বরিশাল: গরমে যেমন জনপ্রিয় তেমনি রমজানে ইফতারিতেও রসালো ফল তরমুজের বিকল্প ভাবেন না অনেকেই। তবে এবার কেজি দরের কারণে অনেকটাই বিপাকে তরমুজের ক্রেতারা।
ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে বর্তমানে যে তরমুজ মিলছে, তার বেশিরভাগ অপরিপক্ক। কাটার পর ভেতরে লাল দেখা গেলেও এখনও পুরোপুরি পাকেনি। এক কথায় দাম অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত ফলের স্বাদও নেওয়া যাচ্ছে না।
বরিশাল নগরের বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা রিমা আক্তার বলেন, সারাদিন রোজা রেখে ইফতারে রসালো তরমুজের চাহিদা রয়েছে পরিবারের সবার। তাই তরমুজ কিনতে বাজারে এসে দেখি গত বছরের মতো এবারও তরমুজ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এবারে দামও বেশি, যেখানে গতবছর ৫০ টাকা কেজিতে তরমুজ কেনা গেছে, এবার সেখানে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দাম চাওয়া হচ্ছে।
তবে মোখলেছুর রহমান নামে অপর একজন জানান, অনেক জায়গাতেই তরমুজ ওজনে বিক্রি হয় না, ছোট তরমুজ পিস হিসেবে বিক্রি করে। আর বড় তরমুজের গায়ে দাম লিখে রাখা হয়। আর সেই হিসাব কষলে তরমুজের কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকাও পড়ে যায়।
তিনি বলেন, মোবাইল কোর্টসহ বিভিন্ন অভিযানের কারণে দিন দিন ধান্দাবাজির কৌশল পাল্টাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা, ফলে অভিযানিক দলকেও কৌশল পাল্টানো উচিত।
প্রান্তিক চাষি, পাইকার ও আড়তদাররা জানান, পাইকারি মোকামে কখনই কেজিতে তরমুজ বিক্রি হয় না। তরমুজের মৌসুম কিছুদিন আগে শুরু হয়েছে। তবে রমজান মাসে চাহিদা বেশি থাকায় দাম কিছুটা বাড়তি। বর্তমান বাজারে ছোট আকারের একশ পিস তরমুজ তিন থেকে চার হাজার টাকায় আর সবচেয়ে বড় আকারের (৭-১২ কেজি) একশ’ পিস তরমুজ ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি দর হিসেবে বড় আকারের প্রতি তরমুজের দাম পড়ছে আড়াইশ থেকে তিনশত টাকা, যা খুচরা বিক্রেতারা নানান কৌশলে ছয় থেকে নয়শ’ টাকায় বিক্রি করছেন।
যদিও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের হাতে এসেই তরমুজের পচন শুরু হয়, আবার ক্রেতা কেটে ভেতরে সাদা দেখলেও নিতে চায় না, সেই হিসেবে ভর্তুকিটা তাদেরই বেশি। তাই কেজিতে বিক্রি ছাড়া উপায় থাকে না। যদিও তিন থেকে চার বছর আগে পিস হিসেবেই খুচরা বাজারে তরমুজ বিক্রি করেই লাভবান হতেন ব্যবসায়ীরা।
কৃষি অধিদপ্তরের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের তথ্যানুয়ায়ী, বর্তমানে দেশে তরমুজ আবাদের প্রধান ক্ষেত্র ভোলা, পটুয়াখালী ও বরগুনা। বিভাগের অন্য তিন জেলা বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরে বিচ্ছিন্নভাবে তরমুজ আবাদ হয়। আর কৃষকের মাঠ ও মোকামের আড়তে সর্বত্রই গোটা তরমুজ শ’ভাও বিক্রি হয়।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর ছোট বাইশদিয়া গ্রামের চাষি জুবাইয়েদুল ইসলাম জানান, এ বছরে তিনি ১৩ কানি জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। আর এখন পর্যন্ত যে তরমুজ বিক্রি করছেন তা পিস হিসেবে বিক্রি করেছেন। বড় তরমুজগুলোতে ৩০ হাজার টাকা দর পেয়েছেন। অথচ খুচরা বাজারে সেই তরমুজই দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
এদিকে ভোলার চাষি কামরুল জানান, এবারে মৌসুমের শুরু থেকেই রমজান মাস থাকায় দর কিছুটা ভালোই পাওয়া যাচ্ছে। তবে আকার যতই বড় হোক না কেন তিনশ’ টাকার ওপর দাম ওঠে না পাইকারি বাজারে। তাহলে সেই তরমুজ ভোক্তা কেন দ্বিগুণ দামে পাঁচ থেকে সাতশ’ টাকায় কিনছেন।
আর চাষিরা আড়তে আনার পর যেখানে গোটা তরমুজ বিক্রি হয়, সেখানে খুচরা বিক্রেতারাও গোটা হিসেবেই কেনেন বলে জানিয়েছেন বরিশাল ফল আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কার্তিক দত্ত।
তিনি জানান, নগরের পোর্টরোডের মাছের আড়ত থেকে শুরু করে অন্যান্য ফলের আড়তও এখন তরমুজের দখলে। যা মৌসুম জুড়েই থাকবে, এখান থেকে শুধু বরিশালের নয় গোটা দেশে পিস হিসেবে তরমুজ পাঠানো হয়।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বরিশাল জেলা বিপণন কর্মকর্তা মো. রাসেল খান বলেন, পাইকারি বাজারে তরমুজের আমদানির ওপরে প্রতিনিয়ত দাম পরিবর্তন হচ্ছে। বরিশাল নগরে খুচরা বিক্রেতারা নানা কৌশলে কেজিতেই তরমুজ বিক্রি করছেন। তারা আগেই ওজন দিয়ে দাম নির্ধারণ করে রাখেন। তাতে কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দাম পড়ছে।
আঞ্চলিক কৃষি অফিসের তথ্য বলছে, বরিশাল অঞ্চলের পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা ও ঝালকাঠিতে এবার প্রচুর তরমুজ চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে গোটা বরিশাল বিভাগে ৬১ হাজার ২৫৮ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে আবাদের পরিমাণ ছিল ৬৪ হাজার ১৮৩ হেক্টর। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে এবার দুই হাজার ২৯৫ হেক্টর কম জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১১ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৪
এমএস/আরআইএস