ঢাকা: গাবতলী পশুহাটের পাশে কেন্দ্রীয় ফুল মার্কেট উদ্বোধন হয়েছে চলতি সেপ্টেম্বর মাসের এক তারিখে। কিন্তু ১৫ দিন চলে গেলেও মার্কেট এখনও আগের মতো ফাঁকাই পড়ে আছে।
ফুল চাষী ও ব্যবসায়ীদের এ মার্কেটে বেচা-কেনা করার কথা, যারা আগারগাঁও ও শাহবাগের ফুটপাতে ব্যবসা করেন। কথা ছিল উদ্বোধনের পরই তারা সেখানে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
মার্কেটটি দেশের ফুলের বাজারের মোকাম হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি বিদেশে ফুল রপ্তানি করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করা হবে, ব্যবস্থা করা হবে প্রশিক্ষণেরও। কিন্তু সেগুলোর কোনো কিছুই এখনও শুরু হয়নি। ফুলের ব্যবসা চলছে আগের জায়গাতেই।
একটি ফটকের বাইরে অসমতল জায়গা। পাকা করা হয়নি। ছবি: জিএম মুজিবুর
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ফ্লাওয়ার গ্রোয়ার্স সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি নুর মোহাম্মদের সঙ্গে। এখানকার ফুল ব্যবসায়ীরা একই সঙ্গে ফুল চাষী ও ব্যবসায়ী। নূর মোহাম্মদ বাংলানিউজকে জানান, মার্কেট উদ্বোধন হলেও নতুন মার্কেটের স্থান মার্ক না করা ও স্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত না করে দেওয়ার কারণে তারা এখনো যাননি। কবে এগুলো করে দেওয়া হবে সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কেউ জানায়নি।
ফুল ব্যবসায়ী সূত্রগুলো জানায়, মার্কেটে তাদের তালিকাভুক্ত ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় চারশ’। কিন্তু নতুন মার্কেটে ২৫০ থেকে ২৬০ জনের বেশি ব্যবসা করতে পারবেন না। দ্বিতীয়ত, ফুল চাষ হয় মূলত পাঁচ জেলা যশোর, ঝিনাইদহ, পাবনা, মানিকগঞ্জ ও ঢাকার সাভারে। সে হিসাবে গাবতলী সঠিক জায়গা হলেও রাজধানীর অন্যান্য এলাকার ফুল ব্যবসায়ী ও দেশের অন্যান্য এলাকায় ফুল পৌঁছে দেওয়া ব্যয়বহুল হয়ে যাবে। তারপরও সব ব্যবসায়ীকে নতুন মার্কেটে যেতে বাধ্য করাতে পারলে সুবিধা হবে। সেক্ষেত্রে কেউ আগাওগাঁও বা শাহবাগে থেকে গিয়ে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবে না; জানান ফুল ব্যবসায়ীরা।
মার্কেটের রাস্তা ভাঙাচোরা। জমে আছে কাদাপানি। ছবি: জিএম মুজিবুর
মার্কেট খোলার পথে বাধা অদৃশ্য হাত:
স্থানীয় ও ফুল ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, নতুন মার্কেটে যাওয়ার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান সব সমস্যার সমাধান করলেও অদৃশ্য বাধা হলো মার্কেটের আশেপাশের ভূমি ব্যবহারকারীরা। দুই দশকের বেশি সময় আগে এই ফুল মার্কেট কেন্দ্রীয় সবজি মার্কেট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও দীর্ঘ সময়ে আলোর মুখ দেখেনি। সেই পরিত্যাক্ত মার্কেট, শীতাতপ কাভার্ড ভ্যান নতুন করে দেওয়া হচ্ছে ফুল ব্যবসায়ীদের। মার্কেটের গেটে এখনও তিনটি দোকান রয়েছে যা স্থানীয় প্রভাবশালীর নিয়ন্ত্রণে চলে। মাস শেষে ১০ হাজার টাকা করে ভাড়া তোলে প্রভাবশালীরা। একইভাবে মার্কেটের পশ্চিম দেয়াল সংলগ্ন নদীর মধ্যে হোটেলের রান্নাঘর চলমান।
মার্কেটের সামনের রাস্তা কাদাপানিতে একাকার। ছবি: জিএম মুজিবুর
ফুলবাজার দোকান ব্যবসায়ীদের কাছে হস্তান্তরের করার প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি। কবে হবে সেটাও অনিশ্চিত। কোন প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করা হবে সে ব্যাপারেও কোনো নীতিমালা হয়নি, বলে জানান খোদ মার্কেটের মালিক কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও মার্কেটের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ মফিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মার্কেটের দোকান হস্তান্তরের বিষয়টি দেখাশোনার জন্য মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে দিয়েছে। যে কমিটিতে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিরাও রয়েছে।
