ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

মোস্তাফিজের শিকারে হেরাথ

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩২ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৭
মোস্তাফিজের শিকারে হেরাথ মোস্তাফিজ-ছবি:সংগৃহীত

বাংলাদেশের বিপক্ষে গল টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ব্যাট করছে শ্রীলঙ্কা। প্রথম সেশনে টাইগারদের প্রাপ্তি কুশল মেন্ডিস (১৯৪) ও নিরোশান ডিকওয়েলার (৭৫) উইকেট। দু’জনকেই ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। আর সর্বশেষ রঙ্গনা হেরাথকে আউট করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

এ রিপোর্ট লেখা অবধি প্রথম সেশন শেষে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ১১৭ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ৪৫৭। দিলরুয়ান পেরেরা ৩১ ও সুরাঙ্গা লাকমাল শূন্য রানে ব্যাট করছেন।

স্পিনার হেরাথকে ব্যক্তিগত ১৪ রানে সৌম্য সরকারের ক্যাচের পরিণত করে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান মোস্তাফিজ।

ছক্কা হাঁকিয়ে ডাবল সেঞ্চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন মেন্ডিস। তাকে লং-অনে বাউন্ডারি লাইনে তামিম ইকবালের ক্যাচে পরিণত করেন মিরাজ। বাংলাদেশকে আক্ষেপই করতে হচ্ছে! ‘শূন্য রানে’ জীবন পাওয়া মেন্ডিসই বাধার দেয়াল হয়ে দাঁড়ান।

দলীয় চারশ’ থেকে ২ রান দূরে থাকতে ফেরেন তিনি। মেন্ডিসের ১৯৪ রানের ইনিংসটিতে ছিল ১৯টি চার ও ৪টি ছক্কার মার। আউট হওয়ার আগে পঞ্চম উইকেটে ডিকওয়েলার সঙ্গে ১১০ রানের জুটি গড়েন তিনি।

ব্যক্তিগত ১৭৫ রানে শুভাশিস রায়ের বলেই আবারো ‘নতুন’ জীবন পান মেন্ডিস। ফাইন লেগ অঞ্চলে মোস্তাফিজুর রহমান যখন ক্যাচ তালুবন্দি করেন ততক্ষণে পা বাউন্ডারি লাইন স্পর্শ করে। অসতর্কতার কারণেই বেঁচে যান ২২ বছর বয়সী মেন্ডিস। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত তার ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল।

এর আগে প্রথম দিনে ৮৮ ওভারের খেলা হয়। মেন্ডিসের ১৬৬ রানের অপরাজিত ইনিংসে স্কোরবোর্ডে ৪ উইকেটে ৩২১ রান তোলে লঙ্কানরা। ৩৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে মাঠ ছাড়েন মেন্ডিস ও ১৪ রান করা নিরোশান ডিকওয়েলা। দলীয় ৯২ রানে তিন হারানোর পর আসিলা গুনারাত্নের (৮৫) সঙ্গে ১৯৬ রানের দুর্দান্ত জুটি গড়েন মেন্ডিস।

মঙ্গলবার (৭ মার্চ) গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন লঙ্কান দলপতি রঙ্গনা হেরাথ। ইনজুরির কারণে নিয়মিত অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ছিটকে যাওয়ায় দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।

দিনের প্রথম সেশনে স্কোরবোর্ডে ২৪ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে ৬১ রান তোলে লক্ষানরা। ষষ্ঠ ওভারের চতুর্থ বলে উপুল থারাঙ্গার (৪) স্ট্যাম্প ভেঙে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন পেসার শুভাশিস। পরের বলেই লিটন দাসের গ্লাভসে ধরা পড়েন কুশল মেন্ডিস। কিন্তু, দুর্ভাগ্য! রিভিউতে পায়ের ‘নো’ বল ধরা পড়ায় আউটের সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেন আম্পায়ার।

দলীয় ১৫ রানে থারাঙ্গার বিদায়ে মেন্ডিসকে নিয়ে জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নেন ওপেনার করুনারাত্নে। ২৩তম ওভারে দু’জনের ৪৫ রানের পার্টনারশিপ ভাঙেন উঠতি তারকা স্পিন অলরাউন্ডার মিরাজ। বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন করুনারাত্নে (৩০)।

দিনেশ চান্দিমালকে (৫৪ বলে ৫) ফিরিয়ে উইকেট উদযাপনে মাতেন দীর্ঘদিন পর টেস্টে ফেরা মোস্তাফিজুর রহমান। ৯২ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। ৪০তম ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ধরা পড়েন প্রস্তুতি ম্যাচে ভোগানো চান্দিমাল (৫৪ বলে ৫)। টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে দু’দিনের (২-৩ মার্চ) একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচটিতে চোখ ধাঁধানো ব্যাটিংয়ে ১৯০ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দেন চান্দিমাল।

