিফ চৌধুরী, কামরুল ইসলাম রাব্বিরা গতকাল দেখা করেছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে।
দলটির অধিনায়ক নাদিফ চৌধুরী জানান, ‘আমাদের কেউ ১০, ২০ কিংবা ৩০ শতাংশ টাকা পেয়েছে। সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পেয়েছে দু-একজন। আশা করব, বোর্ড বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে। ’
বিসিবি পরিষ্কার করে বলতে পারেনি কবে টাকা পাবেন খেলোয়াড়েরা। অথচ লিগের আগেই জানানো হয়েছিল, ক্লাবগুলোর কাছ থেকে আর্থিক নিশ্চয়তা নিয়েছে বিসিবি; যাতে পাওনা নিয়ে কোনো জটিলতা না থাকে। অথচ জটিলতা থেকেই গেল। সিসিএস, ভিক্টোরিয়া ছাড়াও অর্ধেক টাকা এখনো বকেয়া এমন ক্লাবের মধ্যে রয়েছে কলবাগান ক্রিকেট একাডেমি, শেখ জামাল ধানমন্ডি ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন। প্রিমিয়ার লিগের অবশিষ্ট পাওনা টাকা দিয়েই যে পরিবার নিয়ে ঈদ করবেন ক্রিকেটাররা, সেটি হয়তো ভুলেই বসে আছে বিসিবি!
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, ২৪ জুন ২০১৬
এসকে/এমআরপি