ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

এমটিএফইর ফাঁদে ফেনীর হাজার গ্রাহকের ৫০ কোটি 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২৩
এমটিএফইর ফাঁদে ফেনীর হাজার গ্রাহকের ৫০ কোটি 

ফেনী: ফেনী শহরের নাজির রোডের এক নারী গত এক বছরে দুবাইভিত্তিক অবৈধ অনলাইন গ্যাম্বলিং ক্রিপ্টো ট্রেডিং করা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি এমটিএফইতে ২০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছিলেন। এতদিন নিজেকে লাখপতি ভাবলেও হঠাৎ করে কোম্পানিটি লাপাত্তা হওয়ায় নিজের বিনিয়োগকৃত সকল টাকা হারিয়েছেন ওই নারী।

 
 
একইভাবে শহরের একজন নামকরা ব্যাংকার এমটিএফইর এজেন্ট এক বন্ধুর কথায় বিশ্বাস করে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা হারিয়েছেন। ওই ব্যাংকার জানান, এ বিনিয়োগে প্রথম সারিতে রয়েছেন এমন এক বন্ধুর অনুরোধে বিনিয়োগ করতে হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ৫০১ ডলার বা ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে দিন শেষে ৫ হাজার টাকা লাভ দিতো অবৈধ অনলাইন গ্যাম্বলিং কোম্পানি এমটিএফই। অবৈধ কিন্তু এমন লোভনীয় আয়ের খাতে বিবেচনাহীনভাবে লগ্নিকারীদের মধ্যে আরও রয়েছেন রাজনৈতিক নেতা, প্রবাসী, প্রবাসীদের পরিবারের সদস্য, উঠতি তরুণসহ ফেনীর বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ।

এমন বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলেও তারা কেউই নাম প্রকাশ করতে চাননি। তবে তাদের তথ্যমতে, ফেনীর প্রায় হাজারখানেক মানুষ এতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। অনেকে গয়না এবং মূল্যবান সামগ্রী বন্ধক রেখেও বিনিয়োগ করেছিলেন।  

ভুক্তভোগীদের একজন অভিযোগ করেন, গত ৫ আগস্ট শহরের একটি দামি রেস্টুরেন্টে এমটিএফইতে বিনিয়োগে উৎসাহী করে তুলতে আলোচনা ও রাতের ভোজের আয়োজন করেন কোম্পানির এজেন্ট নামে পরিচিত সালাহউদ্দিন আকবর নামে এক ব্যক্তিসহ তার সহযোগীরা। সেদিন রাতে ওই সভায় ২২০ বিনিয়োগকারী অংশগ্রহণ করে রাতের ভোজে অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে শহরের মিজান রোডের এক বাসিন্দা জানান, সভায় মূলত বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এই বিনিয়োগকে শতভাগ নিরাপদ ও লাভজনক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা এবং ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন অবৈধ এবং নিষিদ্ধ। বেআইনি হলেও নিজেকে এমটিএফইর এজেন্ট বলে দাবি করা এবং অসংখ্য মানুষকে প্রভাবিত করার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে সালাহউদ্দিন আকবরকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার সাড়া মেলেনি। তার হোয়াটসএ্যাপে বার্তা পাঠানো হলে তা দেখেও তিনি প্রত্যুত্তর করেননি। এরপর আরও একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

দুবাইভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম পঞ্জি মডেলে ব্যবসা করত। ভারত ও বাংলাদেশ থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিনিয়োগকারী ছিল। তবে অধিকাংশই বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী বলে অভিমত সাইবার বিশ্লেষকদের।  

বিনিয়োগকারীরা বলেন, শুক্রবার (১৮ আগস্ট) রাতে সব টাকা খুইয়েছেন বলে তারা নিশ্চিত হন।  

এর আগের ১৫ দিন টেকনিক্যাল প্রব্লেম বলে এই কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের কমিশন বন্ধ রেখেছিল। এখানে যারা টাকা দিচ্ছিলেন তারা আর টাকা তুলতে পারছিলেন না। বৃহস্পতিবার থেকে আর কোনো লেনদেন করা যায়নি। শুক্রবার পুরোপুরিভাবে এমটিএফই তাদের সিস্টেম বন্ধ করে দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২৩
এসএইচডি/এসআইএস  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।