ঢাকা: মসলার বাজারেই নেই স্বস্তি। গেল ঈদুল ফিতরের পর থেকে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মসলার দাম।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতি কেজি খোলা মরিচের গুড়া বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকায়, হলুদের গুড়া বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২৩০ টাকায়। প্রতি কেজি জিরার গুড়া ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা, ধনিয়া গুড়া ২১০ থেকে ২৩০ টাকা, শুকনা মরিচ ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেজপাতা ১৬০ টাকা, দারুচিনি ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা, কাঁচা হলুদ ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
লবঙ্গ প্রতি কেজি ১ হাজার ৪৮০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, এলাচ ১ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, জিরা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা, কালোজিরা ৪০০ টাকা, গোলমরিচ ১ হাজার টাকা, সাদা ও কালো সরিষা ২০০ টাকা, মৌরি ৪০০ টাকা, পাঁচফোড়ন ২৫০ টাকা, জয়ফল পিস ১০ টাকা, জয়ত্রী কেজি ৪ হাজার টাকা, স্টার মসলা ৩ হাজার টাকা, কালো এলাচ ৩ হাজার টাকা, তিসি ২০০ টাকা, রাঁধুনি ৪০০ টাকা, মেথি ৩০০ টাকা, শাহী জিরা ৩ হাজার টাকা, আলু বোখারা ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা জানান, গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে প্রতিটি মসলায় ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এলাচ, লবঙ্গ ও জিরার দাম।
আব্দুল আহাদ নামের এক খুচরা মসলা বিক্রেতা বলেন, ঈদের পর থেকে মসলার বাজার ওঠানামা করছে। কখনো বাড়ছে তো, কখনো কমছে। তবে বাড়ার তুলনায় কমার হার অনেক কম। কেন দাম এমন ওঠানামা করছে, তা আমরা বলতে পারি না। তবে আমরা যেখান থেকে মসলা কিনে আনি (মৌলভীবাজার), সেখানে বলা হচ্ছে ডলারের দাম বাড়ার কারণে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে মসলার দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, যে এলাচ রোজার ঈদের আগে কিনেছি ১ হাজার ২০০ টাকা করে, তা এখন ২ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়ে যাচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা। ক্রেতারা মনে করেন আমরা দাম বাড়াচ্ছি। কিন্তু আসলে আমরা যে দামে কিনে আনি, সীমিত লাভ রেখে বিক্রি করি। দাম বাড়ার জন্য আমরা দায়ী নই। দাম বাড়ার মূল কারণ বলতে পারবেন আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতারা।
হাসান নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, সব মসলার দামই কম-বেশি বেড়েছে। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে এলাচের দাম কিছুটা কম আছে। তা-ও খুব একটা বেশি নয়। এই মসলার দাম আরও বাড়বে।
মো. আখতার নামের এক পাইকারি বিক্রেতা বলেন, মসলার দাম কমার সুযোগ নেই, শুধু বাড়বেই। মৌলভীবাজারে আমরা যখন জানতে চাই, কেন দাম বাড়ছে, তখন সেখানে বলা হয়, ‘বাজারে কোন জিনিসের দাম কম আছে?’। ডলারের দাম বাড়ায় নাকি মসলার দাম বাড়ছে। তবে আমাদের ধারণা আন্তর্জাতিক বাজারে যদি ১ টাকা দাম বাড়ে, আমদানিকারকরা ৫ টাকা দাম বাড়িয়ে দেয়। খুচরা বাজারে এসে তা আরও বেড়ে যায়। কারণ খুচরা বাজারে যে যার মতো বিক্রি করতে পারে। আমাদের পাইকারি বিক্রেতাদের সীমিত আকারে লাভ করতে হয়।
এদিকে মসলার দাম বাড়ায় ক্রেতাদের অনেককে প্রয়োজনের তুলনায় কম মসলা কিনতে দেখা গেছে। এমনকি তারা জানিয়েছেন রান্নায় তারা মসলার ব্যবহারও কমিয়েছেন। মসলার দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও সরকারের বাজার তদারকির অভাবকেই দুষছেন তারা।
মিনা নামের এক গৃহিণী বলেন, বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে মসলার দাম বাড়াচ্ছে। সিন্ডিকেটের ঠিক করা দামেই সবাই বিক্রি করছে। আর আমাদের সাধারণ ক্রেতাদের হয়রানি হতে হচ্ছে। আগে এক কেজি করে হলুদ-মরিচের গুড়া কিনতাম। এখন আধা কেজিও কিনতে পারি না। অন্য মসলা তো ৫০ গ্রাম, ১০০ গ্রামের বেশি কেনার কথা চিন্তাই করতে পারি না। রান্নায় যত বেশি মসলা দেওয়া যায়, তত স্বাদ বাড়ে। কিন্তু দামের কথা চিন্তা করে তাও কমিয়ে দিয়েছি। এখন সাধারণ রান্নাগুলো শুধু হলুদ-মরিচ দিয়েই করি।
সরকারের তদারকির অভাবে বাজারে এমন অস্থিরতা বলে মনে করেন তিনি।
লাল চান নামের আরেক ক্রেতা বলেন, আমরা নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা যে কীভাবে বেঁচে আছি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি। মসলার বাজারে তো রীতিমতো আগুন জ্বলছে। ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার এলাচ এখন ৩ হাজার ৫০০ টাকা। ভাবা যায়! তাও আবার ছয় মাসের মধ্যে! কোথাও স্বস্তি নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩
এসসি/আরএইচ