ক্রিকেট একসময় অল্পকিছু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এর মধ্যে আবার ক্রিকেটের সবচেয়ে কুলীন সংস্করণ তথা ‘টেস্ট ক্রিকেট’ খেলুড়ে দেশের সংখ্যা তো একেবারেই নগণ্য।
ক্রিকেটে বাড়ছে ‘অর্থের ঝনঝানানি’। ফলে খেলাটির প্রতি আগ্রহ বাড়তে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন দেশ। সেসব দেশের কয়েকটি আবার খেলছে বিশ্বকাপেও। নতুন করে অনেক দেশ আবার উঠেপড়ে লেগেছে এতে যুক্ত হওয়ার প্রতিযোগিতায়। আর এই প্রতিযোগিতার কারণে ক্রিকেটের অনেক নবীন সদস্য দেশ খেলোয়াড় যোগাড় করছে পুরনো ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলো থেকে। তাদের লোভনীয় প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, যারা নিজ দেশের জাতীয় দলে অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন কিংবা অবসরের সময় ঘনিয়ে এসেছে তারা সেসব দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।
ক্রিকেটের বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার শুরুটা অবশ্য খুব বেশীদিন আগে থেকে নয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আগমনের পর মূলত পরিবর্তনটা দ্রুত ঘটতে শুরু করে। বর্তমানে অফিসিয়াল আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে ৮২টি দল রয়েছে। সুতরাং, এটি থেকে বোঝা যায় যে, খেলাটি কতটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। শীর্ষস্থানীয় দলের প্রথম একাদশে জায়গা অর্জনের প্রতিযোগিতা এতটাই বেড়ে গেছে যে, কিছু ক্রিকেটার এমনকি অন্য দেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই তালিকায় আজ আমরা এমন সাতজন ক্রিকেটারকে দেখব।
১. রাস্টি থেরন
দক্ষিণ আফ্রিকার সাদা বলের ক্রিকেটে ডানহাতি ফাস্ট বোলার ছিলেন হুয়ান রাস্টি থেরন। প্রোটিয়া দলে নিয়মিত মুখ না হলেও তিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট টিম ওয়ারিয়র্সের অন্যতম সিনিয়র ক্রিকেটার ছিলেন। তিনি আইপিএল এবং সিপিএলের মতো প্রথম সারির ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেও খেলেছেন। তবে হাঁটুর ইনজুরির কারণে দক্ষিণ আফ্রিকায় তিনি তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার দীর্ঘ করতে পারেননি।
প্রোটিয়াদের হয়ে ২০১০ সালে অভিষেক হওয়ার পর চারটি ওয়ানডে ও ৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন এ ডানহাতি পেসার। দুই ফরম্যাটেই উইকেট সংখ্যা ১২টি। তবে টেস্ট ম্যাচে তার খেলার সৌভাগ্য হয়নি। পরবর্তিতে, থেরন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। তিনি এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রেকে প্রতিনিধিত্বও করেছেন।
২. ডেভিড ওয়াইজ
ডেভিড ওয়াইজ একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার যিনি আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ২০১৬ সংস্করণে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলেছিলেন। এমনকি তিনি আইপিএল, বিপিএল, পিএসএল, সিপিএলের মতো ফ্রাঞ্চাইজ লিগ মিতিয়েছেন তার পেস বোলিং এবং লোয়ার অর্ডারে দ্রুত গতিতে রান করার ক্ষমতার কারণে।
তিনি কলপ্যাক চুক্তি স্বাক্ষর করে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। এখন তিনি নামিবিয়ার খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফেরার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। তাকে নামিবিয়ার জার্সিতে আইসিসি টি-২০ বিশ্বকাপ -২০২১ এর কোয়ালিফাইং রাউন্ডে খেলতে দেখা যাবে।
৩. রোলফ ফন ডার মারউই
এই তালিকায় যুক্ত হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক অলরাউন্ডার হলেন রোলফ ফন ডার মারউই। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে নর্দার্নস ও টাইটান্স, আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ও দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ব্রিসবেন হিট, ক্যারিবীয় ক্রিকেটে সেন্ট লুসিয়া জোউকস এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সমারসেটের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি।
