চট্টগ্রাম: নগরের সড়কগুলোতে ৪৪ শতাংশ যানবাহনই বিআরটিএর নির্ধারিত গতিসীমা মেনে চলে না। যানবাহনের ধরন অনুযায়ী দেখা যায়, ৭০ শতাংশ মোটরসাইকেল চালক গতিসীমা অমান্য করেছেন, যা নগরে রোড ক্র্যাশের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।
চট্টগ্রাম শহরে সড়ক ব্যবহারে আচরণগত ঝুঁকি পর্যবেক্ষণে পরিচালিত এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নগরের জিইসির একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে এই জরিপের ফল তুলে ধরা হয়।
বৈশ্বিক সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেইফটি (বিআইজিআরএস) কর্মসূচির আওতায় জেএইচ-আইআইআরইউ ও সিআইপিআরবি যৌথ উদ্যোগে ‘রোড সেফটি রিস্ক ফ্যাক্টরস ইন চট্টগ্রাম: স্ট্যাটাস সামারি রিপোর্ট ২০২৪’ শিরোনামে এ জরিপ পরিচালিত হয়।
চসিক প্রধান প্রকৌশলী বলেন, একটি শহরের আয়তনের তুলনায় যে পরিমাণ সড়ক থাকা প্রয়োজন, চট্টগ্রামে তা নেই। তা ছাড়া বিভিন্ন বাস্তবিক কারণে সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষে সব মানদণ্ড শতভাগ অনুসরণ করা সম্ভব হয় না। তবে আমরা আশাবাদী ভবিষ্যতে আমরা এই জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারবো। নগরে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা চসিকে একটি রোড সেফটি সেল করতে যাচ্ছি। যারা সড়কগুলোতে স্পিড সাইন ও গতি নিয়ন্ত্রক বসানোর মতো কারিগরি কাজগুলো সমন্বয় করবে। আমি বিশ্বাস করি, আজকের এই জরিপের ফলাফল আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়ক হবে। গ্রিন, ক্লিন ও হেলদি সিটি বিনির্মাণে আমরা কাজ করছি। নিরাপদ সড়ক হেলদি সিটির অন্যতম পূর্বশর্ত।
সিআইপিআরবির রোড সেফটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক কাজী বোরহান উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ শাফকাত আমিন। এসময় তথ্য সংগ্রহের স্থান নির্বাচন, তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিসহ পুরো জরিপ প্রক্রিয়ার বিবরণ দেন সিআইপিআরবির পরিচালক ড. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ২০২৪ সালের মে মাসে মোটরযানের গতিসীমা সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রকাশ করেন। এতে হাইওয়ে ও এক্সপ্রেসওয়ের জন্য যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করা হয় ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। পাশাপাশি সড়ক ও যানবাহনের ধরন অনুযায়ী যানবাহনের গতিসীমা বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে কর্তৃত্ব দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে জরিপের ফল উপস্থাপন করেন জেএইচ-আইআইআরইউ-এর গবেষক ডা. শিরিন ওয়াধানিয়া। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি রোড সেফটি রিপোর্ট ২০২১-২৩ অনুযায়ী, নগরে রোড ক্র্যাশে নিহতদের ৯২ শতাংশই ছিলেন ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক-ব্যবহারকারী, যেমন পথচারী, মোটরসাইকেল, থ্রি-হুইলার আরোহী ইত্যাদি।
ডিসেম্বর ২০২২ থেকে নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত বৈশ্বিক মানদণ্ড বিবেচনায় (আর্টেরিয়াল সড়কে ৫০ কিমি/ঘণ্টা ও লোকাল ও কালেকটর রোডে ৩০ কিমি/ঘণ্টা) যানবাহনের গতি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, নগরের সড়কগুলোতে ৩৪ শতাংশ যানবাহনই নির্ধারিত গতিসীমা লঙ্ঘন করেছে। অন্যদিকে লোকাল ও কালেকটর রোডে, ৪৫ শতাংশ যানবাহন নির্ধারিত গতিসীমা অমান্য করেছে। অবশ্য বিআরটিএর গতিসীমা নির্দেশিকা অনুসারে দেখা যায়, সব ধরনের যানবাহন ও রাস্তা বিবেচনায় ৪৪ শতাংশ যানবাহন নির্ধারিত গতিসীমার চেয়ে বেশি গতিতে চলে।
তিনি বলেন, ৭০ শতাংশ মোটরসাইকেল নির্ধারিত গতিসীমা লঙ্ঘন করেছে। এ ছাড়া সপ্তাহের কর্ম দিবসের তুলনায় ছুটির দিনে গতিসীমা লঙ্ঘনের হার বেশি পাওয়া গেছে; কর্ম দিবসে ৪২ শতাংশ ও ছুটির দিনে ৪৭ শতাংশ।
নগরীর সড়কগুলোকে নিরাপদ করার জন্য গতিসীমা নির্দেশিকা অনুসারে গতি নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেন শিরিন ওয়াধানিয়া। তিনি বলেন, সড়কগুলোতে প্রয়োজন অনুসারে গতি নিয়ন্ত্রক, স্পিড সাইন ও যানবাহনের ধরন অনুসারে লেন নির্ধারণ করা জরুরি।
পাশাপাশি পথচারীবান্ধব সড়ক নির্মাণের ওপর জোর দেন তিনি। সেই সাথে গতিসীমা বাস্তবায়নের জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশকে (সিএমপি) আহ্বান জানান তিনি।
বক্তব্য দেন বিআরটিএর উপ-পরিচালক (প্রকৌশল) কেএম মাহাবুব কবির ও সিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক উত্তর) রুহুল আমিন।
এআর/পিডি/টিসি