ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বরিশালে চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকছে ৪৪ হাজার ৭৭১ টন মাছ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২৪
বরিশালে চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকছে ৪৪ হাজার ৭৭১ টন মাছ

বরিশাল: ‌‘ভরবো মাছে মোদের দেশ গড়বো স্মার্ট বাংলাদেশ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে মৎস্য সম্পদের সুরক্ষা ও সমৃদ্ধি অর্জনে মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রম বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।  

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সভা কক্ষে মৎস্য অধিদপ্তরের আয়োজনে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

 
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম।

সভায় জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ জানান, বরিশাল জেলা মাছ উৎপাদনে বরাবরই স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং এ জেলার উদ্বৃত্ত মাছ অন্যান্য জেলায় রপ্তানি হয়। দেশব্যাপী বরিশালের ইলিশ মাছের আলাদা সুনাম রয়েছে। বরিশাল জেলায় উৎপাদিত মাছের পরিমাণ এক লাখ দুই হাজার ২শ ৯০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ আহরণের পরিমাণ ৫১ হাজার ৩শ ৩৮ টন। বরিশাল জেলার মাছের মোট চাহিদা ৫৭ হাজার ৫শ ১৯ টন এবং উদ্বৃত্ত মাছের পরিমাণ ৪৪ হাজার ৭৭১ টন।  

তিনি জানান, বরিশাল জেলায় ইলিশ মাছের মোট উৎপাদন ৪৭ হাজার ২৫৩ টন।
এছাড়া বরিশাল জেলায় ৮৭ হাজার ১৩৫ জন নিবন্ধিত মৎস্যজীবীর মধ্যে জাটকা/ইলিশ মৎস্যজীবী ৫৬ হাজার ৯০৬ জন। মূলত এদের জীবন-জীবিকা ও কর্মসংস্থান ইলিশ আহরণের সাথে সম্পর্কিত। প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে বরিশাল জেলার সদর, মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলা উপজেলার মোট ৮২ কিলোমিটার এলাকায় মৎস্য অভয়াশ্রয় চলাকালীন, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ আহরণে বিরত থাকাকালীন এবং নভেম্বর-জুন পর্যন্ত ৮ মাস জাটকা ধরা নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়।  

সভা থেকে আরও জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ৫১ হাজার ৭শ’টি জেলে পরিবারকে ১ লক্ষ ২৯২ হাজার ৫০ টন, জাটকা আহরণে বিরত থাকা ৪৩ হাজার ২৭৯ টি জেলে পরিবারকে ৬ লাখ ৯২৪ হাজার ৬৪ টন ভিজিএফ বিতরণ করা হয়।

এছাড়া ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় ২০২৩-১৪ অর্থ বছরে মৎস্যজীবীদের ৭৯২ টি বকনা বাছুর, ১ হাজার ৪৫ জনকে বৈধ সুতার জাল এবং দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৫৯০ জনকে দুটো করে ছাগল, ১টি ছাগলের খোয়াড়, ছাগলের খাবার দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ৬৪০ জন মৎস্যজীবীকে বৈধ সুতার জাল প্রদান করা হয়েছে।  

বরিশাল জেলায় মোট মৎস্যচাষি ৮৫ হাজার ৫৩৭ জন যাদের মাধ্যমে ৯১ হাজার ৯৯৯টি পুকুর (৯৮২২.০ হেক্টর) এবং ৩ হাজার ৭৯২টি খামারে (১৪৫৮.০ হেক্টর) মৎস্য চাষ চলমান আছে। এ জেলায় অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয়ে মাছের উৎপাদন ৫০ হাজার ৯৫২ টন। এই জেলায় উন্মুক্ত জলাশয়ের পরিমাণ বেশি হওয়ায় আধুনিক ও বিজ্ঞান সম্মত মাছ চাষে বরিশাল জেলা কিছুটা পিছিয়ে ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বরিশাল জেলাকে দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে সংযুক্ত করায় চাষিদের আধুনিক ও নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য প্রশিক্ষণ, উপকরণ সহায়তাসহ যেসব জলাশয় কচুরিপানা দ্বারা আচ্ছাদিত সেসব জলাশয় থেকে কচুরিপানা অপসারণ করে পতিত সব জলাশয় মাছ চাষের আওতায় আনা, সুফলভোগীদের সংগঠিত করে মাছের নিরাপদ আশ্রয়স্থলের জন্য অভয়াশ্রম স্থাপন করাসহ বিলে বিল নার্সারি স্থাপন করে মাছের প্রাচুর্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে।  

মৎস্যচাষিদের নিয়ে ২০-২৫ সদস্য বিশিষ্ট গ্রুপ গঠন করে পোনা মাছচাষ ও প্রাথমিকভাবে বরিশাল সদর উপজেলার কীর্তনখোলা নদীতে ও বাকেরগঞ্জ উপজেলার শ্রীমন্ত নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করা হয়েছে। সবচেয়ে আশার কথা, পদ্মার এপারে ২১ জেলার মধ্যে বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলায় দেশীয় প্রজাতির মাছ বিশেষ করে শিং, মাগুর, কৈ, গুলসা, পাবদার পোনা উৎপাদন ও চাষে নীরব বিপ্লব সাধিত হয়েছে। এসব চাষীদের মাধ্যমে বরিশাল জেলার অন্যান্য উপজেলায় দেশীয় প্রজাতির মাছের সম্প্রসারণ ঘটবে। আমাদের মূল লক্ষ্য আগামীতে বরিশাল জেলায় দেশীয় প্রজাতি মাছ ও উচ্চ ফলনশীল মাছ চাষ সম্প্রসারণের সাথে সাথে গলদা চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ ও কচুরিপানা অপসারণ করে পতিত জলাশয়কে মাছ চাষের আওতায় আনা।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মনদীপ ঘড়াই, মৎস্য কর্মকর্তা (হিলসা) বিমল চন্দ্র দাসসহ গণমাধ্যমকর্মীরা।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২৪
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।