দেশে প্রতিনিয়ত কর্মক্ষম জনসংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু সেই অনুপাতে বাড়ছে না কর্মসংস্থান। ফলে দেশে বেকার ও ছদ্মবেকারের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে।
প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট এবং বৈশ্বিক নানা চ্যালেঞ্জে গত এক বছরে দেশে ১৮৫টি তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। হাজার হাজার শ্রমিক চাকরি হারিয়ে বেকার হয়েছেন। গত রবিবার বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, জ্বালানিসংকটে উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় গত দুই মাসে পোশাক রপ্তানি কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। এতে ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে, দেশের অর্থনীতি পেছন দিকে হাঁটছে।
নতুন বিনিয়োগ না হলে নতুন কর্মসংস্থান হবে না। বেকারত্বের হার বাড়তেই থাকবে। তখন সমাজে অস্থিতিশীলতা বাড়বে। সেই পরিস্থিতি আবার বিনিয়োগের পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।
শুধু পোশাকশিল্প নয়, অন্যান্য শিল্প-কারখানার অবস্থাও খারাপ। এর আগে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, গত এক বছরে সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে ৩৫৩টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বেকার হয়েছেন এক লাখ ১৯ হাজার ৮৪২ জন শ্রমিক। তাঁদের বেশির ভাগই অন্য কোনো কাজের সংস্থান করতে না পেরে গ্রামে চলে গেছে। অনেকে পেশা বদল করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন।
অনেকে বাধ্য হয়ে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেক কারখানা বন্ধ না হলেও ধুঁকে ধুঁকে টিকে আছে। লোকসান দিচ্ছে। ফলে সময়মতো বেতন-ভাতা দিতে পারছে না। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়ক অবরোধসহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করছেন। এতেও উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিবিএর সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন পাভেল বলেন, ‘শিল্প টিকিয়ে রাখার মূল উপাদান হলো নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ, কিন্তু আমরা তা পাচ্ছি না। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আমরা সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে পারছি না। এর ফলে বিদেশি ক্রেতারা আমাদের ওপর আস্থা হারাচ্ছেন। তাঁরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, এই সংকট কাটিয়ে উঠতে না পারলে ভবিষ্যতে নতুন ক্রয়াদেশ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। ’
বিনিয়োগ গতি হারানো, বিদ্যমান শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া, বন্ধ না হলেও ধুঁকতে থাকা ও উৎপাদন কমে যাওয়া, বেকারত্ব বৃদ্ধি—কোনোটিই অর্থনীতির জন্য সুখকর নয়। সর্বশেষ সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে বেকার জনগোষ্ঠী ২৬ লাখ ২০ হাজার, যা আগের বছরের তুলনায় দেড় লাখ বেশি। কম শিক্ষিত বা নিরক্ষরের তুলনায় শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বেকারের এই হিসাব প্রকৃত বেকারত্বকে তুলে ধরে না। সপ্তাহে মাত্র এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ করলেও তাঁকে বেকার ধরা হয় না। পরিবারের জন্য কেউ হাঁস-মুরগি পালন করলেও তাঁকে বেকার বলা হয় না। তাই প্রকৃত বেকারত্ব অনেক বেশি। বেকারদের একটি বড় অংশই হতাশায় ভুগছে। নেশাগ্রস্ত হচ্ছে। অপরাধে জড়াচ্ছে। সামাজিক স্থিতি নষ্ট করছে।
বিনিয়োগের জন্য পরিবেশের প্রয়োজন হয়। স্থিতিশীল নীতিকাঠামোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ-জ্বালানি, অবকাঠামো, আইন-শৃঙ্খলা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সহজ শর্তে ব্যাংকঋণসহ আরো অনেক কিছুর প্রয়োজন রয়েছে। অর্থনীতির স্বার্থে রাষ্ট্রকে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