চট্টগ্রাম: তৃতীয় কর্ণফুলি সেতু কিংবা শাহ আমানত সেতু যে নামেই ডাকা হোক না কেন, দৃষ্টিনন্দন এ সেতু পার হয়েই কক্সবাজার-বান্দরবান থেকে ঢুকতে হয় চট্টগ্রাম শহরে। নিশুতি রাতে সেই সেতুর উপর দাঁড়ালে চোখে পড়ে কর্ণফুলীর জলে জ্যোৎস্নার মিতালি।
শহরের সেই প্রবেশদ্বারে প্রতি রাতে প্রহরী হয়ে জেগে থাকেন ওরা কয়েকজন।
সোমবার গভীর রাতে সেই প্রবেশদ্বারে ঘুরে পাওয়া গেছে দ্বাররক্ষীদের। সেতুর পূর্ব প্রান্তে চেকপোস্টে অথবা সেতুর উপরে ঘুরে ঘুরে তারা তল্লাশি চালাচ্ছেন বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার কিংবা সিএনজি অটোরিক্সায়।
সেতুর উপরে কক্সবাজার থেকে আসা একটি প্রাইভেট কারে তল্লাশি চালাতে গিয়ে ধমকও খেতে হল কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের। আবার কোন কোন গাড়িকে দেখা গেল থামানোর সংকেত না মেনেই দ্রুত চলে যেতে।
এএসআই কামাল হোসেন খান জানালেন, প্রবেশদ্বার দিয়ে সবচেয়ে বেশি ঢুকে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ভুক্ত মায়ানমারের নাগরিক আর মরণনেশা ইয়াবা। গত অক্টোবরে তিনি ১১ জন রোহিঙ্গাকে ধরে থানায় সোপর্দ করেছেন। সপ্তাহখানেক আগে তিনি সেন্টমার্টিন পরিবহনের একটি বাসে তল্লাশি করে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ সুপারভাইজারকে আটক করেছেন। এর আগে শ্যামলী গাড়ি থেকেও তিনি ইয়াবা উদ্ধার করেন।
তবে সম্প্রতি জামায়াতের ডাকা একটি হরতালের আগের রাতে তল্লাশি চালিয়ে ৪৪ রাউণ্ড গুলিও উদ্ধার করেছেন বলে তিনি জানান।
এএসআই কামাল বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় প্রতি রাতেই সেতু দিয়ে ইয়াবার চালান ঢোকার সময় ধরা পড়ে। সাধারণত টেকনাফের গরীব লোকজনই ইয়াবা ক্যারিয়ারের সঙ্গে যুক্ত।
কনস্টেবল সিরাজুল ইসলাম জানালেন, প্রবেশপথে তারা প্রতি রাতে কমপক্ষে এক’শ বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিক্সায় তল্লাশি করেন। সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে ট্রাকেও তল্লাশি চালান।
তারা জানান, রাতে প্রবেশপথে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতারও সম্মুখীন হন। দুই-তিন মাস আগে এক তরুণী প্রেমিকের উপর রাগ করে নদীতে ঝাঁপ দিতে আসেন। কনস্টেবল জয়নুল দেখতে পেয়ে তাকে ধরে ফেলেন।
প্রায় প্রতিদিনই গভীর রাতে অভিজাত পরিবারের ছেলেরা প্রাইভেট কার কিংবা মাইক্রোবাসে চড়ে চলে আসেন সেতুতে। উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে, গান গেয়ে কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে তারা আবার ফিরে যান।
আবারও কখনও কখনও দুর্ঘটনাও স্বচক্ষে দেখেন প্রবেশপথে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা। তখন দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি, হতাহতদের উদ্ধার, দায়িদের গ্রেপ্তার করা নিয়ে তাদের ব্যস্ত সময় পার করতে হয়।
এএসআই কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি রাতে ছয় জন করে প্রবেশপথে পাহারা দিই। শুধু রিকভারি নয়, দুস্কৃতকারিদের প্রতিরোধ আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার কাজও আমরা করি। প্রবেশপথকে সুরক্ষিত রাখাই আমাদের মূল দায়িত্ব।
কনস্টেবল শাহাদাৎ ও সিরাজুল বাংলানিউজকে বলেন, শীতের মধ্যে রাতের বেলা ডিউটি করতে খুব কষ্ট হয়। কঠিন শীতে আস্তে আস্তে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। তখন মনে হয়, পুলিশের চাকরি করতে না এলে ভাল করতাম। আবার মাঝে মাঝে এ দায়িত্ব আমাদের আনন্দও দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৫১০ঘণ্টা, জানুয়ারী ০৬,২০১৪