চট্টগ্রাম: পাহাড়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সর্বাধিক উৎপাদিত হানিকুইন সহ বিভিন্ন জাতের আনারসের সরবরাহ বেড়েছে নগরের আড়তগুলোতে। প্রতিদিন ট্রাকভর্তি করে আসছে ছোট-বড় আনারস।
রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চাষ হয় আনারস। পাইকারদের হাত হয়ে এ আনারস ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে।
নগরের স্টেশন রোডের ফলমণ্ডি ও ফিরিঙ্গিবাজার আড়তে চলছে আনারসের জমজমাট বিকিকিনি। চলমান তাপপ্রবাহে এই ফলের কদরও বেড়েছে। শুধু আড়ত নয়, সড়কের ওপরও জমেছে আনারসের স্তূপ।
আড়তদাররা জানান, আনারসের উৎপাদন ভালো হওয়ায় এবার যোগান ভালো আড়তে। তরমুজের পর খুচরা ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি আনারস নিয়ে যান। আর দাম হাতের নাগালে থাকায় সব শ্রেণির ভোক্তারাও কিনতে পারেন।
মেসার্স রূপসী বাংলা ফার্মের মালিক মাহবুবুর রহমান খান বাংলানিউজকে জানান, রাঙামাটির নানিয়ারচর থেকে একটি বড় ট্রাকে ১৮-১৯ হাজার আনারস আসে। ছোট ট্রাকে ৮-৯ হাজার আনারস আসে। প্রতিটি আনারসে গাড়িভাড়া, লাইন খরচ, চাঁদা মিলে তিন-চার টাকা পড়ে। পচনশীল পণ্য হওয়ায় আমরা সীমিত লাভে আনারস বেচে দিই। আনারসের মৌসুম জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত চলবে।
মেসার্স মাটিরাঙা ফার্মের বিক্রয়কর্মী মো. নোমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিনই প্রচুর আনারস আসছে। হলদে রং ধরলেই চাষিরা বাগান থেকে আনারস কেটে নেন। এসব আনারস ছোট হলেও বেশি মিষ্টি। চট্টগ্রামে এ ধরনের আনারসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা খুচরা বিক্রেতারা প্রতি শ’ হিসেবে কিনে বস্তা, রিকশাভ্যানে করে আনারস নিয়ে যাচ্ছেন। পাইকারিতে ছোট আনারস ৮ টাকা, একটু বড় সাইজের আনারস ১০-১২ টাকা, বড় আনারস ২০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আনারস কিনতে আসা আজিজুল করিম জানান, এখন নিয়মিতই আনারস বিক্রি করছেন তিনি। ছোট-বড় মিলিয়ে আনারস কেনেন। আনারস কাটার ঝামেলা রোধে গ্রাহকদের তিনি নিজেই কেটে পরিষ্কার করে পলিথিনে ভরে দেন।
পাইকারি মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী জসীম উদ্দিন জানান, মৌসুমে প্রতি পিস ১০-১৫ টাকা কিনলেও এখন কিনতে হচ্ছে ২০-২৫ টাকা দরে। আমরা এগুলো ৩০-৪০ টাকা দরে বিক্রি করছি।
চিকিৎসকরা বলছেন, ‘দুধ আর আনারস একসঙ্গে খেলে মানুষের মৃত্যু হয়’-কথাটির বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। আইসক্রিম কিংবা মিল্কশেকেও আনারসের সঙ্গে দুধ ব্যবহার করা হয় অহরহ। আনারসে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ থাকে। এ কারণে আনারস খেলে অনেকের অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দেয়। অন্যদিকে অনেকেই দুধ হজম করতে পারেন না। ফলে বদহজম বা পেট খারাপ হয়।
দুধে ল্যাকটোজেন নামের একটি উপাদান থাকে। অনেকের পেটে এই ল্যাকটোজেন সহ্য হয় না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে ল্যাকটোজেন অসহনশীলতা বলা হয়। এই সমস্যাগুলোও দুধ আর আনারস একসঙ্গে খাওয়ার জন্য তৈরি হয় না। সমস্যাগুলো দেখা দেয় আমাদের শারীরিক কিছু সমস্যা বা সীমাবদ্ধতার কারণে।
পুষ্টিবিদ হাসিনা আকতার জানান,আনারস দেহের গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। থাইরয়েড গ্রন্থির স্ফীত হওয়া প্রতিরোধ করে। নিয়ন্ত্রণ করে উচ্চ রক্তচাপ। এটি আথ্রাইটিস উপশমে সহায়তা করে। তা ছাড়া কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে।
ক্ষুদ্রান্ত্রের জীবাণু ধ্বংসে উপকারী আনারস। পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং মর্নিং সিকনেস অর্থাৎ সকালের দুর্বলতা দূর করে। এটি জরায়ু, স্তন, ফুসফুস, অন্ত্র ও ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বার্ধক্যজনিত চোখের ত্রুটি প্রতিরোধে সাহায্য করে। আনারস জ্বর ও জন্ডিস রোগের জন্য বেশ উপকারী।
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২৪
এসএস/এসি/টিসি