চট্টগ্রাম: দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত ‘এনসিটি’ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর আমির শাহজাহান চৌধুরী।
রোববার (২০ এপ্রিল) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক বলেন, বিগত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের কু-নজর পড়ে এই চালুকৃত ও রাজস্ব খাতের মূল চালিকাশক্তি এনসিটি টার্মিনালের ওপর। দেশের অন্যতম অর্থ পাচারকারী ও শেখ পরিবারের প্রধান অর্থ জোগানদাতা সালমান এফ রহমান ব্যাংকসহ দেশের লাভজনক সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে সর্বশেষ এনসিটি টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যেই পদ্ধতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরিকৃত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল দিয়ে দেয়া হয়েছে, সেই একই পদ্ধতিতে এনসিটি টার্মিনালও বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার গভীর চক্রান্ত চলছে। যদি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান না হতো, তাহলে এতদিনে এই এনসিটি টার্মিনালটি বিদেশিদের হাতে চলে যেত। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে গেলেও সরকারের বিভিন্ন স্থানে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকজন, বর্তমান সরকারকে বিভ্রান্তিমূলক বিভিন্ন তথ্য দিয়ে দেশের রাজস্ব খাত শেষ করার জন্য এবং দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হানার জন্য এনসিটি টার্মিনালকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ঘনিষ্ট কিছু লোকজন সরকারের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে থাকা ফ্যাসিস্ট সরকারের এজেন্ডা শেখ পরিবারের অর্থ জোগান দেওয়া অব্যাহত রাখার এবং বর্তমান সরকার ও ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ধুলিস্যাৎ করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে যড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন।
তিনি আশঙ্কা করেন এ টার্মিনালের পাশে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সামরিক ঘাঁটি থাকায় বিদেশিদের হাতে বন্দর তুলে দিলে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার জন্য হুমকি স্বরূপ হতে পারে। এ ছাড়া সর্বপ্রথম ট্যারিফ নির্ধারিত থাকায় সরকার বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হবে। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে আঘাত হানবে। দেশের অর্থনীতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। এনসিটিতে নিযুক্ত চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব দক্ষ কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং উক্ত টার্মিনালে কর্মরত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেশার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকরিচ্যুতির আশঙ্কা সৃষ্টি হবে। প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা বৈধভাবে বিদেশে চলে যাবে (বর্তমান আয়ের ৫০ শতাংশ)। ৫হাজার কোটি টাকা মূল্যের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি হস্তান্তরে চট্টগ্রাম বন্দরের ক্ষতি হবে ৪ হাজার কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দরের স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে। শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেবে। বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। যেহেতু ৫৫ শতাংশ আমদানি রপ্তানি এনসিটি টার্মিনাল দিয়ে হয়ে থাকে তাই বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় যেকোনো সময় চ্যালেঞ্জ তৈরি হলে বিপর্যয় ঘটতে পারে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০১ সালে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) নির্মাণকাজ শুরু করে। এতে ১ হাজার মিটার দীর্ঘ বার্থ রয়েছে যেখানে একই সাথে পাঁচটি জাহাজের মালামাল উঠানামার কাজ করতে পারে এবং ব্যাকআপ ফ্যাসিলিটিজ হিসেবে রয়েছে ২৬ হেক্টর জায়গার ওপর উন্নত প্রযুক্তি সম্বলিত ইয়ার্ড। বর্তমানে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কনটেইনার টার্মিনাল হিসেবে এনসিটি টার্মিনাল বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের মূল আয় আসে এই এনসিটি টার্মিনাল থেকে। গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) এনসিটি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। সর্বোচ্চ আয়ের পাশাপাশি রেকর্ড সংখ্যক কনটেইনার হ্যাল্ডলিং হয়েছে যা আগের বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি। চট্টগ্রাম বন্দরের মোট হ্যান্ডলিংয়ের ৫৫ শতাংশ এনসিটি টার্মিনালে হয়। যা দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। চট্টগ্রাম বন্দরের এই নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) চালু হওয়ার পর এই টার্মিনালকে আধুনিক টার্মিনালে রূপান্তরিত করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক ও উন্নতমানের নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয় করে। যার বর্তমান বাজারমূল্য ৫ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে এই টার্মিনালে কোনো প্রকার বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই এবং টার্মিনালটি স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই টার্মিনালের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর বিশাল রাজস্ব আয় করছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগর নায়েবে আমির ও পরিবেশবিদ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মহানগর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, নগর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ, ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুছ ও মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর এবং চট্টগ্রাম-১০ সংসদীয় আসনের জামায়াত প্রার্থী অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম-৯ সংসদীয় আসনের জামায়াত প্রার্থী ডা. একেএম ফজলুল হক, চট্টগ্রাম-১১ সংসদীয় আসনের জামায়াত প্রার্থী মোহাম্মদ শফিউল আলম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্যসচিব জাহেদুল করিম কচি, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এসএম লুৎফর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব, নগর জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য হামেদ হাসান ইলাহী, আমির হোসাইন, বন্দর থানা আমির মাহমুদুল আলম, চকবাজার থানার নায়েবে আমির আবদুল হান্নান, কোতোয়ালী থানা সেক্রেটারি মোস্তাক আহমদ, বন্দর ইসলামি শ্রমিক সংঘের সেক্রেটারি মোহাম্মদ ইয়াছিন, শ্রমিক নেতা আদনান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২৫
এআর/পিডি/টিসি