ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে কড়াকড়ি প্রত্যাহারের দাবি সাংবাদিক নেতাদের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৭ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২৪
বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে কড়াকড়ি প্রত্যাহারের দাবি সাংবাদিক নেতাদের

ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে আরোপিত কড়াকড়ি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সাংবাদিক নেতারা। সাংবাদিকরা জনগণ ও সরকারের সহায়ক হিসেবে কাজ করে থাকেন।

তাই বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট ও আসন্ন বাজেটকে সামনে রেখে এখনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশের বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়ার দাবি জানান তারা।

বুধবার (১৫ মে) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা আরোপ বিষয়ে নেতাদের অবহিতকরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সাংবাদিক নেতারা এসব কথা বলেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক বিশৃঙ্খলা, লুটপাট ও নৈরাজ্য যে চলছে, সেটির অংশ হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা। এটি করে কোনো লাভ হবে না। কারণ বর্তমান যুগে তথ্য গোপন রাখা সম্ভব নয়। যে কোনো উপায়ে তথ্য-ফাইল বের হবেই। রিজার্ভের যে অর্থ চুরি হয়েছে, সে সময় চোরকে কি বাংলাদেশ ব্যাংকে আসতে হয়েছে? চোরকে তো বাংলাদেশের সীমানায় আসতে হয়নি। এখন সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে লুটপাতের তথ্য আড়াল করা যাবে না। টাকা লুটপাট করে নিয়ে যাবেন অথচ কিছু বলা যাবে না, এটা তো হতে পারে না।

একটি গ্রুপ সাত-আটটি ব্যাংকের মালিক হয় কীভাবে, প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আরও একটি ব্যাংক নিয়ে গেছে! এমন অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা গ্রহণযোগ্য নয়। তাই আলোচনায় সমাধান না হলে প্রয়োজনে আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকার আদায় করতে হবে।

বিএফউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, ব্যাংক রিপোর্টাররা আজ সমস্যায় পড়েছেন, এটা আরও বাড়বে। ধীরে ধীরে সাংবাদিকরা আরও সমস্যার সম্মুখীন হবেন। দলমতের বাইরে এসে পেশাদারত্বের জায়গায় আমাদের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সকল সংগঠন সংঘবদ্ধ হয়ে এগোতে হবে। অতীতেও আমরা সংঘবদ্ধ হয়ে আমাদের অধিকার আদায় করেছি। শেয়ারবাজার, ডলার বাজারে যেসব অপকর্ম করা হয়, এগুলো তো কর্মকর্তারাই ঘটান, সাংবাদিকরা শুধু তা লিখে তুলে ধরেন।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে একাংশের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে এমন একজন গভর্নরকে বসানো হয়েছে, তিনি তার যোগ্যই নন। নিজের দুর্বলতা ঢাকার জন্যই তিনি সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। বর্তমান গভর্নরের আমলে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো সূচকেই সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। পূর্ব কোনো ঘোষণা ছাড়াই ডলারের দাম একলাফে সাত টাকা বাড়িয়ে দিলেন কীসের ভিত্তিতে? কিছু পীর-আওলিয়াকে সুবিধা দিতে গিয়েই সাংবাদিকদের এমন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তারা দরজায় খিল দিয়েছে কিন্তু দরজা বন্ধ করতে পারেনি। প্রয়োজনে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গেটে অবস্থান নেব।

ডিইউজের সভাপতি ও ইআরএফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ১৯৭১ সালে আমাদের দেশের মুক্তিযোদ্ধারা এ দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন। এখন সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশাধিকার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এ স্বাধীনতাকে কলুষিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে গভর্নর সাহেবকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিএফইউজে একাংশের মহাসচিব আব্দুল কাদের গণি চৌধুরী বলেন, ব্যাংকিং খাতে এখন আড়তদার তৈরি হয়েছে, একজনই অনেক ব্যাংকের মালিক। এছাড়া রিজার্ভ চুরি, ভল্টের সোনা চুরি এসবের খবর যেন জনগণের সামনে না আসে, তাই চোরদের পাহারা দেওয়ার জন্যই এমন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ন্ত্রণ সংস্থায় সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞায় আমরা বিস্মিত হয়েছি, এর মাধ্যমে কণ্ঠরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।