তবে এক প্রান্ত আগলে রাখেন মেন্ডিস। গুনারাত্নের সঙ্গে জুটি গড়ে দলকে টেনে তোলেন এ উঠতি ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। দু’জনের ১৯৬ রানের পার্টনারশিপে প্রথম ইনিংসে বড় স্কোরের ভিত পায় লঙ্কানরা। তৃতীয় সেশনের শেষদিকে ৮৩তম ওভারে গুনরাত্নের (৮৫) স্ট্যাম্প ভেঙে সতীর্থদের উদযাপনের মধ্যমনি হন তাসকিন আহমেদ।

একটি করে উইকেট নেন শুভাশিস, মেহেদি, তাসকিন ও মোস্তাফিজ।

চার বছর আগে গলে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে ড্রয়ের কীর্তি গড়েছিল টিম বাংলাদেশ। একই গ্রাউন্ডে টাইগারদের সেই সুখস্মৃতি পুনরাবৃত্তির চ্যালেঞ্জ! বাংলাদেশের এটি ৯৯তম টেস্ট। কলম্বোর পি সারা ওভালে শততম টেস্টের (১৫ মার্চ) মাইলফলক স্পর্শ করবে তারা।

এ সিরিজে শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন অধিনায়ক মুশফিক। নিজের ইচ্ছাতেই উইকেটকিপিং করছেন না ‘মি. ডিপেন্ডেবল’। উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব লিটন দাসের কাঁধে। এদিকে, ২০১৫ সালের জুলাই-আগস্টের পর প্রথম টেস্ট খেলছেন ‘কাটার মাস্টার’ মোস্তাফিজুর রহমান।

তিন পেসার নিয়ে একাদশ গড়া হয়েছে। স্পিনার তাইজুল ইসলামকে রাখা হয়নি। তার পরিবর্তে সুযোগ পেয়েছেন শুভাশিস রায়। অন্যদিকে, লিটন থাকায় জায়গা হয়নি সাব্বির রহমানের।

নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে গলে একটি টেস্টই খেলেছে টিম বাংলাদেশ। কখনো ওয়ানডে বা টি-২০ ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি। ২০১৩ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত আট সেঞ্চুরির সেই স্মরণীয় ম্যাচটি দাপটের সঙ্গেই ড্র করে মাঠ ছেড়েছিল টাইগাররা।

ওই ম্যাচটির প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকদের ৫৭০ রানের জবাবে স্কোরবোর্ডে ৬৩৮ রান তোলে সফরকারীরা। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি উদযাপন করেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ১৯০ রানের অসাধারণ ইনিংস উপহার দেন মোহাম্মদ আশরাফুল। মুশফিক-আশরাফুলের পর সেঞ্চুরি হাঁকান নাসির হোসেন।

তাইতো বলাই যায়, গলে অপরাজেয় বাংলাদেশ। সময়ের সঙ্গে যারা এখন আরো বেশি পরিণত। ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়, ভারতে গিয়ে একমাত্র টেস্টে লড়াকু পারফরম্যান্স প্রদর্শন সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কা সফরেও গল টেস্ট দিয়ে দুর্দান্ত শুরুর প্রত্যাশা বাংলাদেশের অগণিত ক্রিকেটপ্রেমীদের।

পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে শ্রীলঙ্কা। সাদা পোশাকে এখন পর্যন্ত ১৬ বারের দেখায় ১৪ ম্যাচে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে লঙ্কানরা। কিন্তু, সবশেষ দু’টি সিরিজ ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। চার ম্যাচের মধ্যে দু’টি ড্রতে নিষ্পত্তি হয়। ২০১৪ সালে চিটাগংয়ে অনুষ্ঠিত দু’দলের সবশেষ ম্যাচটিতে জয় পায়নি কেউই।

ঘরের মাটিতে সবশেষ পাঁচ ম্যাচেই জয় তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডোবে অস্ট্রেলিয়া (তিন ম্যাচ)। সে যাই হোক, সব মিলিয়ে নিজেদের শেষ পাঁচ টেস্টের মধ্যে তিনটিতেই হেরে যায় লঙ্কানরা। জয় দু’টিতে। বাংলাদেশ চারটি হারের বিপরীতে এক ম্যাচে জয় পায়।

বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, মমিনুল হক, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, লিটন দাস (উইকেটরক্ষক), মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, শুভাশিস রায়।

শ্রীলঙ্কা একাদশ: দিমুথ করুনারাত্নে, উপুল থারাঙ্গা, কুশল মেন্ডিস, দিনেশ চান্দিমাল, নিরোশান ডিকওয়েলা (উইকেটরক্ষক), অসিলা গুনারাত্নে, দিলরুয়ান পেরেরা, রঙ্গনা হেরাথ (অধিনায়ক), সুরাঙ্গা লাকমল, লাহিরু কুমারা, লক্ষণ সান্দাকান।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৯ ঘণ্টা, ৮ মার্চ, ২০১৭
এমআরএম/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।