ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

৮ মাসে ইউরোপ-আমেরিকায় পোশাক রপ্তানিতে ভাটা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২৪
৮ মাসে ইউরোপ-আমেরিকায় পোশাক রপ্তানিতে ভাটা

ঢাকা: বছরের প্রথম আট মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভাটা দেখা গেছে। এতে বাংলাদেশ, চীন ভিয়েতনাম ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয় কমেছে।

ইইউরোস্ট্যাট ও ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) জানুয়ারি-আগস্টের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠেছে।

তথ্য বলছে, তৈরি পোশাকের সব চেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট- এই আট মাসে রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার কমেছে ৪ দশমিক ০৪ শতাংশ। দুই বড় বাণিজ্য বলয়ে রপ্তানি আয় কমেছে যথাক্রমে ২২৩ কোটি ৬৩ লাখ ডলার এবং ২১৫ কোটি ৪৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার।  

অন্য বছরগুলোতে তৈরি পোশাক ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি হলেও চলতি বছরের জানুয়ারি-আগস্টে কমেছে। এর প্রভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ চীন, দ্বিতীয়তে থাকা ভিয়েতনাম ও তৃতীয়তে থাকা বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে।

এটিকে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব বলে মনে করছেন রপ্তানিকারক ও অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে। পরিবহন খরচ বেড়েছে, উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এতে মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে, বেড়েছে জীবন নির্বাহের ব্যয়। এর ফলে মানুষের জীবনের নিত্য চাহিদায় কাটছাঁট করতে হয়েছে। এতে প্রভাব পড়েছে বস্ত্রের মতো মৌলিক চাহিদায়।  

তথ্য বলছে, জানুয়ারি-আগস্টে ইউরোপে পাঁচ হাজার ৯৩২ কোটি ১৪ লাখ ৭০ হাজার ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। আর আগের বছর একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ছয় হাজার ১৫৫ কোটি ৭৭ লাখ ৭০ হাজার ডলারের। জানুয়ারি-আগস্টে চীনের রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ, ভিয়েতনামের ৪ দশমিক ১০ শতাংশ এবং বাংলাদেশের ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এর বাইরে তুরস্কের কমেছে ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ আর কম্বোডিয়ার কমেছে ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
 
তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে বছরের প্রথম আট মাসে পাঁচ হাজার ১৩০ কোটি ২১ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। আগের বছরে একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল পাঁচ হাজার ৩৪৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারের। জানুয়ারি-আগস্টে চীনের রপ্তানি কমেছে ২ দশমিক ৭০ শতাংশ, ভিয়েতনামের ১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ এবং বাংলাদেশের ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ।  ইন্দোনেশিয়ার কমেছে ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ, আর ভারতের কমেছে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ।

একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে উল্লেখযোগ্য। তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি কমে যাওয়া দেশ। জানুয়ারি-আগস্ট আট মাসে বাংলাদেশ সেদেশে ৪৭০ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। আগের বছরের একই সময়ে রপ্তানি করেছিল ৫১৮ কোটি ৫১ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক। অর্থাৎ কমে যাওয়ার হার ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ।  

রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বছরের শুরু থেকে আগস্ট পর্যন্ত তৈরি পোশাক রপ্তানি কমলেও সেপ্টেম্বর থেকে রপ্তানিতে আবারও ইতিবাচক ধারা ফিরেছে। আশা করা যাচ্ছে, পরবর্তী প্রতিবেদন যখন আসবে, তখন দেখা যাবে- তৈরি পোশাকের চাহিদা বেড়েছে।

এ বিষয়ে তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বাংলানিউজকে বলেন. যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর অর্থনীতির অবস্থা খারাপ ছিল। ধীরে ধীরে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, এখন বাড়বে। এই যে মোট রপ্তানি কম দেখতে পাচ্ছি, তা বছরের শুরুর দিকের। বছরের মাঝামাঝিতে এ রপ্তানি কমে যাওয়ার হার কিছুটা নেমে এসেছে।

তিনি বলেন, রপ্তানি শুধু আমাদের দেশের কমেছে, এমন নয়। প্রায় সব দেশের রপ্তানিই কমেছে। আমরা আশা করছি, সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে এসব দেশে রপ্তানি বাড়াতে পারব। আমরা সেভাবেই কৌশল নির্ধারণ করেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২৪
জেডএ/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।