ঢাকা, সোমবার, ১৭ চৈত্র ১৪৩১, ৩১ মার্চ ২০২৫, ০০ শাওয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের জানমালের অধিকতর নিরাপত্তা চায় বাজুস

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২৫
জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের জানমালের অধিকতর নিরাপত্তা চায় বাজুস

ঢাকা: সাম্প্রতিক সময়ে দেশের জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই এবং ব্যবসায়ীদের ওপর সরাসরি আক্রমণের ঘটনা বাড়ছে। তাই জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের জান ও মালের নিরাপত্তা প্রদানে সরকারের কাছে অধিকতর সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।

শুক্রবার (২৮ মার্চ) জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের জান-মালের নিরাপত্তার দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সহযোগিতা চান বাজুসের সহ-সভাপতি মো. রিপনুল হাসান।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সারা দেশের প্রায় ৪০ হাজার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। সংগঠনের প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে আমাদের স্থায়ী কার্যালয়ে আপনাদের স্বাগত জানাই।

এরপর তিনি বলেন, জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের হত্যা, হত্যা চেষ্টা, অপহরণ চেষ্টা আমাদের জান-মালের নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমনকি বাসা-বাড়িতেও জুয়েলারি ব্যবসায়ী ও তার পরিবার নিরাপদ বোধ করছে না। এসব অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময় সন্ত্রাসীদের হাতে জুয়েলারি ব্যবসায়ী হত্যা চেষ্টার ঘটনাও বাড়ছে। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে বাজুস। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের জান-মালের নিরাপত্তা প্রদানে সরকারের আরো অধিকতর সহযোগিতা চায় বাজুস।

সম্প্রতি জুয়েলারি শিল্প ঘিরে সংঘটিত অপরাধ দমনে অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকে কৃতজ্ঞতা জানান বাজুস সহ-সভাপতি।

তিনি বলেন, সর্বশেষ গত ২৬ মার্চ ভোর ৫টায় বাজুসের সহ-সভাপতি ও দেশের স্বনামধন্য জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান ‘অলংকার নিকেতন’র কর্ণধার এম. এ. হান্নান আজাদের বাসায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি সংঘবদ্ধ ডাকাতদল হামলা চালায়। এ সময় তার বাসা ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এমনকি এম এ হান্নান আজাদকে অপহরণের চেষ্টাও করে। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাজুসের কার্যনির্বাহী সদস্য মো. ওয়াহিদুজ্জামান সুজনের ওপর ও তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার চেষ্টা হয়, যা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়।

রিপনুল হাসান বলেন, জানুয়ারি ২০২৪ থেকে ২৬ মার্চ ২০২৫ দেশের প্রায় ২৩টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ১১টি, আশুলিয়ায় ১টি, মুন্সিগঞ্জে ১টি, খুলনায় ৪টি, কুমিল্লায় ১টি, পটুয়াখালীতে ২টি, ময়মনসিংহে ১টি, সিলেটে ১টি ও হবিগঞ্জে ১টি প্রতিষ্ঠানে চুরি ও ডাকাতি সংঘটিত হয়। আশুলিয়ায় ডাকাতদের গুলিতে একজন জুয়েলারি ব্যবসায়ী নিহত হন এবং বনশ্রীতে স্বর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনায় একজন জুয়েলারি ব্যবসায়ী গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা। বিগত এক বছরে এই চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় দেশের ২৩টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪৪ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

তিনি বলেন, এ সকল ঘটনায় জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করছেন। এজন্য জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারের আলাদা দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সশস্ত্র প্রহরার পাশাপাশি রাজধানীসহ দেশের সকল জেলার জুয়েলারি মার্কেটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার এবং জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই হওয়া অলংকার উদ্ধারসহ অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় ১৫ এপ্রিলের পর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে বাজুস।

অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা রোধে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের প্রতি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদার করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও বাইরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, সিকিউরিটি গার্ড মোতায়েন করা,
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিজ নিজ জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ নিশ্চিত করা, মার্কেটে অবস্থিত জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান সমূহের মালিকরা মার্কেট কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে নিজ উদ্যোগে পালাক্রমে পাহারা নিশ্চিত করা, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সোনা পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা গ্রহণ করা, অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনার সম্মুখীন হলে পুলিশ প্রশাসন ও বাজুসকে অবহিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গুলজার আহমেদ বলেন, আমাদের বাজুসে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরের নেতৃত্বে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ আছি। আমরা ইতোমধ্যে সবাইকে মার্কেটে লাইটিং, নিরাপত্তা এবং নিজস্ব নিরাপত্তা জোরদার করতে বলেছি।

বাজুসের সহ-সভাপতি এম এ হান্নান আজাদ বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে আমার পুরো পরিবারসহ উদ্বিগ্ন। আমরা সরকারের কাছে নিরাপত্তা দাবি করছি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাজুসের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গুলজার আহমেদ, সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান, সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীন খোকন, সহ-সভাপতি সমিত ঘোষ অপুসহ কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যান্য নেতারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২৫
এসএমএকে/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।