ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

জঙ্গিরা ছক কষছে, মমতাকে সতর্ক করলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি

কলকাতা ব্যুরো | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১২
জঙ্গিরা ছক কষছে, মমতাকে সতর্ক করলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি

কলকাতা: সম্প্রতি কলকাতা ঘুরে যাওয়া মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েল মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে জঙ্গিদের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন। `জঙ্গিরা ছক কষছে, মুখ্যমন্ত্রীকে সতর্ক করলেন ন্যান্সি` শিরোনামে আনন্দবাজার পত্রিকার রোববারের সংখ্যায় প্রথম পাতায় ছাপা এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে রাজ্যে।



কলকাতায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েল মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে একান্ত বৈঠকে জঙ্গিদের সম্ভাব্য নাশকতা সম্পর্কে তাকে সতক করেন।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে নতুন উদ্যমে তালেবানি নাশকতামূলক কাজকর্ম বাড়ানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে বলে মনে করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েল সম্প্রতি মহাকরণে একান্ত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন।

খুব অল্প সময়ের মধ্যে মমতার সঙ্গে এই দ্বিতীয় বৈঠকে ন্যান্সি মার্কিন গোয়েন্দাদের সংগৃহীত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মমতাকে জানিয়েছেন। ন্যান্সি-মমতা আলোচনার সময়ে হাজির ছিলেন কলকাতার মার্কিন কনসাল জেনারেলও।

তবে ন্যান্সি পাওয়েল বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি নিয়ে মমতার সঙ্গে কোনও আলোচনা করেননি। এমনকি তিস্তা চুক্তি নিয়েও তাদের মধ্যে কোনও কথা হয়নি।

মুখ্যমন্ত্রীকে ন্যান্সি জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে বহুদিন ধরেই ভারতে জঙ্গি অনুপ্রবেশ হচ্ছে। ঢাকায় কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে জঙ্গি নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারেরও উচিত বাড়তি সতর্ক থাকা। কারণ দশ বছর পর ফের কলকাতায় নাশকতার চক্রান্ত করছে জইশ-ই-মহম্মদ এবং ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন।

এদের সঙ্গে রয়েছে হরকত-উল-মুজাহিদিন বা হুজি এবং নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন সিমি। হিলারি ক্লিন্টনও তার কলকাতা সফরে মমতার সঙ্গে নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও বাংলাদেশ নিয়ে সবিস্তার আলোচনা করেছিলেন।

এবার ন্যান্সির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের দু’দিন আগেই ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ সারন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।

তিনিও মমতাকে জানিয়েছেন, হাসিনা সরকার কীভাবে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সাহায্য করে চলেছে।

নতুন পথে নাশকতা হতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় ছিটমহলগুলিতে মেয়েদের অস্ত্রপ্রশিক্ষণ হতে পারে, সেউটি, দহলা-খাগড়াবাড়ি ও কাজলদিঘি ছিটমহল বিপজ্জনক, উত্তরবঙ্গ থেকে সংখ্যালঘু ছাত্রীদের নিয়োগ করা হচ্ছে, ১৫-২৫ বছরের মেয়ে বাছা হচ্ছে, কিছু জঙ্গি পালিয়ে কলকাতার উপকণ্ঠে বাস করছে, শেয়ারবাজারেও জঙ্গিরা বিপুল অর্থ লগ্নি করেছে, জঙ্গি নিয়ন্ত্রণে চলছে হুন্ডি-হাওয়ালার ব্যবসাও।

শনিবার মমতা বলেন, “জঙ্গি অনুপ্রবেশ ও নাশকতার চক্রান্তের বিষয়টি নিয়ে আমরা যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। দিল্লি ও বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই আমরা এ বিষয়ে যা করণীয় করছি। ”

প্রতিবেদনে বলা হয় ওয়াশিংটনের মতে, “বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগত অবস্থান বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত ৪০৯৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত প্রায় ২২১৭ কিলোমিটার। এর আগে যখন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামির জোট সরকার ক্ষমতায় ছিল, তখন বাংলাদেশ যেমন আইএসআইয়ের অর্থে পুষ্ট জঙ্গিদের ঘাঁটিতে পরিণত হয়, ভারতে জঙ্গি অনুপ্রবেশের ঘটনাও বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিল। ”

