চট্টগ্রাম: শরতের রুপালি আলো ফিকে হয়ে আসে, আকাশে জমে ওঠে হালকা ধূসর নীরবতা। ঠিক সেই সময়ই হেমন্ত নামে নিঃশব্দে, মৃদু হাওয়ার ডানায় ভর করে।
ধানের শীষে তখন সোনার আলো নাচে, মাঠের প্রান্তে কৃষকের মুখে ফুটে ওঠে পরিশ্রমের হাসি।
ষড়ঋতুর বাংলাদেশে প্রকৃতির নানান বৈচিত্র্যের মুখোমুখি হতে হয়। পরিবেশবিদরা বলছেন, ঋতু পরিবর্তনের যে ভিন্নতা এখন দেখা যাচ্ছে, এর মূল কারণ জলবায়ুর প্রভাব আর ভৌগোলিক অবস্থান। কার্তিক মাসের শুরুতেও তাই মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঝড়-বৃষ্টি লেগেই আছে।
পাশাপাশি সারাবছরই লেগে থাকছে রোগ-ব্যাধি। হাসপাতালগুলোতে শীতকাল ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময়ে আসছে ইনফ্লুয়েঞ্জার (শ্বাসতন্ত্রে ভাইরাসজনিত সংক্রমণ) রোগী। জ্বর, সর্দি-কাশি লেগে থাকছে প্রায়ই। একইসাথে বাড়ছে চর্মরোগ। যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে, হেমন্তের এই সময়টাতে তাদের শ্বাসনালী, ব্রঙ্কিয়াল টিউবের প্রদাহ বাড়ে। গবেষকদের মতে, ৪০ শতাংশ মানুষ মৌসুম পরিবর্তনের সময় হিউম্যান রাইনোভাইরাসের (এইচআরভি) কারণে অসুস্থ হন।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর ফলে চট্টগ্রাম বিভাগে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হচ্ছে।
কার্তিক মাসের যাত্রা শুরু হয়েছে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর)। মাস শেষে আসবে অগ্রহায়ণ। এই হেমন্তের প্রাণ ‘নবান্ন’ উৎসব। মাঠভরা সোনালী ধান আর বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে নবান্ন উৎসব। নতুন ধানের গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে, কৃষক ধান কেটে গোলায় তোলে।
চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার বোরো মৌসুমে চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলায় (চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর) বোরো আবাদ হয়েছে ২ লাখ ৯৮ হাজার ৬৫৮ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয়েছে ১২ লাখ ৯৭ হাজার ৫৫৬ টন চাল। মোট ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৩ হেক্টর হাইব্রিড ধানের আবাদ হয়। উৎপাদন হয়েছে ৭ লাখ ৬ হাজার ১৮৩ টন চাল। উফশী ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪০ হেক্টরে আবাদে উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৯০ হাজার ৯৮৪ টন এবং ১৮৫ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধানে উৎপাদন হয়েছে ৩৮৮ টন চাল। হেক্টরপ্রতি হাইব্রিডে গড় উৎপাদন ৪ দশমিক ৮৮ টন, উফশী ৩ দশমিক ৮৫ টন ও স্থানীয় জাতের গড় উৎপাদন ২.১০ টন। শুধু চট্টগ্রাম জেলায় বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৬৯ হাজার ৩৪৯ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ২৫০ টন চাল।
চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলে এবার আমন মৌসুমে ১৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে উপজেলা কৃষি অফিস। এরইমধ্যে বিলের ৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে ব্রি ধান-৪৯, ৫১, ৫২, ৭৫, ১০৩, কাটারী, সাদা পাইজামসহ বিভিন্ন উন্নতজাতের আমন আবাদ করা হয়েছে। ব্রি ধান ৭৫, ১০৩ এবং হাইব্রিড জাতের ধান আছে কৃষকের ঘরে যাওয়ার অপেক্ষায়।
হেমন্ত এক নীরব কবিতা- যার শব্দ মাটির গন্ধে, যার সুর ধানের শীষে, যার ছন্দ বাতাসের মৃদু নড়াচড়ায়। সে আসে বলার জন্য নয়, অনুভব করানোর জন্য। প্রকৃতি তখন বলে ওঠে নিঃশব্দে-‘সব প্রাপ্তির শেষে একটু বিশ্রাম, চাই একটু শান্তি’।
এসি/টিসি