ডানহাতে মাঝারিসারিতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করার সামর্থ্য আছে ‘দ্য বুলডগ’ নামে পরিচিত ফন ডার মারউইয়ের। ২০০৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি প্রোটিয়াদের হয়ে খেলেছেন। এরপর ২০১৫ সালে ডাচ পাসপোর্ট পাওয়ার পর নেদারল্যান্ডসে চলে যান। ২০১৫ সালের আইসিসি বিশ্ব টি-২০ বাছাইপর্বে নেদারল্যান্ডসের জার্সিতে খেলেছেন তিনি। এছাড়াও, ২০১৬ সালের আইসিসি বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতেও তিনি একই দলের হয়ে অংশ নেন।
৪. উইলিয়াম বয়েড র্যাঙ্কিন
বয়েড র্যাঙ্কিন তার ক্যারিয়ারে দুইবার দল বদল করেছেন। ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী ওয়ানডে অধিনায়ক ইয়ন মরগানের মতো তিনিও প্রথমে আয়ারল্যান্ডের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। তারপর তিনি ইংল্যান্ড দলের হয়ে খেলেন। এরপর তিনি আবার আয়ারল্যান্ডে ফিরে আসেন।
বয়েডের ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু হয় আয়ারল্যান্ডের জার্সিতে। ২০০৭ সালে বারমুডার বিপক্ষে কেনিয়ার নাইরোবিতে আইসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগে অভিষেক হয় তার। এরপর থেকে নিজের জন্মভূমির হয়ে ৫৭টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এই ৫৭ ম্যাচে বল হাতে ৮০ উইকেট শিকার করেন ডানহাতি এই মিডিয়াম ফাস্ট বোলার।
আইরিশ ক্রিকেটের ঐতিহাসিক অভিষেক টেস্টের প্রথম উইকেট শিকার করেন বয়েড। তবে সাবেক এই ডানহাতি ফাস্ট বোলার টেস্টে প্রথম উইকেট শিকারের স্বাদ পান আরও আগে। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ইংল্যান্ডের হয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিডনি টেস্টে অভিষেক হয় তার। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নেমেই উইকেটের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালের ২১ মে তিনি সব ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন।
৫. এড জয়েস
জয়েস একজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তিনি হলেন আরেক ক্রিকেটার যিনি ইংল্যান্ড থেকে আয়ারল্যান্ডে গিয়েছিলেন। অনেক ভক্তের মনে থাকার কথা যে, জয়েস একবার ইংল্যান্ডের হয়ে ওপেনিং করেছিলেন। পরে তিনি আয়ারল্যান্ডে চলে যান। তিনি পরপর দুই বিশ্বকাপে ভিন্ন দুটি দলের প্রতিনিধিত্ব করার বিরল কীর্তির মালিক। নিজের দেশকে বাছাইপর্বের বৈতরণী পার হতে সহায়তা করার পর ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে তিনি ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেন। আধুনিক ক্রিকেটে আইরিশদের মধ্যে তিনিই প্রথম ক্রিকেটার যিনি ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন। তবে ইংলিশদের জার্সিতে খুব একটা সাফল্য না পাওয়ায় ফের নিজ দেশে ফিরে যান তিনি। এরপর ২০১১ সালের বিশ্বকাপে তিনি আইরশিদের প্রতিনিধিত্ব করেন।
৬. জেভিয়ার মার্শাল
২০০৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে কানাডার বিপক্ষে ১১৮ বলে ১৫৭ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলার পর জেভিয়ার মার্শাল শিরোনামে এসেছিলেন। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলে এটাই ছিল তার একমাত্র উল্লেখযোগ্য অবদান। তার পরের বছর মার্শাল যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। এমনকি তিনি আমেরিকান ক্রিকেট দলের হয়ে কয়েকটি আন্তর্জাতিক ম্যাচও খেলেছেন।
৭. ইজাতুল্লাহ দৌলতজাই
ইজাতুল্লাহ দৌলতজাই ২০১২ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আইসিসি টি -২০ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের হয়ে খেলেছেন। এমনকি তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য খেলার একাদশেও ছিলেন। কিন্তু আফগানদের হয়ে তার ক্যারিয়ার দীর্ঘায়িত হয়নি। এরপর তিনি জার্মানিতে পাড়ি জমান। ২০১৯ সালে তিনি জার্মানির জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে টি-টোয়েন্টি অভিষেকও হয় তার। এখনও জার্মানি ক্রিকেট দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন এই অলরাউন্ডার।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২১
এমএইচএম