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্র বলছে, ’৯১ সালে দাউদ ইব্রাহিম মুম্বাইয়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটানোর পরে ভারতীয় ও মার্কিন গোয়েন্দারা পশ্চিম উপকূলবর্তী এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করে। আর তখনই পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই জঙ্গি অনুপ্রবেশের জন্য পূর্বাঞ্চলকে বেছে নেয়।

শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়ে দিল্লি আসার পরে মনমোহন সিংহের সঙ্গে  যৌথ অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষর করেন। তাতে সীমান্ত সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া ও তিস্তা চুক্তি নিয়ে বোঝাপড়ার আশ্বাস দিয়েছিল নয়াদিল্লি। অপরদিকে নিরাপত্তা ও বন্দি বিনিময়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ঢাকা।

হাসিনা ও তার বিদেশমন্ত্রী দীপু মনি ঘোষণা করেছিলেন, বাংলাদেশের জমিকে ভারত-বিরোধী কার্যকলাপে ব্যবহৃত হতে দেওয়া হবে না।

এদিকে, অনেকের ধারণা, কলকাতাকে নিরাপদ ‘করিডর’ রাখার জন্য জঙ্গিরা এখানে হয়তো বড় ধরনের নাশকতা ঘটাবে না। কিন্তু এফবিআই এ ব্যাপারে ততটা নিশ্চিত নয়।

পুলিশ কমিশনার রঞ্জিত পচনন্দা তাই উৎসব মরসুম শুরুর আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আঁটোসাঁটো করার পরিকল্পনা করেছেন।

প্রসঙ্গত, জঙ্গিদের বিষয়ে আমেরিকা ও ভারতের গোয়েন্দারা যাবতীয় তথ্য আদানপ্রদান করে চলে। দিল্লিতে এ জন্য শাখাও খুলেছে এফবিআই।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গোয়েন্দারা দীর্ঘদিন লেগে থেকে পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গিদের কাজকর্মের ধারা নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছেন। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, কয়েকটি ভারতীয় ছিটমহল কার্যত জামায়াতে ইসলামির ঘাঁটি হয়ে উঠেছে। তাদের সংগঠনের আড়ালেই জঙ্গিরা এইসব ছিটমহলে অস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে, এমন ইঙ্গিত মিলেছে। এখানে মূলত আনকোরা মেয়ে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

গোয়েন্দারা খবর পেয়েছেন, ভারতের শেয়ার বাজারে গত কয়েক বছরে বিপুল টাকা লগ্নি করেছে বাংলাদেশি জঙ্গিরা। বাংলাদেশ থেকে হাওয়ালায় যে বিপুল টাকা আসে কলকাতার বড়বাজারে, তা-ও কার্যত জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণেই চলে। এইসব বিষয় ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও জানানো হয়েছে।

একইসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যও যাতে সতর্ক হয়, সেটাই চাইছে আমেরিকা।

জানা গেছে, দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক করিমও নিরপত্তা প্রসঙ্গে মমতার সঙ্গে বৈঠক করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনারের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ইতিমধ্যে নানা অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎ হয়েছে।

প্রতিবেদন মতে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েল চাইছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় মমতা যাতে বাড়তি যত্নশীল হন। মমতাও পাওয়েলকে বলছেন, তিনি বাংলাদেশ-বিরোধী নন। তবে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থের কথা ভেবেই তিনি তিস্তা চুক্তি নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। নদী দিয়ে কত জল গড়ায়, তার বিস্তারিত হিসেব হাতে থাকলে ভাগাভাগিতে সুবিধা হবে। সে জন্যই দেরি হচ্ছে।

জানা গেছে— সীমান্ত, বিশেষ করে ছিটমহল সমস্যা নিরসনে ইতিমধ্যেই রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে একটা বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে। ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ সারনের মতে, সীমান্ত সমস্যা মেটা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। সম্ভবত সংসদের আগামী অধিবেশনেই এ জন্য বিল আনছে সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১২ ঘণ্টা, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
আরডি/সম্পাদনা: আহ্‌সান কবীর, আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।