ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

২০০ ছুঁই ছুঁই ডিমের ডজন  

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২৪
২০০ ছুঁই ছুঁই ডিমের ডজন  

ঢাকা: পাইকারি ডিমের বাজার বন্ধ থাকায় খুচরা বাজারে ডিমের দামের আকাশচুম্বি। সপ্তাহ খানেক আগেও যে ডিম প্রতি ডজন ১৬০-১৭০ টাকা পর্যন্ত ছিল।

সপ্তাহ শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ডজন প্রতি ১৮০-১৯০। দামবাড়তির কারণে ডিম এখন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। পাশাপাশি বেশি দামের কারণে বিক্রি কমে যাওয়ায় ও নানা ভাবে ডিম নষ্ট হবার কারণে বিপাকে পড়ছেন খুচরা বিক্রেতারা।

তবে পাইকারিতে ডিম বিক্রি বন্ধের বিষয়টি ভালভাবে দেখছেন না এই খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্য, সরকার যখন ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য মনিটরিংয়ের কথা বলেছে তখনই এক দল করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্তিম সংকট তৈরি করেছে। যে কারণে এক লাফে ডিমের দাম ডজনে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। যারা ঘোষণা দিয়ে বন্ধ রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) রাজধানীর খিলগাঁও, মেরাদিয়া, বাসাবো, মগবাজার, মিরপুর, ভাটারা, বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকার খুচরা বাজারের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে ডিমের দামের এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) রাজধানীর বাজার গুলোতে ডিমসহ নিত্য প্রয়োজনীয় ৫৫টি পণ্যের মূল্য মনিটরিং করে থাকে। সংস্থাটির হিসেবে গেল এক মাসের ব্যবধানে ডিমের দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। বর্তমান বাজারে খুচরা পর্যায়ের ডিমের দাম প্রতি হালি ৫৮-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে প্রতি ডজনের দাম হবার কথা ১৭৪-১৮০ টাকা পর্যন্ত।

কিন্তু খুচরা পর্যায়ে ডিমের দামের চিত্র একেবারেই উল্টো প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৮৫-১৯০ টাকায়। মূলত পাইকারিতে ডিমের সরবরাহ কমে যাওয়ায় এই দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা।

দক্ষিণ বনশ্রী এলাকার মুদি দোকানি জামাল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আজকে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি করছি ১৮৫ টাকায়। এই ডিম আমাদের কিনতে হচ্ছে ১৮২ টাকা ২০ পয়সা হিসেবে। সে হিসেবে সামান্য লাভ করেই ছেড়ে দিতে হচ্ছে। যাতেকরে কোনো ক্রেতা এসে ফিড়ে না যায়। লাভ কম করলেও অনেক ক্রেতারা বিষয়টি বুঝতে চাননা। তারা মনেকরে আমরা ইচ্ছা করে দাম বাড়িয়েছি। কিন্তু আমরা যে পাইকারি বাজারে ডিম পাচ্ছি না সেটা আর কেউ দেখে না। পাইকারি বাজারে খবর নিয়ে জানতে পেড়েছি, মূলত পোল্ট্রি ফিডের দাম বাড়ার কারণে ডিমের দাম বেড়েছে। আবার শুনছি সরকার ডিমের দাম কমানোর জন্য আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু আমদানি করে লাভ হবে না। এর থেকে ভাল হয় যদি ফিডের দাম কমিয়ে ডিমের বাজারটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

এদিকে ডিমের দাম বাড়ার কারণে অনেকের সংসার চালানোর মাসিক যে হিসেব সেখানে টান পড়েছে। ফলে অনেকেই এখন প্রয়োজনের তুলনায় কম কিনছেন এই আমিষের উপাদানটি। কথা হলে বাসাবোর বাসিন্দা সোলাইমান হোসেন সবুজ বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে সব পণ্যের দাম অনেক বাড়তি। এর মধ্যে যাও একটু ডিমের দাম কম থাকবে, সেখানে আজকে দাম শুনে এক প্রকার অবাক। বাজারে গিয়েছিলাম এক কেস (৩০টি) ডিম কিনতে। কিন্তু দাম শুনে এক ডজন কিনে চলে এসেছি। বাসায় ছোট দুই ছেলে মেয়ে ডিম পছন্দ করে। তা না হলে এই দামে আমি ডিম কিনতাম না।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাবে)’র ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ডিমের দাম বাড়ানোর বিষয়টিকে ভাল ভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। নিত্য প্রয়োজনীয় এই পণ্য নিয়ে আগে ব্যবসায়ীরা রাজনীতি করছে আর এখন আমলারাও এর সঙ্গে জড়িত হয়েছে। যখন সরকার বলছে এগুলো তদারকি করা হবে তখন এক দল পাইকারি বিক্রেতা ও করপোরেট গ্রুপ গুলো বিক্রি বন্ধ করে দেবার ঘোষণা দেয়। তারা বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে দাম ২০-৩০ টাকা বেড়ে যায়। আমি মনেকরি যারা ঘোষণা দিয়ে বন্ধ রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তারাই মূলত সিন্ডিকেটকারী।

এস এম নাজের হোসেন বলেন, যারা মাঠে কাজ করে সিন্ডিকেট করে না এমন প্রান্তিক পর্যায়ের থেকে শুরু করে বড় কোম্পানি তাদের নিয়মিত মনিটরিং করে এবং তাদের কি প্রয়োজন তা দেখে ব্যবস্থা নিলে প্রশাসন চাইলে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। ভারত থেকে যারা আমদানির অনুমতি পেয়েছে তাদের তদারকি করা এবং সংকটকালীন আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২৪
ইএসএস/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।