চট্টগ্রাম: হাটহাজারীর জোবরা গ্রামে সংঘর্ষে আহত মাথার খুলির অংশবিশেষ হাসপাতালে খুলে রাখা চবি শিক্ষার্থী মামুন মিয়াকে নিয়ে ফটোসেশন হচ্ছে বলে অভিযোগ স্বজন ও সহপাঠীদের। মামুন বর্তমানে বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ফটোসেশনের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানা গেছে, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আতিয়ার রহমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চিকিৎসাধীন মামুন মিয়াকে হাঁটানোর ছবি ও ভিডিও শেয়ার করেছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বিগত কয়েকদিন থেকে আলোচনায়।
সবশেষে বাকি অসুস্থদের জন্য অনেক অনেক দোয়া যেন দ্রুতই সবাই সুস্থ হয়ে ওঠে। এ বিশ্ববিদ্যালয় আমার দুই দশকেরও বেশি সময়ের বিচরণভূমি। যেখানেই থাকি এর ছোট বড় সব ঘটনা স্পর্শ করে, কোন কোনটি ভীষণ পোড়ায়। যাইহোক, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় স্টেইক তাদের পদচারণায় দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয় মুখরিত হোক সেটি ভীষণ প্রত্যাশা করি। সমাধান হোক সব অস্থিরতা, আক্রোশ-পাল্টা আক্রোশের অনুসঙ্গগুলোর।
পুনশ্চ: যারা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজেদের জমিদারি বলে দাবি করে, এরকম মানুষদের প্রতিনিধিত্ব করতে দেখা যে কারো জন্যই অসহ্যের। অগ্রহণযোগ্য। যে দলেরই হোক। বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয় জ্ঞান তৈরি, বিতরণ আর আলো ছড়াবার জন্য, জমিদারি চর্চার জন্য নয়। ’
উপাচার্যের স্ট্যাটাসেই মো. রবিউল মোল্লা কমেন্ট করেছেন ‘ফটোসেশন’। এরপর উপাচার্য জবাবে বলেন, আসলে এটা ফটোসেশন না। ডাক্তার রোগীর মনোবল বাড়ানোর জন্যই হয়তো করেছেন।
এরপর রবিউল পাল্টা কমেন্টে বলেন, অসুস্থ মানুষ ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছে না। জোর করে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা হচ্ছে। মনোবল বাড়ানোর জন্য আরো উপায় আছে। ডাক্তার যদি সত্যি এটা করে থাকে, ওনাকে লাল সালাম।
খন্দকার রিদওয়ান হোসাইন কমেন্ট করেছেন, যেই মানুষের মাথার খুলি ফ্রিজে রাখা এমন একজনকে দাড়া করিয়ে ছবি তুললেন, সেটা অনলাইনে প্রচারও করছেন।
মো. নাফিজ মাহমুদ লিখেছেন, ওর মাথায় খুলির হাড়টা নাই স্যার, আপনার কাছে এমন ফুটেজ ব্যবসা আশা করি নাই। বেয়াদবির জন্য সরি।
মামুন হাঁটছে না, অনেকটা জোর করে হাঁটানো হয়েছে। তার রুম এটেন্ডেন্ট ও বন্ধু রাসেল রানা ভিন্ন কথা বলেছে, তার মতে এটা প্রশাসনকতৃক পরিস্থিতি 'স্বাভাবিক প্রতিকায়ণের' একটি অংশ।
মামুনের ব্যাচমেন্ট পরিচয় দিয়ে ওয়ালিদুর রহমান রাফিজ লিখেছেন, মামুন হাঁটছে না, অনেকটা জোর করে হাঁটানো হয়েছে। তার রুম অ্যাটেন্ডেন্ট ও বন্ধু রাসেল রানা ভিন্ন কথা বলেছে, তার মতে এটা প্রশাসনকর্তৃক পরিস্থিতি 'স্বাভাবিক প্রতিকায়ণের' একটি অংশ।
পার্কভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ টি এম রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চবি শিক্ষার্থী মামুন মিয়ার অবস্থা ক্রমে উন্নতি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে তাকে হাঁটাচলার চেষ্টা হয়েছে। রোগীর আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য হাঁটানো হয়। এ সময় উপাচার্য স্যার তাকে দেখতে এসেছেন। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মাথার খুলি খুলে রেখে চিকিৎসায় আমাদের হাসপাতালের খ্যাতি আছে। আশাকরি দেড় মাস পর মামুনের মাথার খুলি পুনস্থাপন করা সম্ভব হবে।
এদিকে মামুনের ভাই মাসুদ রানা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমার ভাইটার মাথার খুলি এখনো জোড়া লাগানো হয়নি। তাকে বলা হচ্ছে সুস্থ। আমি কিছুক্ষণের জন্য রুমে ছিলাম না। পরে মামুনের বন্ধুরা আমাকে জানায়, তাকে হাঁটানো হয়েছে। ফটোসেশন-ভিডিও করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, সে সুস্থ। অথচ সে কাউকে চিনতে পারছে না। এ অবস্থায় তাকে কীভাবে হাঁটানো হলো? আমি খুব কষ্ট পেয়েছি, মনটা ভেঙে গেছে। ’
গত ৩০ আগস্ট রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকার তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এর জেরে ৩১ আগস্ট দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় দুই পক্ষের মধ্যে। এতে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত। তাদের মধ্যে তিনজনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় আইসিইউতে রাখা হয়। পরে একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
এআর/পিডি/টিসি