সভাপতির বক্তব্যে ইআরএফের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, গভর্নরের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, আসা যাওয়া করতে থাকো ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু দেড় মাস পার হলেও এখনো আমাদের সহকর্মী সাংবাদিক ভাইয়েরা বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারছেন না। আগে সাংবাদিকরা যেভাবে সহজে যেকোনো অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন, তা এখন পারছেন না। সহকর্মীরা বলছেন, তাদের ফোন ট্র্যাকিং করা হচ্ছে, যা খুবই ভয়ানক ব্যাপার।

তিনি বলেন, অতীতেও পেরেছি এবারও পারব। যখন সকল মত-পথের সাংবাদিক একসঙ্গে হয়েছি, সেহেতু পারবই। যে তথ্য নিয়ে জনগণের জন্য সংবাদ করা হয়, তা কখনো চুরি হতে পারে না। এখন শুধু আর্থিক খাতেই কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হচ্ছে। গণমাধ্যম একটা চরম সংকটে আছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শুকুর আলী শুভ বলেন, যখনই তথ্য দেবে না তখনই লুকোচুরির বিষয় থাকবে, বলেই আমরা ধরে নেব। গভর্নর তো কিছুদিনের জন্য। আমাদের অধিকার আমাদেরই আদায় করে নিতে হবে। যুগে যুগে সাংবাদিকদের অধিকার আদায় করে নিতে হয়। সাংবাদিকরা কোনো ব্যক্তির জন্য কাজ করেন না, তারা পুরো দেশের জন্য কাজ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অবশ্যই সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

ইআরএফের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগে ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে আমাদের যেসব তথ্য দেওয়া হতো, এখন আর সেগুলো হয় না। অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রকাশ করলে তাদের সমস্যা হয়, এ কারণেই প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

ইউএনবির সম্পাদক ফরিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করছে। এই যে প্রতিনিয়ত পত্রিকায় তাদের ব্যাপারে রিপোর্টগুলো হচ্ছে, এসব করে তাদের নিজেদের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এই কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তারা কি কোনো বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতেই এমন করছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাংবাদিকদের নিষেধাজ্ঞা শুধু ব্যাংক রিপোর্টার বা অর্থনীতির রিপোর্টারদের অসম্মান করা হচ্ছেই না, এটি পুরো গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরা হচ্ছে। আমাদের সবার উচিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অবস্থান নেওয়া।

ইআরএফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এটির যদি সফলতা পেয়ে যায়, তাহলে সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া শুরু করবে। আর এই হুমকি আমাদের আগামীর ভবিষ্যতের জন্য ভয়ানক। টাকা ছাপিয়ে মূল্যস্ফীতি বাড়ানো হচ্ছে। সরকার যদি মনে করে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকে নিষেধাজ্ঞা থাকলে সরকার অনেক কিছু আড়াল করে ভালো থাকবে, তাহলে এটা ভুল।

ইআরএফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নাগরিক প্রতিষ্ঠান, আর নাগরিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য জনগণের পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তাই দ্রুতই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা উচিত। সরকারের ভালোর জন্যই এই সুযোগ তৈরি করা উচিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং কেন প্রবেশ করা প্রয়োজন, তা বিস্তারিত তুলে ধরেন ব্যাংক খাতের রিপোর্টার সমকালের বিশেষ প্রতিবেদক ওবাইদুল্লাহ রনি। তিনি বলেন, গত দেড় মাস ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। যদি স্পর্শকাতর তথ্য প্রকাশ দেশ ও জনগণের জন্য উপকার হয়, তাহলে সেটাই তো প্রকাশ করা আমাদের কাজ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২৪
জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।