ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে মাটির নিচে ব্যবহার উপযোগী ক্যাবল

জাফর আহমদ, হবিগঞ্জ থেকে ফিরে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২৩
দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে মাটির নিচে ব্যবহার উপযোগী ক্যাবল

ঢাকা: মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য মিডিয়াম ভোল্টেজ বা হাই টেনশন (এইচটি) ক্যাবলের উৎপাদন শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। সিলেটের হবিগঞ্জে শিল্প পার্কে বিজলী ক্যাবল নামে এ পণ্যের উৎপাদন শুরু করেছে ব্যবসায়ী সংগঠন আরএফএল’র অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রংপুর মেটাল ইন্ডাট্রিজ।

নতুন এ ব্যবসার কারণে সাশ্রয় হবে বৈদেশিক মুদ্রার সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান।

বিদ্যুতের লাইন ভূমির ওপর থেকে নিচে নামাতে বার্ষিক চাহিদা এক হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ ভাগ দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। বাকি ৮০ ভাগ আমদানি করা হয়। চীন, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এ ক্যাবল বা তারের আমদানি হচ্ছে।  

বিজলী ক্যাবলের উৎপাদন ক্ষমতা চার হাজার মেট্রিক টন। দেশের বাজারের কথা বিবেচনা করে নতুন করে ৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পর প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২০ কোটি টাকার ওপরে। মাটির নিচে ব্যবহার করা ক্যাবল স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হলে বিজলী ক্যাবলের উৎপাদন ক্ষমতা আরও বাড়ানোরে আগ্রহের কথা জানিয়েছে আরএফএল কর্তৃপক্ষ।

আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল বলেন, বিজলী ক্যাবলস নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে পরিবেশবান্ধব ক্যাবলস উৎপাদন করে থাকে। অত্যাধুনিক ইউরোপীয় প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করে ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ বিশুদ্ধ কপার দিয়ে উৎপাদন করা হয়। স্পেক্ট্রোমিটার যন্ত্রের মাধ্যমে এর কপারের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা হয়। তাছাড়া নিরাপত্তার জন্য এটিও সমৃদ্ধ অগ্নিপ্রতিবন্ধক পিভিসি ইনসুলেশন ব্যবহার করা হয়। বিজলী ক্যাবলসের কপারগুলোর কন্ডাক্টিভিটি ১০১ ভাগ, ফলে সঠিক মাত্রায় বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। এর ফলে বিদ্যুৎ বিল কম আসে।

মিডিয়াম ভোল্টেজ বা হাই টেনশন (এইচটি) ক্যাবল তৈরি করতে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ১ লাখ ২০ হাজার স্কয়ার ফিটের আলাদা কারখানা স্থাপন করেছে। ২০১৩ সালে ডোমেস্টিক ক্যাবল উৎপাদনের মাধ্যমে বিজলী ক্যাবলসের যাত্রা শুরু। বর্তমানে সরকার বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য মাটির ওপরের পরিবর্তে (ওভারহেড কন্ডাক্টর) নিচ দিয়ে ( আন্ডারগ্রাউন্ড বা মিডিয়াম ভোল্টেজ) ক্যাবলের মাধ্যমে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানীর ধানমন্ডি ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাটির ওপরের ক্যাবল অপসারণ করে নিচে প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।

মিডিয়াম ভোল্টেজ ক্যাবলের চাহিদা পূরণে স্থানীয় ভাবে বিজলী ক্যাবল ছাড়াও হাতে দুই থেকে তিনটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা এ ক্যাবল উৎপাদন করছে। শুধু মিডিয়াম ভোল্টেড ক্যাবলই নয়, সম্প্রতি এইচডিএমআই (হাই-ডেফিনিশন মাল্টিমিডিয়া ইন্টারসে) ও ইউএসটি (ইউনিভাগি সিরিয়াল বাস) ক্যাবল বাজারে এনেছে বিজলী ক্যাবলস। মোবাইল চার্জার, ডাটা ট্রান্সফারসহ নানা কাজে এইচডিএমআই ও ইউএসবি ক্যাবল ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে এ দুটি ক্যাবলসের বার্ষিক বাজার প্রায় ২৫০ কোটি টাকা, যার অধিকাংশ আমদানি নির্ভর। আমদানি নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্য নিয়ে এ দুটি পণ্য বাজারে এনেছে আরএফএল গ্রুপ।

বিজলী ক্যাবল কর্তৃপক্ষ মনে করছে, এ দুটি পণ্য ভোক্তদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে এইচডিএমআই ইউএসবি ক্যাবলস বাজারে শেয়ারের বড় অংশ করবে।

শুধু মিডিয়াম ভোল্টেজ ক্যাবল বা এইচডিএমআই বা ইউএসবি ক্যাবলস না, দেশে সব ধরনের তারেরই চাহিদা বাড়ছে। মূলত বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদন বাড়ার কারণে বৈদ্যুতিক তারের বাজার আরও বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক তারের মোট বাজার প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার। ১০ বছর আগে ক্যাবলসের মোট বাজার ছিল অনুমানিক ২ হাজার কোটি টাকার। বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ২০ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে ক্যাবলস শিল্পের বিকাশে অন্যতম বড় বাধা কাঁচামালের উচ্চ শুল্কহার। বাংলাদেশের ক্যাবলস শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের প্রায় শতভাগ আমদানিনির্ভর। কাঁচামালের আমদানি শুল্ক গড়ে প্রায় ৪০ ভাগ, অন্যদিকে ক্যাবলস আমদানি করলে গড়ে শুল্ক দিতে হয় ৪৫ ভাগ। ফলে স্থানীয় শিল্প যেভাবে বিকাশ হওয়ার কথা, সেভাবে বিকশিত হচ্ছে না। দেশে বর্তমানে ব্যবহৃত ক্যাবলসের প্রায় ৩০-৩৫ ভাগ আমদানি করা হয়। এসব ক্যাবলসের প্রায় ৪০ ভাগ ডোমেস্টিক কার্যক্রমে ব্যবহার করা হয়। আর প্রায় ৬০ ভাগ প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়।

বিজলী ক্যাবলসের ফ্যাক্টরি হেড মো. আবুল বাশার বলেন, আমাদের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৫ ভাগ। বর্তমানে চারটি উৎপাদন কারখানা রয়েছে। এসবের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ২৬ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। বিজলী ক্যাবলসে বর্তমানে ১ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন। ২০২১ সালে রপ্তানি শুরু করা বিজলী ক্যাবলস ভারতেও রপ্তানি করছে। ভবিষ্যতে আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে বিজলী ক্যাবলস রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২৩
জেডএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।