মার্কেট হন্তান্তরের ব্যাপারে এর বেশি তিনি বলতে চাননি।
এককালীন না অস্থায়ী ভিত্তিতে মার্কেট দেওয়া হবে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, এটা এখনও ঠিক করা হয়নি। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন যে পদ্ধতিতে মার্কেটের দোকান বরাদ্দ দেয় আমরাও সে পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারি। তার আগে আমরা সিটি কর্পোরশনের অভিজ্ঞতা নেব।
কবে সে অভিজ্ঞতা নেওয়া হবে, কবে নীতিমালা করা হবে এবং মার্কেটের দোকানই বা কবে হস্তান্তর করা হবে- এ ব্যাপারে তিনি কোন দিনক্ষণ বলতে পারেননি।
দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কাভার্ড ভ্যান। ছবি: জিএম মুজিবুর
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রায় দুই দশক আগে মার্কেটটি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণের টাকায় বানানো হয়েছিল। এই মার্কেটের সঙ্গে বিভিন্ন জেলায় মার্কেট বানানো হয়। কথা ছিল কৃষকরা নিজেরাই ঢাকার বাইরে ওই সব মার্কেট থেকে শাক-সবজি, ফল নিজস্ব গাড়িতে করে এনে রাজধানীর এই মার্কেটে বিক্রি করবেন। এ জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কাভার্ড ভ্যানও কেনা হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সে মার্কেট আর আলোর মুখ দেখেনি। মার্কেট আলোর মুখ না দেখলেও এডিপির ঋণের সুদে-আসলে পরিশোধ করতে হয়েছে। পরে ওই মার্কেটই কিছুটা সম্প্রসারণ করে কেন্দ্রীয় ফুল মার্কেট হিসাবে চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ১ তারিখে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক উদ্বোধন করেন।
বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মার্কেটের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্ত বলেন, আগেও এ মার্কেট কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ছিল; এখনও আছে। স্থানীয় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে না। মার্কেটে যাতায়াতের জন্য আগে থেকেই সড়ক আছে। গাবতলী থেকে মূল সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। মার্কেটের সীমানায় কোনো দোকান বা স্থাপনা থাকলে সেগুলো তুলে দেওয়া হবে।
সম্প্রতি আনা হয়েছে ফুল প্যাকেজিং মেশিন। ছবি: জিএম মুজিবুর
সরেজমিনে গাবতলীর গরুর হাটের পাশে কেন্দ্রীয় ফুল মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেট ভেতর থেকে তালাবদ্ধ। বাইরে থেকে অনেক খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে গেটের পাশের দোকানদার জানালেন, ভেতরে গার্ড, ড্রাইভার ও ক্লিনার থাকে। গার্ডকে ডাকাডাকি করে না পেয়ে দোকানদার নিজেই ভেতরে নিয়ে গেলেন। ভেতরে দেখা যায়, ভবনের ঝকঝকে অঙ্গিনার এক পাশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছয়টি কাভার্ড ভ্যানসহ একটি ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখা আছে। অধিকাংশ অকেজো এ সব যান দুই দশক ধরে এখানে পড়ে আছে। ভবনের একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে ফুল প্যাকেজিং মেশিন ঢেকে রাখা হয়েছে। মেশিনটি সম্প্রতি আনা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩
জেডেএ/নিউজ ডেস্ক