ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মোংলা বন্দরের সব সূচকের ঊর্ধ্বগতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৩ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০২৪
মোংলা বন্দরের সব সূচকের ঊর্ধ্বগতি

খুলনা: মোংলা দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর। এটি খুলনা অঞ্চলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ।

এ বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন শিল্প কারখানা, সম্প্রসারিত হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল তথা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ বন্দর ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে।

সোমবার (৮ জুলাই) বিকেলে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক মো. মাকরুজ্জামান বাংলানিউজের কাছে গত দুই অর্থবছরে (২০২২-২৩ ও ২০২৩-২০২৪) বন্দরের অর্জন তুলে ধরেন।

ক) জাহাজ আগমন: ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮২৭টি জাহাজ এসেছিল মোংলা বন্দরে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসেছে ৮৪৬টি জাহাজ। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে জাহাজ আগমন ১৯টি বেড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাহাজ আগমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৪০টি। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ছয়টি জাহাজ বেশি এসেছে।  

খ) গাড়ি আমদানি: ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের মোট গাড়ি আমদানি হয়েছিল ১৩ হাজার ৫৭৬টি। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ১৫৩৪০টি গাড়ি। অর্থাৎ গত অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় এক হাজার ৭৬৪টি গাড়ি বেশি আমদানি হয়েছে।

গ) কার্গো হ্যান্ডলিং: ২০২২-২৩ অর্থবছরে বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল ৯৯ দশমিক ০৫ লাখ মেট্রিক টন। অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কার্গো হ্যান্ডলিং করা হয়েছে ১০৮ লাখ ৬৮ লাখ মেট্রিক টন।

ঘ) কন্টেইনার হ্যান্ডলিং: ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ২৬ হাজার ৫৮৩ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল। অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৩১ হাজার ৪৪ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে।

ঙ) রাজস্ব আয়: ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ৩০২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিল মোংলা বন্দরে। পরের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৩১৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে এখানে। পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরের অর্জিত রাজস্ব ২৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেড়েছে।

মো. মাকরুজ্জামান এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির বিভিন্ন তথ্যও তুলে ধরেন।

প্রধান আমদানি পণ্য: খাদ্যশস্য, সার, গাড়ি, এলপি গ্যাস, স্লাগ, লাইম স্টোন, সয়াবিন তেল, জিপসাম, মেশিনারি, কয়লা, পাথর, ক্লিংকার,পামওয়েল, ফ্লুড ওয়েল, ফ্লাই অ্যাশ ইত্যাদি।

কন্টেইনারে আমদানি পণ্য: ইলেকট্রনিক্স পণ্য, মোবাইল অ্যাকসেসরিজ, ট্রাইসাইকেল পার্টস, ডাল, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, পাটজাতপণ্য, খালি গ্যাস সিলিন্ডার, খেলনা, মেশিনারি, রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস, গ্লু ও মটরপার্টস, লক, উডেন লক ইত্যাদি।

প্রধান রপ্তানি পণ্য: গার্মেন্টস, পাট, পাটজাত পণ্য, চিংড়ি, সাদা মাছ, শুকানো মাছ, ক্লে টাইলস, কাঁকড়া, মেশিনারি, কটন ইয়ার্ন ইত্যাদি।  

এছাড়া মোংলা ইপিজেড থেকে বিশ্বের প্রায় ৩৮টি দেশে পণ্য রপ্তানি হয়। রপ্তানিকৃত পণ্যসমূহ হলো গার্মেন্টস, কাগজের তৈরি পণ্য, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, ব্যাগ, পাটজাত পণ্য, গাড়ির সিট, হিটার, মারবেল টাইলস, হিউম্যান হেয়ার, জিপার, সিগারেট, জ্যাকেট, নেট ইত্যাদি।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ নেতৃত্ব ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মোংলা বন্দরের গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে ৮৪৬টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ আগমন করে। রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি হয় ১৫ হাজার ৩৪০ ইউনিট। এ সময়ে কার্গো হ্যান্ডলিং ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে। সব সূচক পজিটিভ ধারায় থাকার ফলে বন্দরে নিট মুনাফা ২৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতুর কারণে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা বন্দরের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের মহাকর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। সাড়ে তিন ঘণ্টা থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা ও তার পার্শ্ববতী জেলা থেকে পণ্য আনা-নেওয়া করার ক্ষেত্রে বন্দর ব্যবহারকারীদের সময় এবং অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে। পদ্মা সেতুর কল্যাণে রাজধানীর সব থেকে কাছের বন্দর হওয়ায় মোংলা হয়ে পোশাকশিল্পের বিভিন্ন পণ্যও যাচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। মোংলা বন্দরের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপন করায় পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে নবদিগন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে। মোংলা বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং দ্রুত ও নিরাপদ হওয়ায় বিদেশি ব্যবসায়ীরাও এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ফলে এই বন্দর দিয়ে এখন পণ্য আমদানি-রপ্তানি বেড়ে চলেছে। পণ্যগুলোকে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে আমদানি-রপ্তানি করার ক্ষেত্রে মোংলা বন্দরও সার্বিক দিক দিয়ে প্রস্তুত রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০২৪
এমআরএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।